ট্যাক্সিচালক থেকে পাকিস্তানের নায়ক আমের
- Update Time : ১২:৪০:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৪
- / 112
আমের জামালের নামে এক পলক চোখ বুলিয়েই বলা যায়, ‘স্বপ্নের মতো শুরু।’ পার্থে টেস্ট অভিষেক তাঁর। প্রথম ইনিংসে নামের পাশে ৬ উইকেট। সিডনি টেস্টে দলের বিপর্যয়ে আমের খেললেন ৯৭ বলে ৮২ রানের ঝকঝকে ইনিংস। প্যাট কামিন্স, মিশেল স্টার্কদের সামলেছেন। ইনিংস সাজিয়েছেন ৯টি চার ও চারটি ছক্কায়। অভিষেক সিরিজে অলরাউন্ডার নামের প্রতি যোগ্য সম্মান।
অথচ ২৭ বছর বয়সী আমের জামাল স্বপ্ন বিসর্জন দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। কাঁধে সংসারের ভার, পরিবারে অনটন; আমেরকেও অনেকে বলেছিলেন, ‘বাস্তববাদী হও। ছেড়ে দাও ক্রিকেট।’ স্বপ্ন বিসর্জন দেননি ডানহাতি এই পেস অলরাউন্ডার। বেছে নিয়েছিলেন পরিশ্রমের পথ। অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন ক্রিকেট খেলতে। শূন্য হাতে দেশে ফিরে চালাতে হয়েছে ট্যাক্সি।
আমেরের অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমানোর পেছনেও আছে মন খারাপের গল্প। ২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন তিনি। গতি দিয়ে বোলিং করতে পারতেন। তখন থেকেই টুকটাক ব্যাটিংও জানতেন। কিন্তু ১৯-এর পরের চার বছরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেই সুযোগ পাননি তিনি। যা তাঁকে বল ছেড়ে ট্যাক্সির স্টিয়ারিং ধরার পথে ঠেলে দেয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে অনূর্ধ্ব-২৩ ট্রায়ালের কথা শুনে দেশে ফিরে আসেন। ভাগ্য সহায় হয়নি সেবারও।
সেই সব গল্প বলেছেন আমের জামাল নিজেই, “অনেকেই আমাকে বলেছিলেন, ‘আর কোনো আশা নেই। ক্রিকেট ছেড়ে দাও।’ আমি বলেছিলাম, ‘না, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ।”
আরেকটু পেছনে তাকিয়ে বলেন, ‘আমি পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য ছিলাম। কিন্তু চার বছর অপেক্ষা করেও প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে পারিনি। চলে যাই অস্ট্রেলিয়া। সেখানে সিডনির হকসবারিতে পাঁচ মাসের মতো টুকটাক ক্রিকেট খেলি। এর পর পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ ট্রায়ালের কথা শুনে পাকিস্তানে ফিরি। ওই ট্রায়ালেও আমি ব্যর্থ। যেহেতু পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, ব্যাংক থেকে ট্যাক্সি নিয়ে উবার চালানো শুরু করি। এর ফাঁকে অনুশীলন কঠিন ছিল। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।’
আমের পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন। ঘরোয়া টেস্ট-ওয়ানডের পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট দিয়ে আর্থিক দুর্দশা বেশ খানিকটা কাটিয়ে উঠেছেন। জাতীয় দলের জার্সি পরে উত্তরসূরিদের অনুপ্রেরণার গল্প দিয়েছেন। মাঠে দলকে দিয়েছেন ভরসা।
সিডনি টেস্টের প্রথম দিন প্রথম ইনিংসে যেমন পাকিস্তান ৯৫ রানে ৫ উইকেট হারায়। মোহাম্মদ রিজওয়ান ৮৮ ও আমের ৮২ রান করে ওই ধাক্কা সামাল দেন। দলকে এনে দেন ৩১৩ রানের সংগ্রহ। দিনশেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রান ৬।