বন্যার্তদের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ
- Update Time : ০১:১৩:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / 112
জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ৩ ট্রাক উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বন্যার্তদের মাঝে। আরও ১ টি ট্রাক পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২৪ আগষ্ট (শনিবার) ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী পাঠানো হয় ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া ও রাজাপুরের বন্যাকবলিত মানুষের উদ্দেশ্যে ।
২৯ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) আইন বিভাগের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য উপহার নিয়ে যায় আরও ২ টি ট্রাক। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় ৫৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার।
শুকনা খাবারের মধ্যে ছিল বিস্কুট/ড্রাই কেক, চিড়া/মুড়ি, পানি, স্যালাইন, স্যানিটারি প্যাড, ডায়পার ঔষধ সামগ্রী- নাপা প্লেইন/ নাপা এক্সট্রা/ এলার্জির ট্যাবলেট/গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট, গ্যাস ম্যাচ, মোমবাতি, গুড়া দুধ (স্পেশালি শিশু খাদ্য), গুড়/চিনি, সাবান/ হ্যান্ডওয়াশ,বাচ্চাদের ঠান্ডার ঔষধ, ফুড পয়জনিং এর ঔষধ (মেট্রোনিডাজল)
,পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট এবং খেজুর।
একই দিনে ৬৮২ প্যাকেট রান্নার উপকরণ পাঠানো হয় ফেনী জেলার বালুয়া চৌমুহনীর উদ্দেশ্যে। প্রত্যেক প্যাকেটের মধ্যে ছিল – চাল ৫ কেজি, ডাল ১ কেজি, পেঁয়াজ ১ কেজি, সয়াবিন তেল ১ লিটার, আলু ১.৫ কেজি, চিড়া ১ কেজি, লবণ ৫০০ গ্রাম, মোমবাতি (বড়) ২পিস, ম্যাচ ২ পিস, ও প্রয়োজনীয় ঔষধ (নাপা ১ পাতা, স্যালাইন ৪ পিস, ইমোটিল ১ পাতা)।
শিক্ষার্থীদের ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ আইন সমিতির আহ্বায়ক কাজী মাহফুজুল হক সুপন বিডি সমাচার কে বলেন, আমাদের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা যে ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে তা অত্যন্ত সুশৃঙখল। তারা কোথায় ত্রাণ পাঠাবে,কী কী পাঠাবে এবং কখন পাঠাবে তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে ঠিক করে। আমি টিএসসির ত্রাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করতে ৩ দিন গিয়েছি। সেখানে অনেক বিশৃঙখলা লক্ষ্য করেছি যা আইন বিভাগের কার্যক্রমে নেই।
কাজী মাহফুজুল হক সুপন আরও বলেন, এছাড়া ট্রাক লোড করার সময় সারা দিন-রাত ধরে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে যে কাজ করে তা আমাদেরকে একতার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমি শিক্ষক হিসেবে আমার শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি।
এসময় বাংলাদেশ আইন সমিতির উদ্যোগে বন্যা পরবর্তী সময়ে ঐসব এলাকায় সহায়তা কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান আইন বিভাগের এ শিক্ষক। তিনি বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঐসব এলাকার মানুষকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়, তখন সহায়তাও অনেক কমে আসে। তাই আমরা ঐ সময়টাতে বন্যার্তদেরকে বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ প্রদানের কথা ভেবেছি।
জানতে চাইলে আইন বিভাগের ২৩ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী এডভোকেট মোঃ মাহাবুবুর রহমান খান বিডি সমাচার কে বলেন, বর্তমান সময়ে দেশের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আজ (১ সেপ্টেম্বর) চতুর্থবারের মতো ট্রাকে করে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে তারা।
এডভোকেট মোঃ মাহাবুবুর রহমান খান বলেন, আমি দেখেছি, দেশের বিভিন্ন সংকটের মুহুর্তে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছে। এবারেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। শিক্ষার্থীরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোয় আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা যেমন প্রয়োজনের মুহুর্তে দেশের সেবায় নিয়োজিত হয়, তেমনি বর্তমান শিক্ষার্থীরাও দেশ ও মানুষের কল্যাণে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।
আইন বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী এনামুল হক বিডি সমাচার কে বলেন, আইন বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা কর্মসূচি চলেছে বন্যার শুরু থেকেই। আমরা আমাদের শিক্ষক, বর্তমান শিক্ষার্থী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের থেকে এই মানবিক আবেদনে উল্লেখযোগ্য সাড়া পেয়েছি।
আরেক শিক্ষার্থী সাফওয়ান হাসান তামিম বলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের নাগরিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ৪ টি ট্রাকে করে প্রায় ১৮০০ পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও যে কোনো জাতীয় সংকটের মুহুর্তে দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অঙ্গীকারবদ্ধ।