৪ জন শিশু উদ্ধার, পরিষেবা প্রদান ও অভিভাবকগণদের নিকট হস্তান্তর

  • Update Time : ০৩:৩৩:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০
  • / 192

 

মোঃ মেহেদী হাসান,পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:

গতকাল ২৫/৬/২০২০ খ্রিঃ রাত অনুমান ০৮.১৫ ঘটিকা, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছিল এসআই সাইদূরের নেতৃত্বে পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানা পুলিশের একটি টহল দল। হঠাৎ তাদের চোখ পড়ে ০৪ জন কিশোর-কিশোরীর উপর। তারা মোবাইল ও ট্যাব বিক্রি করার চেষ্টা করছিল।

এসআই সাইদুরের মনে সন্দেহ জাগে। সে তার সঙ্গীদের নিয়ে এগিয়ে যায়। পুলিশ দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে পুলিশের কথায় ও ব্যবহারে তারা আস্থা ফিরে পায়। তারা না খেয়ে আছে জানতে পেরে প্রথমে তাদের কিছু শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় শিশু সুমাইয়া (১৩) জানায়, সে ও তার প্রতিবেশী অপর শিশু তাসিব (১৩) ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করে। গত ২২/০৬/২০২০ তারিখ সকাল ১০.০০ ঘটিকায় সুমাইয়া তার নানির লকার থেকে টাকা নিয়ে তাসিবের সাথে বাসা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রাতে সদরঘাট আসে। সেখান থেকে রাত ১১.০০ ঘটিকায় শরীয়তপুরগামী লঞ্চে ওঠে।

লঞ্চে তাদের সাথে ইয়াসিন (১৬) ও ইব্রাহিম (১৬) এর পরিচয় হয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে। ২৩/০৬/২০২০ ভোরে তারা নড়িয়া লঞ্চঘাটে নামে এবং সারাদিন নড়িয়া এলাকায় ঘুরে ফিরে কাঁটায়। বিকালে ০৪ জন আবার নড়িয়া থেকে ঢাকাগামী লঞ্চে ওঠে এবং রাত ০৮.০০ ঘটিকায় সদরঘাট পৌছায়। তখন তারা বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং বরিশালের লঞ্চে ওঠে ২৪/০৬/২০২০ তারিখ সকালে বরিশাল পৌছে সেখান থেকে বাসে করে কুয়াকাটা আসে। রাতে তারা একটি হোটেলে থাকে। সকালে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে বের হয়ে টাকা শেষ হয়ে গেলে সারা দিন না খেয়ে কাটায়।

উপায়ন্তর না পেয়ে তারা সঙ্গে থাকা মোবাইল ও ট্যাব বিক্রি করে ক্ষুধা নিবারণ ও যাতায়াতের টাকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ পর্যায়ে তারা পুলিশের সংস্পর্শে আসে। এরপর পুলিশের টহল দলটি তাদের মহিপুর থানায় নিয়ে প্রাথমিক পরিষেবা দিয়ে খাবার সহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা নেয় এবং শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়। অতঃপর ফোন করে অভিভাবকগণদের সাথে কথা বলানোর ব্যবস্থা করা হয় অভিভাবকগণদের মহিপুর থানায় আসতে বলা হয়।

ইতোমধ্যে মহিপুর থানা পুলিশ ডিএমপি’র কামরাঙ্গীরচর থানা এবং ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে প্রকৃত অভিভাবক সম্পর্কে নিশ্চিত হন। অদ্য ২৬/৬/২০২০ তারিখ বিকাল ০৪.০০ ঘটিকায়- ১। সুমাইয়া (১৩), পিতা: সাগর হোসেন ২। তাসিব হোসেন (১৩), পিতা: লিটন, উভয় সাং পান্না বেটারি কারখানা সংলগ্ন আহমেদ ভুলুর ২য় তলা, থানা কামরাঙ্গিচর, ডিএমপি, ঢাকা ৩। ইয়াসিন(১৬), পিতা: শহিদুল্লাহ ৪। মোঃ ইব্রাহিম(১৬), পিতা: মোঃ মতিউর রহমান মোল্লা উভয় সাং জোড়াব্রীজ কালিগঞ্জ বাজার, থানা: কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-দেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দের সম্মুখে নিজ নিজ অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

এ সময় থানা প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের ফিরে পেয়ে আনন্দে অশ্রুসজল চোখে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


