গর্জে উঠেছে তিস্তা, লাল সংকেত জারি

  • Update Time : ০৫:১৭:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুলাই ২০২০
  • / 191
মশিয়ার রহমান, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী আবারও গর্জে উঠে ব্রাঘ্যমূর্তি ধারণ করেছে। টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা প্রচন্ড ঢলে নদীর পানি প্রবাহ সর্বকালের রেকড ভঙ্গ করেছে। আজ সোমবার ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
.
গতকাল রবিবার রাত ১২টায় সেখানে পানি প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার(৫৩.১৫) ওপরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ(ফ্লাডবাইপাস) এলাকাটি নজরদারী করা হচ্ছে। তিস্তার ব্যারাজ এলাকা ও এর আশপাশ এলাকায় লাল সংকেত জারী করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিস্তার এমন ব্রাঘ্যমূর্তিতে রাতে ব্যারাজ এলাকায় ছুটে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ।
.
দীর্ঘ সময় অবস্থান করে তিনি ঘুরে দেখেন ব্যারাজ ও ফ্লাড বাইপাস এলাকা। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম, নির্বাাহী প্রকৌশলী একেএম সামসুজোহা, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হক। ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার অতিক্রম করে গত শুক্রবার(১০ জুলাই)। তখন থেকে বিপদসীমার ওপরে চলছে পানি প্রবাহ। টানা চার দিনের ঢলে জেলার ডিমলা উপজেলার নদী অববাহিকায় অবস্থিত পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছচাপনী, পশ্চিমছাতনাই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের পাঁচ /ছয় হাজারের অধিক পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।
ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর, চরখড়িবাড়ি, পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিমখড়িবাড়ি, তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। অপরদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার দুই হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুই উপজেলার অসংখ্য ফসলী জমির আমন বীজতলা, রোপিত আমনের রোপা তলিয়ে গেছে। বসতঘরগুলোতে প্রকারভেদে হাটু ও কোমড় সমান পানির স্রোতে বয়ে যাচ্ছে।
.
এ ছাড়া মাছের খামারগুলোর পুকুরগুলো উপচে পড়ায় প্রচুর মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া গ্রামের রাস্তা দিয়ে বন্যার পানি বৈইছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র মতে, উজানের ঢলে গতকাল রবিবার রাত ১২টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার(১১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ৩৩ সেন্টিমিটার ও গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
.
সুত্র বলছে, আজ সোমবার সকাল ৮টায় ভারতের তিস্তা নদীর দো-মহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে। তবে গতকাল রবিবার রাত ১২টা থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। চলতি বর্ষায় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে গত ২৬ জুন। তখন থেকে ৪ দফায় তিস্তা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
.
গতকাল পানি প্রবাহ বেশি থাকলেও আজ সোমবার বিকালে ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মর্মে এক ভিডিও বার্তায় ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান।
.
তিনি বলেন, উপজেলার সকল কর্মকর্তাগনকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকটি টিম গঠন করে প্রতিটি ইউনিয়নে মনিটরিং করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা তাদের স্ব-স্ব এলাকায় নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি নৌকা তৎপর রয়েছে ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


গর্জে উঠেছে তিস্তা, লাল সংকেত জারি

Update Time : ০৫:১৭:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুলাই ২০২০
মশিয়ার রহমান, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী আবারও গর্জে উঠে ব্রাঘ্যমূর্তি ধারণ করেছে। টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা প্রচন্ড ঢলে নদীর পানি প্রবাহ সর্বকালের রেকড ভঙ্গ করেছে। আজ সোমবার ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
.
গতকাল রবিবার রাত ১২টায় সেখানে পানি প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার(৫৩.১৫) ওপরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ(ফ্লাডবাইপাস) এলাকাটি নজরদারী করা হচ্ছে। তিস্তার ব্যারাজ এলাকা ও এর আশপাশ এলাকায় লাল সংকেত জারী করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিস্তার এমন ব্রাঘ্যমূর্তিতে রাতে ব্যারাজ এলাকায় ছুটে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ।
.
দীর্ঘ সময় অবস্থান করে তিনি ঘুরে দেখেন ব্যারাজ ও ফ্লাড বাইপাস এলাকা। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম, নির্বাাহী প্রকৌশলী একেএম সামসুজোহা, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হক। ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার অতিক্রম করে গত শুক্রবার(১০ জুলাই)। তখন থেকে বিপদসীমার ওপরে চলছে পানি প্রবাহ। টানা চার দিনের ঢলে জেলার ডিমলা উপজেলার নদী অববাহিকায় অবস্থিত পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছচাপনী, পশ্চিমছাতনাই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের পাঁচ /ছয় হাজারের অধিক পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।
ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর, চরখড়িবাড়ি, পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিমখড়িবাড়ি, তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। অপরদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার দুই হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুই উপজেলার অসংখ্য ফসলী জমির আমন বীজতলা, রোপিত আমনের রোপা তলিয়ে গেছে। বসতঘরগুলোতে প্রকারভেদে হাটু ও কোমড় সমান পানির স্রোতে বয়ে যাচ্ছে।
.
এ ছাড়া মাছের খামারগুলোর পুকুরগুলো উপচে পড়ায় প্রচুর মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া গ্রামের রাস্তা দিয়ে বন্যার পানি বৈইছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র মতে, উজানের ঢলে গতকাল রবিবার রাত ১২টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার(১১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ৩৩ সেন্টিমিটার ও গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
.
সুত্র বলছে, আজ সোমবার সকাল ৮টায় ভারতের তিস্তা নদীর দো-মহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে। তবে গতকাল রবিবার রাত ১২টা থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। চলতি বর্ষায় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে গত ২৬ জুন। তখন থেকে ৪ দফায় তিস্তা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
.
গতকাল পানি প্রবাহ বেশি থাকলেও আজ সোমবার বিকালে ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মর্মে এক ভিডিও বার্তায় ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান।
.
তিনি বলেন, উপজেলার সকল কর্মকর্তাগনকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকটি টিম গঠন করে প্রতিটি ইউনিয়নে মনিটরিং করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা তাদের স্ব-স্ব এলাকায় নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি নৌকা তৎপর রয়েছে ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।