এমটিএফই ১১ হাজার কোটি টাকা লুট! কোম্পানির মূলে কুমিল্লার দুবাই প্রবাসী মাসুদ ও পাপ্পু

  • Update Time : ১০:১৪:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অগাস্ট ২০২৩
  • / 197

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ,কুমিল্লা:

ঘরে বসে শুয়ে কিংবা সারাদিন গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘুরলেও প্রতিদিন ইনকাম হবে কারি কারি টাকা! দুঃখিত টাকা নয় ডলার! আর এজন্য জানা লাগবে না লেখাপড়া প্রয়োজন নেই শিক্ষাগত যোগ্যতা। করতে হবে না পরিশ্রমও। এমন প্রলোভনে কুমিল্লার হাজারো বিনিয়োগকারী কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন দিশেহারা। আর দেশের ডেশটিনি, যুবক, রিং আইডির প্রতারণাকেও হার মানিয়ে অল্প সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার মুলে রয়েছে কুমিল্লার দুজন দুবাই প্রবাসী।
শুধু মাত্র একটি এপসের মাধ্যমে ৫০/৬০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করেই প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা আয়। আর কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে তো রাতারাতি হয়ে যাবেন বড়লোক। রেফারেন্স ব্যবহার করে একশজনকে দেরশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করিয়ে সিও হতে পারলে মাসে আয় হবে ১০ লাখ।

দেশ বিদেশের বাংলাদেশী বেকার যুবক তরুণ ব্যবসায়ী প্রবাসী শিক্ষার্থী সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষকে এমন প্রলোভন দেখিয়ে বেশকিছু আইডিতে অল্প কিছুদিন লাভ দিয়ে রাতারাতি দেশের প্রায় ১০হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে নাম সর্বস্ব অনলাইন ব্যবসার ভূয়া বিদেশি কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ-এমটিএফই নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর এই প্রতারণা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে দুবাই থেকে। দুবাইয়ে বসে সারা দেশে প্রতারণার এই জাল ছড়িয়েছে মাসুদ আল ইসলাম ও আবুল খায়ের পাপ্পু নামে কুমিল্লার ২ যুবক।

কুমিল্লার এই দুই যুবক বেশির ভাগ সময়ই দুবাইয়ে থাকেন তারা। দেশে এসে সভা সেমিনার করেন বিনিয়োগ করান মানুষ কে। তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের মাঝে এর ব্যবপক বিস্তার লাভ করে। কুমিল্লা দেবিদ্বার পৌরসভা এলাকায় নতুন ভবন গড়ে তোলা দুবাই প্রবাসী যুবক আবুল খায়ের পাপ্পু। সম্প্রতি দেশেই ছিলেন তিনি। গত জুলাই কুমিল্লা নগরীতে বেশকিছু সেমিনার করেন। তবে স্ক্যাম শুরুর ক’দিন আগেই দুবাইয়ে পাড়ি জমায় তিনিও। দেশের হাজারো মানুষের শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়ে কুমিল্লার দুবাই প্রবাসী এই দুই যুবক দুবাইয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়। দুবাইয়ে তাদের রয়েছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকান ও সুপারসপ।

এলএমএল ব্যবসা ডেশটিনির আদলে গড়ে তোলা ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন পেশার কয়েক সহস্রাধিক মানুষ, দেশ বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী, বিভিন্ন কলেজ শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ও দপ্তরের হাজার হাজার মানুষ এখন দিশেহারা এতে বিনিয়োগ করে। অধিক মুনাফা অল্প পরিশ্রম আর আর তাড়াতাড়ি ধনী হওয়ার নেশায় কষ্টের জমানো, ধার দেনা এমনকি লোন করেও টাকা তুলে দিয়েছেন প্রতারণার মাধ্যম এই এপসে।

