সাংবাদিকের রুমের তালা ভাঙার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে, ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম

  • Update Time : ০২:৪০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩
  • / 146

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে(এস এম হল) একজন সাংবাদিকের কক্ষের তালা ভাঙার ঘটনায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারাও এতে সংহতি জানায়।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে এস এম হলে নিজ রুমের (১০৩ নম্বর রুম) তালা ভাঙা অবস্থায় পান রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান। ছাত্রলীগের কর্মীরা এ কাজ করেছেন বলে মনে করা হয়। পরে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

এসময় এস এম হলের দুজন হাউস টিউটর, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া, ছাত্রলীগের হল সেক্রেটারি মিশাত সরকার, ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শিমুল কুম্ভকার, ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান সেক্রেটারি মাঈন আহমেদ, ছাত্রশক্তির ঢাবি সদস্য সচিব মো. আবু বাকের মজুমদারসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে যদি অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় না আনা হয় তাহলে আমরা অন্যান্য ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের রুমে তালা দেব। 

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ বলেন, হলের হাউজ টিউটররা বললেন- আমরা অভিযুক্তদের ডাকলে তারা যদি সাড়া না দেয় তাহলে অপরাধী শনাক্ত করতে বেশি সময় লাগতে পারে। প্রশাসন ব্যর্থ হলে আমরা বুঝে নেব হলে প্রশাসনের কোন কাজ নেই।

ছাত্রশক্তির ঢাবি শাখার সদস্য সচিব মো. আবু বাকের মজুমদার বলেন, এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। কিন্তু প্রশাসন বরাবরই নিশ্চুপ রয়েছে। আমরা ছাত্র সংগঠনগুলো বারবার প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাইনি।

এ বিষয়ে হলের হাউজ টিউটর জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান বলেন, অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইবো। তারা যদি না আসে তাহলে চিঠির মাধ্যমে তাদের জবাবদিহিতা চাইবো। আশপাশের রুমে যারা ছিল, তারা তালা ভাঙার বিষয়টি দেখেছে বা কোনো শব্দ শুনেছে কি না তা তদন্ত করবো এবং অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

জানা যায়, অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের হল সভাপতি তানভীর শিকদারের অনুসারী । তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তালা ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। 

অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মাহাদী হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী এবং দৈনিক যুগান্তরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ।

সম্প্রতি হলের প্রাধ্যাক্ষ হাউস টিউওয়রের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ১০৩ নম্বর রুমে তুলে দেওয়া হয়। তানভীর সিকদারের দুজন অনুসারী ওই রুমে উঠতে চান।

তাদের দাবি, প্রাধ্যক্ষ স্বয়ং তাদের ওই রুমে উঠতে বলেছেন। তবে এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মাহাদী হাসান প্রাধ্যক্ষকে জিজ্ঞেস করলে তাদের রুমে তোলার ব্যাপারে তিনি জানেন না বলে জানান। পরবর্তীতে মঙ্গলবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রুমে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে ফিরে এসে তার রুমের তালা ভাঙা দেখতে পান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান বলেন, আমি সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে রুমে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। এসময় আমি একজন শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎ করে সাড়ে দশটার দিকে হলে ফিরেছি। এসে দেখি আমার রুমের তালা ভেঙে ফেলা হয়েছে।

মাহাদী হাসান বলেন, ছাত্রলীগের হল সভাপতি তানভীর সিকদারের দুজন অনুসারী আমার রুমের তালা ভেঙেছে। যারা পূর্বে আমার রুমে উঠতে জোর-জবরদস্তি করেছিলো তারাই এ কাজ করেছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর সিকদার বলেন, যে দুজন শিক্ষার্থী ওই রুমে উঠতে চেয়েছিলো, তারা বর্তমান ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা। এ অভিযোগটি আমি শোনার পরে তাদের কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা তালা ভাঙার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে এটি একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিলো।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সাংবাদিকের রুমের তালা ভাঙার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে, ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম

