কক্সবাজারে তিন সপ্তাহে বারবারই পাহাড় ধসে মৃত্যু ১৮
- Update Time : ০৮:০৬:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
- / 45
এরফান হোছাইন:
দেশের পর্যটন রাজধানীখ্যাত কক্সবাজারে বারবারই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে।
গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) একদিনেই চারটি পাহাড় ধসের ঘটনায় অন্তত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন গৃহবধূ, এক কিশোরী ও দুইটি শিশু রয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছেন একই পরিবারের আরও ৬ জন।
এনিয়ে গত তিন সপ্তাহে কক্সবাজার শহর ও উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার রাত থেকে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এই বৃষ্টি চলে টানা ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে। এই সময়ে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক, পর্যটন জোন ছাড়াও শহরের অলিগলি বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায়। অনেকের মতে, অপরিকল্পিত উন্নয়নের খেসারত দিতে হচ্ছে কক্সবাজারবাসিকে।
টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরের তিনটি পৃথক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকায় সাইফুল হাসান (৫) ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এবিসি ঘোনা এলাকায় মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা বেগম (৩০) পাহাড় চাপা পড়ে মারা যায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে সদর উপজেলাধীন ঝিলংজা এলাকায় পাহাড় ধসে লায়লা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূ মারা যান। তিনি দক্ষিণ মুহুরী পাড়ার বজল আহমদের স্ত্রী। এই ঘটনায় তাদের দুই বছরের শিশু মোহাম্মদ জুনায়েদ আহত হয়। তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজার শহরতলি কলাতলীর সৈকত পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। ওই দূর্ঘটনায় একই পরিবারের আরও ৬ সদস্য আহত হন। নিহত কিশোরীর নাম মিম। সে ওই এলাকার মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ও শহরের সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। এছাড়াও পরিবারের আহত অন্য সদস্যরা হলেন মোহাম্মদ সেলিমের স্ত্রী নুর জাহান, তাদের সন্তান লামিয়া, হাবিবা, হুজাইফা ও মাওয়া।
কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এম এ মনজুর জানান, কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার মোহাম্মদ সেলিম নামের বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের নিরাপত্তাকর্মীর টিনসেড বাড়িতে পাহাড় ধসে গেছে বলে জানা গেছে। একটি গাছসহ সেই বাড়িটি মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়, ফলে পরিবারের সাত সদস্যই ভিতরে আটকা পড়ে যান। দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে কঠিন তিন ঘণ্টার চেষ্টার পর ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা কিশোরী মিমকে বাঁচাতে পারেননি।
কক্সবাজারের মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এই পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান যে, ১৯ জুন এবং ৩ জুলাই তারিখে উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে পৃথক পাহাড় ধসে ১২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হয়েছেন।
টেকনাফে আরও দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত তিন সপ্তাহে মোট ১৮ জন মানুষের পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিকল্পনাবিহীন উন্নয়নই কক্সবাজারে পাহাড় ধসের ঘন ঘন ঘটনা ও তীব্রতার জন্য দায়ী। এটি একটি জটিল বিষয় যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে । পরিকল্পনাবিহীন উন্নয়নের ফলে বনাঞ্চল কেটে ফেলা যায়, যা মাটিকে দুর্বল করে দেয় এবং ভূমিধস ও পাহাড় ধসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত বৃষ্টির সময় ঢালু এলাকায় নির্মীত খারাপ নির্মাণের ভবনগুলি ধসে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কক্সবাজারে পাহাড় ধসের ঝুঁকি কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কঠোর ভবন নির্মাণ কোড প্রয়োগ, পুনঃবনায়ন কর্মসূচী, পরিবেশ ধ্বংসের মূলে জড়িত থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের স্থানান্তর।