তথ্য রয়েছে দুবাইয়ে অবস্থানকারী ডিজিটাল প্রতারক মাসুদ ও পাপ্পুর বিরুদ্ধে তাদের নিজ নাম ও স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক একাউন্টগুলোতে গত তিন মাসে শতশত কোটি টাকা জমা হয়েছে। কিপ্টোকারেন্সির নামে অনলাইনে এই ব্যবসার বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। একে অবৈধ বলে ঘোষণাও দেয়া হয়। কোম্পানিটির কোন প্রকার ওয়েবসাইট, প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ও মালিকানার কোন তথ্যই নেই কোথাও, গুগলে সার্চ করেও পাওয়া যায়নি এর এমন কোন অস্তিত্ব।
স্ক্যামের পর মাসুদ ও পাপ্পুর ফেসবুক হোয়াটস এপ গ্রুপের হাজার হাজার সদস্যকে রমুভ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানায় বিনিয়োগকারীরা। আগষ্টের শুরু থেকেই এপসে আমানতের টাকা জমা করা গেলেও উত্তোলন করা যাচ্ছিলো না টাকা। এরপর ১৭ আগষ্ট রাতে জমা আমানতের টাকা পুরোপুরি হাওয়া হয়ে যায়। উল্টো সমপরিমাণ টাকা দেনা দেখিয়ে সে টাকা পরিশোধ না করলে গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দিচ্ছে এমটিএফই এপসে।

ধার দেনা করে কিংবা জমানো টাকা দিয়ে শুয়েবসে ইনকামের আশায় এমটিএফই নামের এই এপসে বিনিয়োগ করা কুমিল্লার হাজার হাজার বিনিয়োগকারি এখন নিরবে চোখের পানি ফেলছে। কি করবে কাকে ধরবে কোথায় অভিযোগ করবে? সরাসরি কারো হাতে টাকা না দিয়ে এপসের মাধ্যমে নিজের মোবাইল ফোনে টাকা জমা করেছে, এখন কাউকে ধরতেও পারবে না এটা ভেবেই দিশেহারা সকলে।

এদিকে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এমটিএফই এর কথিত এম্বাসিডির পাপ্পুর বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে নগদ টাকা জমা দেয়া কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলার বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


এমটিএফই ১১ হাজার কোটি টাকা লুট! কোম্পানির মূলে কুমিল্লার দুবাই প্রবাসী মাসুদ ও পাপ্পু

Update Time : ১০:১৪:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অগাস্ট ২০২৩

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ,কুমিল্লা:

ঘরে বসে শুয়ে কিংবা সারাদিন গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঘুরলেও প্রতিদিন ইনকাম হবে কারি কারি টাকা! দুঃখিত টাকা নয় ডলার! আর এজন্য জানা লাগবে না লেখাপড়া প্রয়োজন নেই শিক্ষাগত যোগ্যতা। করতে হবে না পরিশ্রমও। এমন প্রলোভনে কুমিল্লার হাজারো বিনিয়োগকারী কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন দিশেহারা। আর দেশের ডেশটিনি, যুবক, রিং আইডির প্রতারণাকেও হার মানিয়ে অল্প সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার মুলে রয়েছে কুমিল্লার দুজন দুবাই প্রবাসী।
শুধু মাত্র একটি এপসের মাধ্যমে ৫০/৬০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করেই প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা আয়। আর কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে তো রাতারাতি হয়ে যাবেন বড়লোক। রেফারেন্স ব্যবহার করে একশজনকে দেরশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করিয়ে সিও হতে পারলে মাসে আয় হবে ১০ লাখ।

দেশ বিদেশের বাংলাদেশী বেকার যুবক তরুণ ব্যবসায়ী প্রবাসী শিক্ষার্থী সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষকে এমন প্রলোভন দেখিয়ে বেশকিছু আইডিতে অল্প কিছুদিন লাভ দিয়ে রাতারাতি দেশের প্রায় ১০হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে নাম সর্বস্ব অনলাইন ব্যবসার ভূয়া বিদেশি কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ-এমটিএফই নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর এই প্রতারণা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে দুবাই থেকে। দুবাইয়ে বসে সারা দেশে প্রতারণার এই জাল ছড়িয়েছে মাসুদ আল ইসলাম ও আবুল খায়ের পাপ্পু নামে কুমিল্লার ২ যুবক।

