শেষমুহুর্তে সরস্বতী প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কক্সবাজারের প্রতিমা শিল্পীরা

  • Update Time : ১০:৩৬:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / 81

অন্তর দে বিশাল, কক্সবাজার :

আর মাত্র ১’দিন পর শুরু হবে সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। ছোট বড় নানা শ্রেনী-পেশার শিক্ষার্থীসহ সব বয়সের লোকজন বিদ্যা অর্জনের লক্ষ্যে বিদ্যার দেবী মা সরস্বতী পূজা করে থাকে।

সনাতন শাস্ত্র মতে, মাঘ মাসের পঞ্চম তিথিতে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়।

সেই অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) শুভ অধিবাস ও বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এই পূজা। তাই বিদ্যা দেবীকে রং-তুলির আঁচড়ে সুন্দর রূপ দিতে শেষমুহুর্তে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন কক্সবাজারের প্রতিমা শিল্পীরা।

এরই মধ্যে প্রতিমা শিল্পীদের তুলির আচড়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠছে বিদ্যা দেবী সরস্বতীর মুখ। এ পূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মালম্বী ও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

এদিকে, সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে ও জেলার সব উপজেলায় প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে।
শেষ মুহূর্তে দিন-রাত প্রতিমা তৈরি ও প্রতিমায় রং দেয়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। রং দেয়া শেষে প্রতিমায় পোশাক ও অলঙ্কার পড়িয়ে দৃষ্টি নন্দন করা হবে।

কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কস্থ সরস্বতী বাড়ীর প্রতিমা শিল্পী নেপাল ভট্টাচার্য জানান, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তারা শহরের বিভিন্ন মন্দির, আশ্রম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। এছাড়াও সরস্বতী বাড়ীতে তৈরি প্রতিমা প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া হয়।

শীতকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি ও রং করায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কাজের চাপে দম ফেলার সময় নেই তাদের। সরস্বতী দেবীর প্রতিটি প্রতিমা সর্ব নিম্ন ৩ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

হিন্দুধর্ম মতে, বিদ্যার দেবী সরস্বতী। হিন্দু শিক্ষার্থীরা দেবীর আশীর্বাদ লাভের আশায় প্রতিবছর পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবীর পূজা করে থাকেন। এ পূজা উপলক্ষে হিন্দুধর্মবালম্বীদের বাড়িতে বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী মন্দির। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃহত্তর পরিসরে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা।
রামু সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জেকশন দাশ জানান, প্রতিবছরই দেবীর কাছে বিদ্যার জন্য প্রার্থনা করি। এবারও তারা দেবীর কাছে বিদ্যা ও দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করবেন।

তবে তাদের অভিযোগ গত বছর যে মূর্তি ১০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছিল সেই মাপের মূর্তি এ বছর তার দ্বিগুণ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সরস্বতী বিদ্যার দেবী এই বিশ্বাসে আমরা পূজা করি। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে দেবীর প্রতিমা।

সরস্বতী দেবীর প্রতিমা বেশি দামে কেনার অভিযোগ উঠলেও প্রতিমা শিল্পীদের দাবী, মূতি তৈরি উপকরণ বাঁশ, কাঠ, ছন ও রং এর দাম বেড়ে যাওয়া খরচ গত বছরের চেয়ে একটু বেড়েছে।

কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ জানান, কক্সবাজারে সবকয়টি পুজা মান্ডপে বিদ্যার দেবী মায়ের পুজা করা হবে। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির দেওয়া সরকারি নির্দেশনা জেলার সব জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই প্রতিবারের মতো এইবারও পুজা সম্পন্ন হবে আশাবাদী। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট বাপ্পি শর্মা জানান, উপজেলা সদর ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মঠ-মন্দির, বাসা-বাড়িতে সরস্বতী পূজা উদযাপিত হবে। কোনো ধরণের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পরিবেশে এইবারের পূজা সম্পন্ন হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


