পবিপ্রবিতে শিক্ষক লাঞ্ছিত, অভিযুক্ত কর্মকর্তার চাকুরিচ্যুতের দাবিতে আন্দোলন ও ক্লাস-পরিক্ষা বর্জন

  • Update Time : ০৯:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / 58

আশিকুর রহমান, পবিপ্রবি সংবাদদাতা:

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) এক কর্মকর্তা কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছণা ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি কতৃক মানববন্ধন ও ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি উক্ত কর্মকর্তাকে স্থায়ী চাকুরিচ্যুত করার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিনভর প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে রাখে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিকে কর্মরত (পিও টু প্রোভিসি) মো. সামসুল হক ওরফে রাসেল। তার বিরুদ্ধে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলামকে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, শনিবার রাত ৯টার দিকে পবিপ্রবির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কৃষিকুঞ্জের ডাইনিং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এরপর ভুক্তভোগী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বরাবর তাকে মারধর করা হয়েছে মর্মে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত রাসেল শনিবার রাত ৯ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- কর্মকর্তা মেসের ডাইনিং এ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং উপস্থিত অন্য শিক্ষকদের সামনেই আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলে রাসেল বলেন, তোকে যেখানে পাব সেখানেই মারব। তিনি আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন এবং বলেন, তোর পেছনে কে আছে দেখে নেব, তুই যা, দেখি তোর মাইর কে ঠেকায়।’

ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত সামসুল হক ওরফে রাসেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক শেখ তানজিলা দোলার সঙ্গে মো. নজরুল ইসলামের বিভাগীয় বিষয়ে মতানৈক্য হয়। দোলা আমার আত্মীয়। তাই আমি দোলাকে কোনো ঝামেলা না করতে নজরুলকে অনুরোধ করি। পরে এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।’ তবে অভিযুক্ত রাসেল মারামারির বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিনভর প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে সামসুল হক ওরফে রাসেলের স্থায়ী চাকুরিচ্যুতি দাবি করেন। এসময় কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্ত রাসেল এর আগেও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষককে হেনস্তা করেন। প্রশাসন সে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তখন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে তাই অবিলম্বে আমরা এ কর্মকর্তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই’

অন্যদিকে মানববন্ধন কর্মসূচীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মিয়া ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “পবিপ্রবিতে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় শিক্ষক সমিতি অঙ্গীকারবদ্ধ। অভিযুক্ত রাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকককে যেভাবে লাঞ্ছিত করেছেন এবং হত্যার হুমকি দিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে উক্ত কর্মকর্তাকে চূড়ান্তভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত না করা পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে।’

পরবর্তীতে বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার(অ.দা) অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু উক্ত ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। আগামী ৩ কার্যদিবসে উক্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়।

প্রসঙ্গত, এর আগেও অভিযুক্ত রাসেল সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মন্ডলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ,যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এছাড়াও মাসে ৪৫ দিনের বেতন নেওয়া, নিয়মিতভাবে অফিস না করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


পবিপ্রবিতে শিক্ষক লাঞ্ছিত, অভিযুক্ত কর্মকর্তার চাকুরিচ্যুতের দাবিতে আন্দোলন ও ক্লাস-পরিক্ষা বর্জন

Update Time : ০৯:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আশিকুর রহমান, পবিপ্রবি সংবাদদাতা:

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) এক কর্মকর্তা কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছণা ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি কতৃক মানববন্ধন ও ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি উক্ত কর্মকর্তাকে স্থায়ী চাকুরিচ্যুত করার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিনভর প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে রাখে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিকে কর্মরত (পিও টু প্রোভিসি) মো. সামসুল হক ওরফে রাসেল। তার বিরুদ্ধে খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলামকে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, শনিবার রাত ৯টার দিকে পবিপ্রবির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কৃষিকুঞ্জের ডাইনিং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এরপর ভুক্তভোগী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বরাবর তাকে মারধর করা হয়েছে মর্মে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত রাসেল শনিবার রাত ৯ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- কর্মকর্তা মেসের ডাইনিং এ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং উপস্থিত অন্য শিক্ষকদের সামনেই আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলে রাসেল বলেন, তোকে যেখানে পাব সেখানেই মারব। তিনি আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন এবং বলেন, তোর পেছনে কে আছে দেখে নেব, তুই যা, দেখি তোর মাইর কে ঠেকায়।’

ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত সামসুল হক ওরফে রাসেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক শেখ তানজিলা দোলার সঙ্গে মো. নজরুল ইসলামের বিভাগীয় বিষয়ে মতানৈক্য হয়। দোলা আমার আত্মীয়। তাই আমি দোলাকে কোনো ঝামেলা না করতে নজরুলকে অনুরোধ করি। পরে এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।’ তবে অভিযুক্ত রাসেল মারামারির বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিনভর প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে সামসুল হক ওরফে রাসেলের স্থায়ী চাকুরিচ্যুতি দাবি করেন। এসময় কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্ত রাসেল এর আগেও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষককে হেনস্তা করেন। প্রশাসন সে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তখন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে তাই অবিলম্বে আমরা এ কর্মকর্তার স্থায়ী বহিষ্কার চাই’

অন্যদিকে মানববন্ধন কর্মসূচীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মিয়া ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “পবিপ্রবিতে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় শিক্ষক সমিতি অঙ্গীকারবদ্ধ। অভিযুক্ত রাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকককে যেভাবে লাঞ্ছিত করেছেন এবং হত্যার হুমকি দিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে উক্ত কর্মকর্তাকে চূড়ান্তভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত না করা পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে।’

পরবর্তীতে বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার(অ.দা) অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু উক্ত ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। আগামী ৩ কার্যদিবসে উক্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়।

প্রসঙ্গত, এর আগেও অভিযুক্ত রাসেল সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মন্ডলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ,যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এছাড়াও মাসে ৪৫ দিনের বেতন নেওয়া, নিয়মিতভাবে অফিস না করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।