জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাবিতে মানববন্ধন, অপরাধীদের বিচার দাবি
- Update Time : ০৫:১২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / 119
জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে(জাবি) স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের বাবা-মায়েরা আমাদেরকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পাঠায়, জ্ঞান আহরণ করতে পাঠায়, মানুষ হতে পাঠায় কিন্তু সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে মানুষ হওয়ার কোনো উপাদান এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই। তারা ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
মানববন্ধনে ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, উপাসনালয়ের পরেই সবচেয়ে পবিত্র স্থান হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন কী ঘটছে ? কিছুদিন আগে সিলেট এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। একই ঘটনা ঘটলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও (জাবি)।
তিনি বলেন, প্রশাসন এই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি যদি নিশ্চিত করতে পারতো তাহলে সিলেট এমসি কলেজে যে ঘটনা ঘটেছে জাবিতেও এই একই ঘটনা ঘটতো না। প্রশাসনের প্রতি আমরা আবেদন জানাই যখন দেশের প্রতিটি সেক্টর উন্নত হচ্ছে, তখন ক্যাম্পাসে আমাদের মায়েদের, বোনদের, বন্ধুদের নিরাপত্তার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজকে নিশ্চিত করা যায়নি। আমরা ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই ন্যাক্কার জনক ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি ইসলাম বলেন, আজকে বছরের শুরুতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের মধ্য দিয়েই আমরা যাত্রা শুরু করেছি। যেটা আমাদের বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। জাবি প্রশাসনের প্রতি ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
অদিতি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের বাবা মায়েরা আমাদেরকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পাঠায়, জ্ঞান আহরণ করতে পাঠায়, মানুষ হতে পাঠায় কিন্তু সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে মানুষ হওয়ার কোনো উপাদান এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই। এর ফলেই আমরা দেখতে পাচ্ছি জাবিতে হলের স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের মত ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সমাজের জন্য এটি লজ্জাজনক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যে সকল নির্যাতকেরা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের আরেকটি চিহ্ন যোগ করেছে তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। জাবিতে যেটা ঘটেছে কোনো নিশ্চয়তা নেই যে ঢাবিতে সেটি ঘটবে না। তাই সকল বিশ্ববিদ্যালয় সহ গণপরিবহন, কর্মসংস্থান সকল জায়গায় নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
অদিতি ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই মানিক নামে একজন নিপীড়ক ও ধর্ষক ছিলেন যিনি একশতম ধর্ষণের পর উল্লাস করেছিলেন। এই আন্দোলনের মুখেই কিন্তু ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন, ছাত্র নির্যাতন ও নারী নির্যাতনের মত বিষয়গুলো কিন্তু প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ যেভাবে ধর্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো সেই আন্দোলনের মাধ্যমেই জাবির এই নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক বলেন, যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন ধর্ষক তৈরি করছে। ধর্ষকের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো তাহলে এই নর পিশাচ মোস্তাফিজ এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারতো না।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আমরা অনেক আগাছা দেখতে পাচ্ছি। আগাছা গুলো এখন গাছের মত মোটা হয়ে গেছে। প্রশাসনকে অতিদ্রুত এই আগাচ্ছে পরিষ্কারের দায়িত্ব নিতে হবে। নয়তো একদিন এমন হবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু আগাছাই থাকবে কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে টিএসসি থেকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত একটা প্রতিবাদ মিছিল করেন মানববন্ধনকারী শিক্ষার্থীরা ।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার(৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে জাবির মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে জাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুনের বিরুদ্ধে।