আজ লঙ্কানদের মুখোমুখি বাংলাদেশ
- Update Time : ০৯:৩৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩
- / 145
স্পোর্টস ডেস্ক
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এশিয়ার ক্রিকেট শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এশিয়া কাপ অবশেষে মাঠে গড়িয়েছে। নেপালকে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়া কাপে শুভসূচনা করেছে সহ-আয়োজক স্বাগতিক পাকিস্তান। তবে বাংলাদেশের জন্য এশিয়া কাপ শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। আরেক সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে সাকিব আল হাসান শিবির। শ্রীলংকার ব্যাটিং স্বর্গ বলে পরিচিত ক্যান্ডির পাল্লেকেলেতে ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায়।
এশিয়া কাপে দুই দলের ইতিহাস বিবেচনা করলে দেখা যায় এশিয়া কাপে শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনায় আধিপত্যের দিক থেকে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ভারতের পরেই। অন্যদিকে তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলেও এখনো শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। শিরোপার বন্ধ্যত্ব ঘোচানোর মিশনে জয় দিয়ে আসর শুরু করতে উদ্গ্রীব অধিনায়ক সাকিব দেশ ছাড়ার আগে বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা শুধু এশিয়া কাপ নিয়েই ভাবছি এবং বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়েই আমাদের সব পরিকল্পনা।’
যদিও বাংলাদেশের সেই পরিকল্পনাকে অনেকটা ব্যাকফুটে নিয়ে গিয়েছে উইকেটকিপার ও ওপেনিং ব্যাটার লিটন দাসের ইনজুরি। অন্যদিকে ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপের দল ঘোষণার আগেই ছিটকে গেছেন তামিম ইকবাল ও পেস বোলার এবাদত হোসেন। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ভরসার অন্যতম নাম লিটন। তবে জ্বরের কারণে প্রথম দফায় দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিমান ধরতে পারেননি তিনি। এরপর ধারণা করা হচ্ছিল, এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে না খেললেও বাকি ম্যাচগুলো খেলতে পারবেন। তবে সেটাও সম্ভব হলো না।
লিটনের জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু ভাইরাস জ্বর থেকে এখনো সেরে উঠতে পারলেন না তিনি। যে কারণে লিটন পুরো এশিয়া কাপ থেকেই ছিটকে গেছেন। আর তারকা এই ওপেনারের ছিটকে যাওয়ায় নতুন করে ডাক পেয়েছেন অনেক দিন ধরে দলের বাইরে থাকা এনামুল হক বিজয়।
পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগোতে চান টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসান। প্রথম ম্যাচে নামার আগে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান জানিয়েছেন নিজেদের আত্মবিশ্বাসের কথা। বলছিলেন, ‘আসলে আমি একটা বিভাগের ওপর নির্ভর করে জিততে চাই না। আমার কাছে মনে হয় আমরা যদি প্রতিটি বিভাগেই ভালো খেলি সেটা পেস বোলিং আক্রমণ হতে পারে, স্পিনার, ব্যাটার, ফিল্ডার হতে পারে।’
‘এই চারটা জায়গাতে যদি আমরা ভালো খেলি তাহলে আমাদের ভালোভাবে জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে এবং আমরা ওটাই করার চেষ্টা করব, অলরাউন্ড ক্রিকেট খেলতে চাই। এমনটা না যে শুধু পেস বোলাররা আমাদের জিতিয়ে দেবে কিংবা শুধু ব্যাটাররা জিতিয়ে দেবে এটা না। আমরা চাই সবদিক থেকে ওদের চেয়ে ভালো খেলে জিতব।’-যোগ করেন সাকিব।
