স্বামীকে আটকে রেখে ধর্ষণ: র‍্যাবের অভিযোগ আমলে নিয়েছে জাবি প্রশাসন

  • Update Time : ০৭:৪৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / 65

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। কারণ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় মাদক, ধর্ষণসহ আরও নানা ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বহিরাগতদের প্রবেশের দায় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের (র‍্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী বিষয়টি খুবই এলার্মিং। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এখনই আরও কঠোর হতে হবে। কারণ আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি, ক্যাম্পাসে মাদকসহ নানা ধরনের অবৈধ কাজ ঘটে। এসব ঘটনা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয় রয়েছে। তারা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, সহযোগিতা চান, আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব। আমরা দেশের ভবিষ্যত সম্পদ, জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যতকে এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না। শিক্ষার্থীদের অপরাধে জড়ানোর বিষয়ে আগেই সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। মামুনের মতো লোকেরাই নিজেদের স্বার্থে, নিজেরাই অপকর্ম করার জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। কোমলমতি শিক্ষার্থী যারা আছে তাদের এমন করে বিপথে নেয়ার দায়-দায়িত্ব আমাদের সকল স্টেকহোল্ডারদের নিতে হবে। অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক সমাজ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকেও এর দায় নিতে হবে।

গণমাধ্যমে র‍্যাবের এই বক্তব্যের পরে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা আরও বেড়ে গেছে। প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীদের অনাস্থা যে দীর্ঘদিন থেকে ছিল সেটাও আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়র সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে র‍্যাব এর মিডিয়া সেল সংবাদ সম্মেলন করে যে বিষয়গুলি সামনে এনেছে এটা নতুন কোন ঘটনা না। নেশাদ্রব্যের ধরনে, বিপননের পন্থায় আধুনিক মাত্রা যোগ হয়েছে এবং নতুন নতুন মাফিয়ার আবির্ভাব ঘটেছে মাত্র। আগে অতি গোপনে মুষ্টিমেয় কিছু পথভ্রষ্ট বহিরাগত মানুষ এবং ক্যাম্পাসের ছাত্র বা ছাত্রনেতা নামধারী কেউ কেউ এই ধরনের ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকতো। সরকারি সংগঠনের প্রায় সকল প্রভাবশালী নেতারাই এখন এটাকে ব্যবসা বা আয় উপার্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করেছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। আজ যে ছাত্র-ছাত্রী নানা রকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এমনকি একদল পশুর লালসার পাত্র হচ্ছে; আগামীকাল আপনার আমার সন্তানের পরিনতি যে অনুরুপ হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন উল্লেখ করে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনের পরে জাবি প্রশাসন যেমন তাদের বক্তব্য ক্লিয়ার করে নি, ঠিক তেমনিভাবে অতীতেও বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ, নিপীড়ন, মাদক ব্যবসা, র‍্যাগিং মাত্রা ছাড়িয়েছে সেগুলোর ব্যাপারেও কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। যখনই এরকম ঘটনাগুলি ঘটছে তখনই সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন বা শিক্ষকরা তখনই উপাচার্যকে জানিয়েছে এবং উপাচার্য এগুলোর সমাধান করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন নাই। অবৈধ শিক্ষার্থীদের কথা, নিপীড়ক শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে অনেক কিছুই হয়েছে, কিন্তু কোনটা আলোর মুখ দেখে নি। আমি মনে করি যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল এবং মেধাবী শিক্ষকদের বাইরে রেখে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, অসৎ এবং অপরাধের সাথে জড়িত এমন শিক্ষককের সংখ্যাই বেশি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা মারাত্মক দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করে ফেলেছে। ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীদের লাগামহীন ছাড় দেয়া, তাদেরকে চাঁদাবাজিতে যুক্ত করার পাশাপাশি শিক্ষকরা নিজেরাও চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলস্বরুপ আজকে ক্যাম্পাসে এই দুর্ঘটনা, ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে। এখন শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগর প্রশাসন নয়, রাষ্ট্রকেও এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এই প্রশাসনের দ্বারা আসলে কিছুই হবে না, উচ্চতর তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখতে পারেন যে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা জড়িত কিনা এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে, নিপীড়নের সাথে সম্পৃক্ত কিনা। যদি সম্পৃক্ত না থাকে তাহলে কেন ব্যবস্থা নেয় না। আমরা শিক্ষকই হই আর শিক্ষার্থীই হই, কেউ তো রাষ্ট্রীয় আইনের উর্ধ্বে না। এখানে মাননীয় আচার্যের হস্তক্ষেপও আমরা প্রত্যাশা করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অধ্যাপক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে সবার আগে প্রশাসন। তারা একাডেমিক কাজে তো নাই, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেও তারা ব্যর্থ। এখানে কতিপয় শিক্ষার্থীদের সাথে কিছু অসৎ শিক্ষক মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এর ভুক্তভোগী হচ্ছে অন্যান্য সকল স্টেকহোল্ডাররা। এই যে ধর্ষণ হলো এটা তো একদিনে হয় নাই। আপনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, তাহলে তো বাকিসব ভেস্তে যাবেই। এর দায় পুরোটা নিতে হবে প্রশাসনকে।