৪ জন শিশু উদ্ধার, পরিষেবা প্রদান ও অভিভাবকগণদের নিকট হস্তান্তর

Update Time : ০৩:৩৩:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০

 

মোঃ মেহেদী হাসান,পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:

গতকাল ২৫/৬/২০২০ খ্রিঃ রাত অনুমান ০৮.১৫ ঘটিকা, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছিল এসআই সাইদূরের নেতৃত্বে পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানা পুলিশের একটি টহল দল। হঠাৎ তাদের চোখ পড়ে ০৪ জন কিশোর-কিশোরীর উপর। তারা মোবাইল ও ট্যাব বিক্রি করার চেষ্টা করছিল।

এসআই সাইদুরের মনে সন্দেহ জাগে। সে তার সঙ্গীদের নিয়ে এগিয়ে যায়। পুলিশ দেখে প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে পুলিশের কথায় ও ব্যবহারে তারা আস্থা ফিরে পায়। তারা না খেয়ে আছে জানতে পেরে প্রথমে তাদের কিছু শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় শিশু সুমাইয়া (১৩) জানায়, সে ও তার প্রতিবেশী অপর শিশু তাসিব (১৩) ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করে। গত ২২/০৬/২০২০ তারিখ সকাল ১০.০০ ঘটিকায় সুমাইয়া তার নানির লকার থেকে টাকা নিয়ে তাসিবের সাথে বাসা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রাতে সদরঘাট আসে। সেখান থেকে রাত ১১.০০ ঘটিকায় শরীয়তপুরগামী লঞ্চে ওঠে।

লঞ্চে তাদের সাথে ইয়াসিন (১৬) ও ইব্রাহিম (১৬) এর পরিচয় হয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে। ২৩/০৬/২০২০ ভোরে তারা নড়িয়া লঞ্চঘাটে নামে এবং সারাদিন নড়িয়া এলাকায় ঘুরে ফিরে কাঁটায়। বিকালে ০৪ জন আবার নড়িয়া থেকে ঢাকাগামী লঞ্চে ওঠে এবং রাত ০৮.০০ ঘটিকায় সদরঘাট পৌছায়। তখন তারা বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং বরিশালের লঞ্চে ওঠে ২৪/০৬/২০২০ তারিখ সকালে বরিশাল পৌছে সেখান থেকে বাসে করে কুয়াকাটা আসে। রাতে তারা একটি হোটেলে থাকে। সকালে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে বের হয়ে টাকা শেষ হয়ে গেলে সারা দিন না খেয়ে কাটায়।

উপায়ন্তর না পেয়ে তারা সঙ্গে থাকা মোবাইল ও ট্যাব বিক্রি করে ক্ষুধা নিবারণ ও যাতায়াতের টাকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ পর্যায়ে তারা পুলিশের সংস্পর্শে আসে। এরপর পুলিশের টহল দলটি তাদের মহিপুর থানায় নিয়ে প্রাথমিক পরিষেবা দিয়ে খাবার সহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা নেয় এবং শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়। অতঃপর ফোন করে অভিভাবকগণদের সাথে কথা বলানোর ব্যবস্থা করা হয় অভিভাবকগণদের মহিপুর থানায় আসতে বলা হয়।

ইতোমধ্যে মহিপুর থানা পুলিশ ডিএমপি’র কামরাঙ্গীরচর থানা এবং ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে প্রকৃত অভিভাবক সম্পর্কে নিশ্চিত হন। অদ্য ২৬/৬/২০২০ তারিখ বিকাল ০৪.০০ ঘটিকায়- ১। সুমাইয়া (১৩), পিতা: সাগর হোসেন ২। তাসিব হোসেন (১৩), পিতা: লিটন, উভয় সাং পান্না বেটারি কারখানা সংলগ্ন আহমেদ ভুলুর ২য় তলা, থানা কামরাঙ্গিচর, ডিএমপি, ঢাকা ৩। ইয়াসিন(১৬), পিতা: শহিদুল্লাহ ৪। মোঃ ইব্রাহিম(১৬), পিতা: মোঃ মতিউর রহমান মোল্লা উভয় সাং জোড়াব্রীজ কালিগঞ্জ বাজার, থানা: কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-দেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দের সম্মুখে নিজ নিজ অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

এ সময় থানা প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের ফিরে পেয়ে আনন্দে অশ্রুসজল চোখে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।