কুমিল্লার এই দুই যুবক বেশির ভাগ সময়ই দুবাইয়ে থাকেন তারা। দেশে এসে সভা সেমিনার করেন বিনিয়োগ করান মানুষ কে। তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের মাঝে এর ব্যবপক বিস্তার লাভ করে। কুমিল্লা দেবিদ্বার পৌরসভা এলাকায় নতুন ভবন গড়ে তোলা দুবাই প্রবাসী যুবক আবুল খায়ের পাপ্পু। সম্প্রতি দেশেই ছিলেন তিনি। গত জুলাই কুমিল্লা নগরীতে বেশকিছু সেমিনার করেন। তবে স্ক্যাম শুরুর ক’দিন আগেই দুবাইয়ে পাড়ি জমায় তিনিও। দেশের হাজারো মানুষের শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়ে কুমিল্লার দুবাই প্রবাসী এই দুই যুবক দুবাইয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়। দুবাইয়ে তাদের রয়েছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকান ও সুপারসপ।

এলএমএল ব্যবসা ডেশটিনির আদলে গড়ে তোলা ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন পেশার কয়েক সহস্রাধিক মানুষ, দেশ বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী, বিভিন্ন কলেজ শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ও দপ্তরের হাজার হাজার মানুষ এখন দিশেহারা এতে বিনিয়োগ করে। অধিক মুনাফা অল্প পরিশ্রম আর আর তাড়াতাড়ি ধনী হওয়ার নেশায় কষ্টের জমানো, ধার দেনা এমনকি লোন করেও টাকা তুলে দিয়েছেন প্রতারণার মাধ্যম এই এপসে।

তথ্য রয়েছে দুবাইয়ে অবস্থানকারী ডিজিটাল প্রতারক মাসুদ ও পাপ্পুর বিরুদ্ধে তাদের নিজ নাম ও স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক একাউন্টগুলোতে গত তিন মাসে শতশত কোটি টাকা জমা হয়েছে। কিপ্টোকারেন্সির নামে অনলাইনে এই ব্যবসার বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। একে অবৈধ বলে ঘোষণাও দেয়া হয়। কোম্পানিটির কোন প্রকার ওয়েবসাইট, প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ও মালিকানার কোন তথ্যই নেই কোথাও, গুগলে সার্চ করেও পাওয়া যায়নি এর এমন কোন অস্তিত্ব।
স্ক্যামের পর মাসুদ ও পাপ্পুর ফেসবুক হোয়াটস এপ গ্রুপের হাজার হাজার সদস্যকে রমুভ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানায় বিনিয়োগকারীরা। আগষ্টের শুরু থেকেই এপসে আমানতের টাকা জমা করা গেলেও উত্তোলন করা যাচ্ছিলো না টাকা। এরপর ১৭ আগষ্ট রাতে জমা আমানতের টাকা পুরোপুরি হাওয়া হয়ে যায়। উল্টো সমপরিমাণ টাকা দেনা দেখিয়ে সে টাকা পরিশোধ না করলে গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দিচ্ছে এমটিএফই এপসে।

ধার দেনা করে কিংবা জমানো টাকা দিয়ে শুয়েবসে ইনকামের আশায় এমটিএফই নামের এই এপসে বিনিয়োগ করা কুমিল্লার হাজার হাজার বিনিয়োগকারি এখন নিরবে চোখের পানি ফেলছে। কি করবে কাকে ধরবে কোথায় অভিযোগ করবে? সরাসরি কারো হাতে টাকা না দিয়ে এপসের মাধ্যমে নিজের মোবাইল ফোনে টাকা জমা করেছে, এখন কাউকে ধরতেও পারবে না এটা ভেবেই দিশেহারা সকলে।

এদিকে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এমটিএফই এর কথিত এম্বাসিডির পাপ্পুর বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে নগদ টাকা জমা দেয়া কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলার বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।