র‍্যাবের বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান কর্মকর্তা সুদিপ্ত শাহীন বলেন, অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না। এই ব্যাপারে প্রশাসনকে এলার্ম দিতে দিতে আমি না শুধু পুরো নিরাপত্তা শাখা ক্লান্ত হয়ে গেছি। এরপরেও প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নেয়নি এটা তো জানি না। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা যখন বিভিন্ন অপরাধে জড়ায় যাবে তখন বাইরের লোক এটার সুযোগ নিবে। ওরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অপকর্ম করতে চাইবে স্বাভাবিক। এগুলো আমি রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ভিসিকে জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেয়নি কেন। এগুলো তো একদিনে হয় নাই, র‍্যাব ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতির সত্যি ঘটনাটিই বলছে। যদিও সবাই বলতেছে যে আপনি এত কথা বলতেছেন আঙুল কিন্তু আপনার দিকেও যাবে। কই আমি তো যথাসময়ে যাকে যাকে জানানো দরকার এলার্ম জানিয়েছি। আমাকে বলে লিখিত দেন নাই, জাহাঙ্গীরনগরে যদি লিখিত দিতে হয় প্রতিদিন একজন রাইটার লাগবে আর কয়েকশো কাগজ যাবে। মাদক এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে যে সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে আমি সাবেক রেজিস্ট্রার ম্যামকে একবার না একাধিকবার এলার্ম দিয়েছি, শুধু উনাকে না ভিসি স্যারকে, প্রক্টর স্যারকেও দিয়েছি। তারা শিকার করবে না যে আমি জানিয়েছি, কিন্তু আমার সামনে বলতে পারবে না।

Advertisement
নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে কল দেয়া হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাবার পরে কথা না বুঝতে পারার অজুহাত দেখিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপরে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম. ফিরোজ-উল-হাসান জানান, আমরা এই বিষয়টি একবারও অস্বীকার করছি না, আমরা অবশ্যই এটার জন্য দায়ী। র‍্যাবের যেহেতু নিজস্ব মেকানিজম আছে তারা অভিযুক্তদের রিমান্ডে নিয়ে তথ্য বের করতে পারে। কিন্তু আমাদের সেই মেকানিজম নাই, আমরা চাইলেও বের করতে পারি না। এছাড়া হলে অছাত্র থাকা, তাদের বের করতে না পারা এগুলো আমাদের ব্যর্থতা। তবে র‍্যাবের কাছে যে তথ্য আছে সেটা আমাদের দিলে ব্যবস্থা নিতে পারব। আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আলাদা করে এখানে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