Update Time : ০২:৪০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে(এস এম হল) একজন সাংবাদিকের কক্ষের তালা ভাঙার ঘটনায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারাও এতে সংহতি জানায়।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে এস এম হলে নিজ রুমের (১০৩ নম্বর রুম) তালা ভাঙা অবস্থায় পান রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান। ছাত্রলীগের কর্মীরা এ কাজ করেছেন বলে মনে করা হয়। পরে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

এসময় এস এম হলের দুজন হাউস টিউটর, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া, ছাত্রলীগের হল সেক্রেটারি মিশাত সরকার, ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শিমুল কুম্ভকার, ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান সেক্রেটারি মাঈন আহমেদ, ছাত্রশক্তির ঢাবি সদস্য সচিব মো. আবু বাকের মজুমদারসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে যদি অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় না আনা হয় তাহলে আমরা অন্যান্য ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের রুমে তালা দেব। 

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ বলেন, হলের হাউজ টিউটররা বললেন- আমরা অভিযুক্তদের ডাকলে তারা যদি সাড়া না দেয় তাহলে অপরাধী শনাক্ত করতে বেশি সময় লাগতে পারে। প্রশাসন ব্যর্থ হলে আমরা বুঝে নেব হলে প্রশাসনের কোন কাজ নেই।

ছাত্রশক্তির ঢাবি শাখার সদস্য সচিব মো. আবু বাকের মজুমদার বলেন, এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। কিন্তু প্রশাসন বরাবরই নিশ্চুপ রয়েছে। আমরা ছাত্র সংগঠনগুলো বারবার প্রতিবাদ করেও কোনো সুফল পাইনি।

এ বিষয়ে হলের হাউজ টিউটর জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান বলেন, অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইবো। তারা যদি না আসে তাহলে চিঠির মাধ্যমে তাদের জবাবদিহিতা চাইবো। আশপাশের রুমে যারা ছিল, তারা তালা ভাঙার বিষয়টি দেখেছে বা কোনো শব্দ শুনেছে কি না তা তদন্ত করবো এবং অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

জানা যায়, অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের হল সভাপতি তানভীর শিকদারের অনুসারী । তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তালা ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। 

অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মাহাদী হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী এবং দৈনিক যুগান্তরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ।

সম্প্রতি হলের প্রাধ্যাক্ষ হাউস টিউওয়রের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ১০৩ নম্বর রুমে তুলে দেওয়া হয়। তানভীর সিকদারের দুজন অনুসারী ওই রুমে উঠতে চান।

তাদের দাবি, প্রাধ্যক্ষ স্বয়ং তাদের ওই রুমে উঠতে বলেছেন। তবে এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মাহাদী হাসান প্রাধ্যক্ষকে জিজ্ঞেস করলে তাদের রুমে তোলার ব্যাপারে তিনি জানেন না বলে জানান। পরবর্তীতে মঙ্গলবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রুমে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে ফিরে এসে তার রুমের তালা ভাঙা দেখতে পান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান বলেন, আমি সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে রুমে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। এসময় আমি একজন শিক্ষকের সাথে সাক্ষাৎ করে সাড়ে দশটার দিকে হলে ফিরেছি। এসে দেখি আমার রুমের তালা ভেঙে ফেলা হয়েছে।

মাহাদী হাসান বলেন, ছাত্রলীগের হল সভাপতি তানভীর সিকদারের দুজন অনুসারী আমার রুমের তালা ভেঙেছে। যারা পূর্বে আমার রুমে উঠতে জোর-জবরদস্তি করেছিলো তারাই এ কাজ করেছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর সিকদার বলেন, যে দুজন শিক্ষার্থী ওই রুমে উঠতে চেয়েছিলো, তারা বর্তমান ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা। এ অভিযোগটি আমি শোনার পরে তাদের কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা তালা ভাঙার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে এটি একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিলো।