আগাম সতর্ক না করে বাঁধ খুলে দেয়া অমানবিক: নাহিদ ইসলাম

  • Update Time : ০৬:১৭:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • / 20

আগাম সতর্কতা ছাড়া বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত অমানবিক আচরণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি উজানের পানি বাংলাদেশে ধেয়ে এসে এ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা এবং প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ না দিয়েই বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং অসহযোগিতা করছে।

তিনি বলেন, আমরা আহ্বান করব, আমরা আশা করব, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের জনগণবিরোধী এ ধরনের নীতি থেকে সরে আসবে।

দুর্যোগ থেকে দুই দেশকে তাদের জনগণকে রক্ষায় একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা কীভাবে একত্রে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের জনগণকে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারি, সে বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের পথ বের করতে হবে।

দুই দেশের সুসম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও জনগণ ভারতের নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন দিন ধরে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আন্দোলন করছে, কথা বলে আসছে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে কোনো টানাপোড়েন যেন না রাখা হয়। ন্যায্যতার ভিত্তিতে যেন বাংলাদেশ-ভারত রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক প্রতিস্থাপন করা হয়।

দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের সব সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি এবং জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, ঠিক গণঅভ্যুত্থানে জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ব্যবসায়ীদেরও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন এ উপদেষ্টা।

বন্যাকবলিত মানুষকে কীভাবে আরও দক্ষতার সঙ্গে উদ্ধার করা যায়, সরকার সশস্ত্র বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে সেই চেষ্টা করছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম।

ব্রিফিংয়ে আরও কথা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্যায় এখন পর্যন্ত দুজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুজনের মধ্যের একজন ফেনীর ও একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। এখন পর্যন্ত এই ৮ জেলায় ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে ভারত সরকার বলছে, বাংলাদেশের বন্যা গোমতির নদীর ওপর নির্মিত ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে হয়নি।

বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে এমন খবর প্রচারে আমরা উদ্বিগ্ন। এটি সঠিক নয়। আমরা উল্লেখ করতে চাই, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাঁধের নিচের দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আগাম সতর্ক না করে বাঁধ খুলে দেয়া অমানবিক: নাহিদ ইসলাম

Update Time : ০৬:১৭:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

আগাম সতর্কতা ছাড়া বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত অমানবিক আচরণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি উজানের পানি বাংলাদেশে ধেয়ে এসে এ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা এবং প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ না দিয়েই বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং অসহযোগিতা করছে।

তিনি বলেন, আমরা আহ্বান করব, আমরা আশা করব, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের জনগণবিরোধী এ ধরনের নীতি থেকে সরে আসবে।

দুর্যোগ থেকে দুই দেশকে তাদের জনগণকে রক্ষায় একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা কীভাবে একত্রে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের জনগণকে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারি, সে বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের পথ বের করতে হবে।

দুই দেশের সুসম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও জনগণ ভারতের নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন দিন ধরে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আন্দোলন করছে, কথা বলে আসছে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে কোনো টানাপোড়েন যেন না রাখা হয়। ন্যায্যতার ভিত্তিতে যেন বাংলাদেশ-ভারত রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক প্রতিস্থাপন করা হয়।

দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের সব সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি এবং জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, ঠিক গণঅভ্যুত্থানে জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ব্যবসায়ীদেরও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন এ উপদেষ্টা।

বন্যাকবলিত মানুষকে কীভাবে আরও দক্ষতার সঙ্গে উদ্ধার করা যায়, সরকার সশস্ত্র বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে সেই চেষ্টা করছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম।

ব্রিফিংয়ে আরও কথা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বন্যায় এখন পর্যন্ত দুজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুজনের মধ্যের একজন ফেনীর ও একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। এখন পর্যন্ত এই ৮ জেলায় ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে ভারত সরকার বলছে, বাংলাদেশের বন্যা গোমতির নদীর ওপর নির্মিত ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে হয়নি।

বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে এমন খবর প্রচারে আমরা উদ্বিগ্ন। এটি সঠিক নয়। আমরা উল্লেখ করতে চাই, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাঁধের নিচের দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে।’