স্বামীকে আটকে রেখে ধর্ষণ: র‍্যাবের অভিযোগ আমলে নিয়েছে জাবি প্রশাসন

Update Time : ০৭:৪৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। কারণ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় মাদক, ধর্ষণসহ আরও নানা ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বহিরাগতদের প্রবেশের দায় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের (র‍্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী বিষয়টি খুবই এলার্মিং। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এখনই আরও কঠোর হতে হবে। কারণ আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি, ক্যাম্পাসে মাদকসহ নানা ধরনের অবৈধ কাজ ঘটে। এসব ঘটনা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের বিষয় রয়েছে। তারা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, সহযোগিতা চান, আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব। আমরা দেশের ভবিষ্যত সম্পদ, জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যতকে এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না। শিক্ষার্থীদের অপরাধে জড়ানোর বিষয়ে আগেই সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। মামুনের মতো লোকেরাই নিজেদের স্বার্থে, নিজেরাই অপকর্ম করার জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। কোমলমতি শিক্ষার্থী যারা আছে তাদের এমন করে বিপথে নেয়ার দায়-দায়িত্ব আমাদের সকল স্টেকহোল্ডারদের নিতে হবে। অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক সমাজ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকেও এর দায় নিতে হবে।

গণমাধ্যমে র‍্যাবের এই বক্তব্যের পরে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা আরও বেড়ে গেছে। প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীদের অনাস্থা যে দীর্ঘদিন থেকে ছিল সেটাও আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়র সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে র‍্যাব এর মিডিয়া সেল সংবাদ সম্মেলন করে যে বিষয়গুলি সামনে এনেছে এটা নতুন কোন ঘটনা না। নেশাদ্রব্যের ধরনে, বিপননের পন্থায় আধুনিক মাত্রা যোগ হয়েছে এবং নতুন নতুন মাফিয়ার আবির্ভাব ঘটেছে মাত্র। আগে অতি গোপনে মুষ্টিমেয় কিছু পথভ্রষ্ট বহিরাগত মানুষ এবং ক্যাম্পাসের ছাত্র বা ছাত্রনেতা নামধারী কেউ কেউ এই ধরনের ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকতো। সরকারি সংগঠনের প্রায় সকল প্রভাবশালী নেতারাই এখন এটাকে ব্যবসা বা আয় উপার্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করেছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। আজ যে ছাত্র-ছাত্রী নানা রকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এমনকি একদল পশুর লালসার পাত্র হচ্ছে; আগামীকাল আপনার আমার সন্তানের পরিনতি যে অনুরুপ হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন উল্লেখ করে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি বলেন, র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনের পরে জাবি প্রশাসন যেমন তাদের বক্তব্য ক্লিয়ার করে নি, ঠিক তেমনিভাবে অতীতেও বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ, নিপীড়ন, মাদক ব্যবসা, র‍্যাগিং মাত্রা ছাড়িয়েছে সেগুলোর ব্যাপারেও কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। যখনই এরকম ঘটনাগুলি ঘটছে তখনই সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন বা শিক্ষকরা তখনই উপাচার্যকে জানিয়েছে এবং উপাচার্য এগুলোর সমাধান করবেন। কিন্তু পরবর্তীতে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন নাই। অবৈধ শিক্ষার্থীদের কথা, নিপীড়ক শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে অনেক কিছুই হয়েছে, কিন্তু কোনটা আলোর মুখ দেখে নি। আমি মনে করি যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল এবং মেধাবী শিক্ষকদের বাইরে রেখে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, অসৎ এবং অপরাধের সাথে জড়িত এমন শিক্ষককের সংখ্যাই বেশি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা মারাত্মক দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করে ফেলেছে। ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীদের লাগামহীন ছাড় দেয়া, তাদেরকে চাঁদাবাজিতে যুক্ত করার পাশাপাশি শিক্ষকরা নিজেরাও চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ফলস্বরুপ আজকে ক্যাম্পাসে এই দুর্ঘটনা, ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে। এখন শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগর প্রশাসন নয়, রাষ্ট্রকেও এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এই প্রশাসনের দ্বারা আসলে কিছুই হবে না, উচ্চতর তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখতে পারেন যে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা জড়িত কিনা এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে, নিপীড়নের সাথে সম্পৃক্ত কিনা। যদি সম্পৃক্ত না থাকে তাহলে কেন ব্যবস্থা নেয় না। আমরা শিক্ষকই হই আর শিক্ষার্থীই হই, কেউ তো রাষ্ট্রীয় আইনের উর্ধ্বে না। এখানে মাননীয় আচার্যের হস্তক্ষেপও আমরা প্রত্যাশা করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অধ্যাপক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে সবার আগে প্রশাসন। তারা একাডেমিক কাজে তো নাই, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেও তারা ব্যর্থ। এখানে কতিপয় শিক্ষার্থীদের সাথে কিছু অসৎ শিক্ষক মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এর ভুক্তভোগী হচ্ছে অন্যান্য সকল স্টেকহোল্ডাররা। এই যে ধর্ষণ হলো এটা তো একদিনে হয় নাই। আপনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, তাহলে তো বাকিসব ভেস্তে যাবেই। এর দায় পুরোটা নিতে হবে প্রশাসনকে।