শেষমুহুর্তে সরস্বতী প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কক্সবাজারের প্রতিমা শিল্পীরা

Update Time : ১০:৩৬:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

অন্তর দে বিশাল, কক্সবাজার :

আর মাত্র ১’দিন পর শুরু হবে সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। ছোট বড় নানা শ্রেনী-পেশার শিক্ষার্থীসহ সব বয়সের লোকজন বিদ্যা অর্জনের লক্ষ্যে বিদ্যার দেবী মা সরস্বতী পূজা করে থাকে।

সনাতন শাস্ত্র মতে, মাঘ মাসের পঞ্চম তিথিতে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়।

সেই অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) শুভ অধিবাস ও বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এই পূজা। তাই বিদ্যা দেবীকে রং-তুলির আঁচড়ে সুন্দর রূপ দিতে শেষমুহুর্তে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন কক্সবাজারের প্রতিমা শিল্পীরা।

এরই মধ্যে প্রতিমা শিল্পীদের তুলির আচড়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠছে বিদ্যা দেবী সরস্বতীর মুখ। এ পূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মালম্বী ও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

এদিকে, সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে ও জেলার সব উপজেলায় প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে।
শেষ মুহূর্তে দিন-রাত প্রতিমা তৈরি ও প্রতিমায় রং দেয়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। রং দেয়া শেষে প্রতিমায় পোশাক ও অলঙ্কার পড়িয়ে দৃষ্টি নন্দন করা হবে।

কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কস্থ সরস্বতী বাড়ীর প্রতিমা শিল্পী নেপাল ভট্টাচার্য জানান, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তারা শহরের বিভিন্ন মন্দির, আশ্রম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। এছাড়াও সরস্বতী বাড়ীতে তৈরি প্রতিমা প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া হয়।

শীতকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি ও রং করায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কাজের চাপে দম ফেলার সময় নেই তাদের। সরস্বতী দেবীর প্রতিটি প্রতিমা সর্ব নিম্ন ৩ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

হিন্দুধর্ম মতে, বিদ্যার দেবী সরস্বতী। হিন্দু শিক্ষার্থীরা দেবীর আশীর্বাদ লাভের আশায় প্রতিবছর পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবীর পূজা করে থাকেন। এ পূজা উপলক্ষে হিন্দুধর্মবালম্বীদের বাড়িতে বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী মন্দির। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃহত্তর পরিসরে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা।
রামু সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জেকশন দাশ জানান, প্রতিবছরই দেবীর কাছে বিদ্যার জন্য প্রার্থনা করি। এবারও তারা দেবীর কাছে বিদ্যা ও দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করবেন।

তবে তাদের অভিযোগ গত বছর যে মূর্তি ১০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছিল সেই মাপের মূর্তি এ বছর তার দ্বিগুণ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সরস্বতী বিদ্যার দেবী এই বিশ্বাসে আমরা পূজা করি। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে দেবীর প্রতিমা।

সরস্বতী দেবীর প্রতিমা বেশি দামে কেনার অভিযোগ উঠলেও প্রতিমা শিল্পীদের দাবী, মূতি তৈরি উপকরণ বাঁশ, কাঠ, ছন ও রং এর দাম বেড়ে যাওয়া খরচ গত বছরের চেয়ে একটু বেড়েছে।

কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ জানান, কক্সবাজারে সবকয়টি পুজা মান্ডপে বিদ্যার দেবী মায়ের পুজা করা হবে। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির দেওয়া সরকারি নির্দেশনা জেলার সব জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই প্রতিবারের মতো এইবারও পুজা সম্পন্ন হবে আশাবাদী। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট বাপ্পি শর্মা জানান, উপজেলা সদর ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মঠ-মন্দির, বাসা-বাড়িতে সরস্বতী পূজা উদযাপিত হবে। কোনো ধরণের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পরিবেশে এইবারের পূজা সম্পন্ন হবে।