রাজধানীর ফার্মগেট ও কারওয়ানবাজারের ট্রাফিক বক্সের মধ্যে প্রতিদিন দুই দফায় ট্রাফিক পুলিশের ১০৬ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। একই সড়কে দায়িত্ব পালন করেন তেজগাঁও থানা পুলিশের ১৪ জন সদস্য।
‘কাগজে-কলমে’ এত পুলিশ সদস্য থাকা সত্বেও ফার্মগেটে অবস্থিত ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ের সামনে রাস্তা অবরুদ্ধ (ব্লক) করে গাড়ি থামিয়ে মানুষকে জিম্মি করে ছিনতাই করছিল দুজন। ঘটনা সোমবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে।
ঘটনার সময় বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিব ফারহান ফার্মগেট থেকে সোনারগাঁও মোড় হয়ে নিজ বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। ছিনতাইকারীদের রাস্তা অবরুদ্ধ করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনিও আটকা পড়েন। রাজিব ছিনতাইকালের পুরো ঘটনা জানান। এ নিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাতে নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দেন তিনি। ওই স্ট্যাটাস ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজিব ফারহান বলেন, ‘রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে আমি ফার্মগেট থেকে কারওয়ানবাজারের সোনারগাঁও মোড়ের দিকে যাচ্ছিলাম। আমি ফার্মগেটের বাবুল টাউওয়ার ক্রস করেছি মাত্র। হঠাৎ দেখলাম রাস্তায় সব গাড়ি থেমে আছে। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম নেই। বেশ ফাঁকা। গাড়িতে বসে দেখছিলাম, রাস্তার ফুটপাত দিয়ে পথচারীরা দৌঁড়ে পালাচ্ছিল আর পেছনে তাকাচ্ছিল।’
রাজিব ফারহান বলেন, ‘এই দৃশ্য দেখে গাড়ি থেকে নামলাম। আমার গানম্যানও নামলেন। দেখলাম, ডেইলি স্টারের সামনে ওভার ব্রিজের নিচের রাস্তায় দুটি হলুদ রঙের মিনি ট্রাক আড় করিয়ে রেখে চালক ও হেলপারদের জিম্মি করেছে দুই ছিনতাইকারী। জিম্মি করে তাঁদের গলায় ছুরি ধরেছে একজন। আরেকজন মানুষজনের কাছ থেকে মুঠোফোন আর টাকা কেড়ে নিচ্ছে। আশপাশে দাঁড়িয়ে অন্তত ৫০ জন মানুষ এই দৃশ্য দেখছিল। সিনেমার শুটিংয়ের মতো মনে হলো ব্যাপারটা। ওই সব সাধারণ মানুষকে ছুরি দিয়ে ভয়ও দেখানো হচ্ছিল। পরে আমি ও আমার গানম্যান অস্ত্রসহ সামনের দিকে আগালাম। আমার চালকের কাছেও ছিল একটি লাঠি।’
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমাদের উপস্থিতি বুঝতেই একজন ছিনতাইকারী তেজতুরি বাজার এলাকার দিকে দৌঁড়ে চলে যায়। রাস্তার মধ্যে থাকা ছিনতাইকারী তখনো বুঝতে পারেনি আমরা পুলিশ। সে সময় ওই ছিনতাইকারী আমার দিকেও ছুরি তাক করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। এভাবে কিছুক্ষণ আমাদের সঙ্গে ইঁদুর-দৌড় চলল। এরপর আমি আমার কাছে থাকা অস্ত্র তাক করলাম ছিনতাইকারীর দিকে। এই দৃশ্য দেখে ওই ছিনতাইকারী রাস্তার ওপরেই শুয়ে পড়ে। এরপর সামনে গিয়ে তাকে ধরি আমরা।’
রাজিব ফারহান বলেন, ‘ছিনতাইকারীকে যখন ধরি ততক্ষণে পেছনের রাস্তায় রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সসহ অসংখ্য গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছিল। কারণ, ১০ থেকে ১৫ মিনিট পুরো রাস্তা ব্লক করে রেখে ছিনতাই করছিল তারা। তখন দ্রুতই রাস্তা ক্লিয়ার করার জন্য ট্রাক দুটিকে সোজা করতে বললাম। তারপর রাস্তা দিয়ে মানুষজন চলাচল শুরু করে। সে সময় ছিনতাইকারীর কাছ থেকে একটি চাকু ও চারটি মোবাইল উদ্ধার করি। পরে তিনজন ভুক্তভোগী তাদের ফোন দাবি করার পর প্রমাণ পেয়ে তিনটিই তাদের দিয়ে দেই। সে সময় আমার ভীষণ ব্যস্ততা থাকায় স্থানীয় লোকজনের কাছে ছিনতাইকারীকে রেখে চলে গিয়েছিলাম। তাদের পুলিশে খবর দিতে বলেছিলাম। পরে তারা পুলিশকে খবর দিয়েছিল।’
তেজগাঁও থানা পুলিশের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। এবং ছিনতাইকারীকে আধমরা অবস্থায় পাবলিকই ছেড়ে দেয়।’
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘রাজিব স্যারের ফেসবুকের স্ট্যাটাসটা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এই বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি। এমনকি আমরা আসামিকেও বুঝে পাইনি। ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত আমাদের তিনটি মোবাইল টিম কাজ করে সব সময়। এ ছাড়া দুটি মোটরসাইকেল টিমও কাজ করে। মোট ১৪ জন পুলিশ সব সময় দায়িত্ব পালন করে থাকে।’
ট্রাফিক তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই ঘটনা সম্পর্কে আমি জানি না। ফার্মগেটে যিনি দায়িত্বরত ছিলেন তাঁর কাছেও শুনেছি। তিনি জানেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন। ওখানে সে সময় আমাদের কোনো ট্রাফিক পুলিশের সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।’
কারওয়ানবাজার ট্রাফিক পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট সারওয়ার হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, ‘কারওয়ানবাজার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশের মোট ১০৬ জন দায়িত্ব পালন করেন। দুই শিফটে ৫৩ জন করে ডিউটি করেন। এদের মধ্যে একজন এসি, পাঁচজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, ৩০ জন ট্রাফিক সার্জেন্টন, ১৫ জন এসআই ও ৫৫ জন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করেন। ট্রাফিক বক্স ছাড়াও রাস্তার অলি-গলির মুখে আমাদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এনটিভি অনলাইন