র‍্যাবের বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান কর্মকর্তা সুদিপ্ত শাহীন বলেন, অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না। এই ব্যাপারে প্রশাসনকে এলার্ম দিতে দিতে আমি না শুধু পুরো নিরাপত্তা শাখা ক্লান্ত হয়ে গেছি। এরপরেও প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নেয়নি এটা তো জানি না। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা যখন বিভিন্ন অপরাধে জড়ায় যাবে তখন বাইরের লোক এটার সুযোগ নিবে। ওরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অপকর্ম করতে চাইবে স্বাভাবিক। এগুলো আমি রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ভিসিকে জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেয়নি কেন। এগুলো তো একদিনে হয় নাই, র‍্যাব ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতির সত্যি ঘটনাটিই বলছে। যদিও সবাই বলতেছে যে আপনি এত কথা বলতেছেন আঙুল কিন্তু আপনার দিকেও যাবে। কই আমি তো যথাসময়ে যাকে যাকে জানানো দরকার এলার্ম জানিয়েছি। আমাকে বলে লিখিত দেন নাই, জাহাঙ্গীরনগরে যদি লিখিত দিতে হয় প্রতিদিন একজন রাইটার লাগবে আর কয়েকশো কাগজ যাবে। মাদক এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে যে সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে আমি সাবেক রেজিস্ট্রার ম্যামকে একবার না একাধিকবার এলার্ম দিয়েছি, শুধু উনাকে না ভিসি স্যারকে, প্রক্টর স্যারকেও দিয়েছি। তারা শিকার করবে না যে আমি জানিয়েছি, কিন্তু আমার সামনে বলতে পারবে না।

Advertisement
নিরাপত্তা কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজকে কল দেয়া হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাবার পরে কথা না বুঝতে পারার অজুহাত দেখিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপরে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম. ফিরোজ-উল-হাসান জানান, আমরা এই বিষয়টি একবারও অস্বীকার করছি না, আমরা অবশ্যই এটার জন্য দায়ী। র‍্যাবের যেহেতু নিজস্ব মেকানিজম আছে তারা অভিযুক্তদের রিমান্ডে নিয়ে তথ্য বের করতে পারে। কিন্তু আমাদের সেই মেকানিজম নাই, আমরা চাইলেও বের করতে পারি না। এছাড়া হলে অছাত্র থাকা, তাদের বের করতে না পারা এগুলো আমাদের ব্যর্থতা। তবে র‍্যাবের কাছে যে তথ্য আছে সেটা আমাদের দিলে ব্যবস্থা নিতে পারব। আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আলাদা করে এখানে আমার কোনো বক্তব্য নেই।