আর নয় শিশু শ্রম, আর নয় শোষণ
- Update Time : ১২:৩০:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০২০
- / 168
মোঃআরিফুল হাসান:
শিশু শ্রম এক ধরনের শোষণ। যেখানে একটি শিশু তার শৈশবকে উপভোগ করবে,স্কুলে যাবে, সেখানে দারিদ্র্যের থাবানলে পড়ে কর্মে ছুঠতে হচ্ছে তাকে।তাছাড়া মালিকরা কম অর্থে এই শিশুদের দিয়ে কাজ করিয়ে মুনাফা লুফে নিচ্ছে।
.
বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সের শিশুদের দিয়ে কাজ করালে তা শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত।কম বয়সে বেশি কর্মঘন্টার ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবেও অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে এসব শিশু।অনেকে পুষ্টিহীনতাইও ভোগছে।দেশে প্রায় ৪.৮ মিলিয়ন শিশু বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের শ্রমের সাথে সম্পৃক্ত,যাদের অধিকাংশের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছরের নিচে। শহরে ও গ্রামে এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।দেশের কয়েক লাখ শিশু বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক কলকারখানা, টেনারী শিল্প,রিসাইকল প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে,যেগুলো শিশু স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
.
শিশুশ্রম জরিপে দেখা যায়, ১৩ লাখ শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত । অনেকেই আবার কর্মক্ষেত্রে হচ্ছে নির্যাতিত।মূলত একটি শিশু তখনই কর্মে পদার্পণ করে যখন তার পরিবার খুব দারিদ্র্য হয় অথবা পরিবারে আর কোনো কর্মক্ষম ব্যাক্তি না থাকে।তখন অপারগ হয়ে একটি শিশুর কাজের পিছেই ছুটতে হয়।কম বয়সে টাকার প্রয়োজনীয়তা একটি শিশুকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়, যার ফলে অনেকে মাদক সেবন করছে,অনেকে অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
.
বাংলাদেশে শিশু শ্রমের অনেকগুলো কারন রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারন হলো দারিদ্র্যতা,সন্তান পরিত্যক্ততা,পরিবারের অভিভাবক কর্মহীন হয়ে পড়া,একমাত্র কর্মঠ অভিভাবকের মৃত্যু বা অক্ষম বা অসুস্থতা, কম টাকায় কাজ করানো যায় এই ভাবনায় কর্মে প্রলোভন দেখানো মালিক ইত্যাদি। যার ফলে শিশু শ্রম দিন দিন বেড়েই চলেছে।
.
আইএলও জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। এই সংস্থাটি শিশু শ্রম বন্ধে তৎপর এবং তা দূরীকরণে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।তাছাড়া ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিল্ড্রেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করছে।বাংলাদেশ সরকারও শিশু শ্রম বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।এসডিজিতে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে লক্ষ্যমাত্রা আছে।ইতিমধ্যে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণ,গরীব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে বই বিতরণ,স্কুলে বেতন ও পরীক্ষার ফি হ্রাস, পাঠদান কালে আহার ইত্যাদি গৃহীত পদক্ষেপের জন্য শিশুর স্কুল থেকে ঝরে পড়া অনেকাংশে কমে গেছে এবং শিশুশ্রম ও হ্রাস ঘটছে।তাছড়া বাংলাদেশে শিশুশ্রমের মূল কারন যে দারিদ্র্যতা, এই দারিদ্র্যবিমোচনেও সরকার নানান পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
.
আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। যদি আজকের শিশু বাঁচে,তবেই বাঁচবে আগামীর প্রজন্ম। তাই প্রতিটি শিশুকে তার শারীরিক, মানসিক সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।তাদের বিদ্যালয়মুখি করতে হবে।যেসব পরিবারে আয়ের মানুষ না থাকায় শিশুকে আয় করতে কাজে লাগানো হচ্ছে সেসব পরিবারে মাসিক কিছু টাকা অর্থ প্রদান করে শিশুকে কর্ম থেকে বিদ্যালয়মুখী করা যেতে পারে।তাছাড়া পারিবারিক, সামাজিক সচেতনতাই পারে একটি শিশুকে সুন্দর শৈশব উপহার দিতে।তাই প্রত্যেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আর নয় শিশু শ্রম, আর নয় শোষণ,শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ।
.
লেখক: শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Tag :