এদিকে টুর্নামেন্ট শুরুর আগ থেকেই ইনজুরিতে জর্জরিত বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। ইনজুরির কারণে দলের বোলিং আক্রমণের অনেকটাই বিসর্জন দিতে হচ্ছে দাসুন শানাকার দলকে। খেলতে পারছেন না তারকা লেগ-স্পিন অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। সদ্য সমাপ্ত লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে (এলপিএল) সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী এবং উইকেট শিকারি ছিলেন হাসারাঙ্গা। এ ছাড়া ইনজুরির কারণে দলের মূল পেস ইউনিটকেও হারিয়েছে সহ-আয়োজক দেশটি।
তবে লঙ্কান উদীয়মান বোলিং ইউনিটকে ছোট করে দেখছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘অভিজ্ঞতার দিক থেকে হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু আমি যেটা বললাম শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনে শ্রীলঙ্কার যারা খেলছে ওরা মাত্র এলপিএল থেকে এসেছে। যারা পারফর্ম করেছে তারাই এসেছে দলে। আসলে কাউকেই ছোট করার কিছু নেই। ওরাও মুখিয়ে থাকবে ভালো পারফর্ম করার জন্য। আমাদের বোলারদের যেহেতু অভিজ্ঞতা আছে সেটা হয়তো আমরা কাজে লাগাতে পারব। তার মানে এই না কালকের ম্যাচে এটা খুব একটা প্রভাব পড়বে দলের ক্ষেত্রে।’
এদিকে বাংলাদেশকে সমীহ করছেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাও। বাংলাদেশকে ভালো দল আখ্যা দিয়ে শানাকা বলছেন, ‘আমরা জানি, ভারত ও পাকিস্তান কতটা দাপটে। আমরা জানি, আমরা ভালো দল। বাংলাদেশও ভালো দল।’
‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এশিয়া কাপ বা কোনো বিশ্বকাপ জেতেনি। তাদের সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় আছে। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এটি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কোথাও না কোথাও শুরু করতে হবে। আগে আমরা ভারতের বিপক্ষেই বেশি খেলতাম। এখন ব্যাপারটি নতুন। বাংলাদেশ ভালো করতে চায়। আমি দ্বৈরথের কিছু দেখি না। তবে ক্রিকেটের ধরনই এমন।’-যোগ করেন শানাকা।
শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকার কাছে অবশ্য একটা বেশ অনুমিত প্রশ্নই ছিল । তার দলের চারজন মূল বোলার ইনজুরিতে পড়েছেন। কীভাবে মানিয়ে নেবেন তাদের ছাড়া? এই প্রশ্নের জবাবে হাতে থাকা দলটা যথেষ্ঠ ভালো বলে মন্তব্য করেছেন শানাকা। সঙ্গে মিডল অর্ডার এই ব্যাটার টাইগারদের উদ্দেশে ছেড়েছেন হুঙ্কার। টি-২০ ফরম্যাটে গত বছর এশিয়া কাপ জেতা শানাকা মনে করিয়ে দিলেন, কিছু সুবিধা তো তারা পাবেনই।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে শানাকা বলেছেন, ‘আমরা আমাদের ঘরের মাঠে খেলছি। তার মানে কিছু সুবিধা আমরা বেশি পাবো। হ্যা, ইনজুরির কারণে কিছু খেলোয়াড় এশিয়া কাপে অংশ নিতে পারছে না। কিন্তু আমি নিশ্চিত যারা দলে আছে তাদের নিয়ে আমরা ভালো দল, আমরা প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারব।’
ঘরের মাঠে খেলাও তো চ্যালেঞ্জিং। প্রত্যাশা পূরণের চাপ থাকে। তার ওপর শ্রীলঙ্কা সর্বশেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন। শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জও আছে। শানাকা বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, তাদের ওপর কোনো চাপ নেই।
দুদলই আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামবে। তবে খেলাটি মূলত নির্ধারণ হবে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং আক্রমণ কি করতে পারে তার ওপর। টাইগারদের চাওয়া থাকবে শ্রীলংকাকে অল্প রানে বেঁধে ফেলতে। যদি তাসকিন, হাসান, সাকিবদের বোলিং জমজমাট হয় তাহলে হয়তো ম্যাচের শেষ হাসি হবে বাংলাদেশেরই। জমজমাট এই এক লড়াই দেখার অপেক্ষায় রয়েছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।