ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: সাক্ষাৎকার দিতে এসে নিরাপত্তা নেয়নি অভিযুক্তরা!

  • Update Time : ০৭:৫৮:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০২৩
  • / 194

শাহিন রাজা, ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় শেষবারের মতো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অভিযুক্ত সেই পাঁচ শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগী ফুলপরি। তবে এবার সাক্ষাৎকার শেষে প্রসাশনের নিরাপত্তা না নিয়েই নিজ দায়িত্বে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন অভিযুক্তরা। সোমবার (১২জুন) বেলা ১১টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনে কারণ উত্থাপন করেন তারা।

এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলেছেন, লিখিত বক্তব্য ছাড়াও অন্য কোন বক্তব্য আছে কি না তা জানতে আজ ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের আত্মপক্ষের সমর্থনে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন নতুন বক্তব্য সংযোজন করেছেন।

নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত মিটিং এ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম স্বাক্ষাৎকার দিতে আসা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেট থেকে নিয়ে আসাসহ মেইনগেটে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা দিব।

অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা গণমাধ্যমকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে বলেন, আমি আজ ক্যাম্পাসে এসেছি। আমার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বলেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে নিরাপত্তা দেয়নি। এর আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওতে তার নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারটি তুলে ধরেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তায় প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। কিন্তু স্বাক্ষাৎকার শেষে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা তাদেরকে গাড়িতে নিতে চাইলে নিরাপত্তা নিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থী। এসময় প্রশাসনের নিরাপত্তা ছাড়ায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন অন্তরা ব্যাতিত বাকি চার শিক্ষার্থী। এদিকে ক্যাম্পাসে সানজিদা চৌধুরী অন্তরা নিরাপত্তা ছাড়াই ক্যাম্পাসে চলাফেরাসহ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, আমরা শৃঙ্খলা কমিটির গত মিটিংয়ে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু যাওয়ার সময় তাদেরকে গাড়িতে উঠতে বলা হলে তারা গাড়িতে ওঠেনি। তারা বলেছে আমরা হেটেই যেতে পারবো।

উল্লেখ্য, আগামী ১৯ শে জুলাইয়ের মধ্যে এই ঘটনার চূড়ান্ত ফয়সালা করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তারই তাগিদে ঈদের ছুটি শেষে এ ঘটনার পূর্ণ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় ফুল পরী নামের এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ও মোয়াবিয়া, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ এবং হাইকোর্ট কতৃক পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সেই সাথে এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট হয়। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। পরে তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা উঠে এলে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: সাক্ষাৎকার দিতে এসে নিরাপত্তা নেয়নি অভিযুক্তরা!

Update Time : ০৭:৫৮:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০২৩

শাহিন রাজা, ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় শেষবারের মতো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অভিযুক্ত সেই পাঁচ শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগী ফুলপরি। তবে এবার সাক্ষাৎকার শেষে প্রসাশনের নিরাপত্তা না নিয়েই নিজ দায়িত্বে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন অভিযুক্তরা। সোমবার (১২জুন) বেলা ১১টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনে কারণ উত্থাপন করেন তারা।

এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলেছেন, লিখিত বক্তব্য ছাড়াও অন্য কোন বক্তব্য আছে কি না তা জানতে আজ ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের আত্মপক্ষের সমর্থনে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন নতুন বক্তব্য সংযোজন করেছেন।

নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত মিটিং এ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম স্বাক্ষাৎকার দিতে আসা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেট থেকে নিয়ে আসাসহ মেইনগেটে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা দিব।

অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা গণমাধ্যমকে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে বলেন, আমি আজ ক্যাম্পাসে এসেছি। আমার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বলেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে নিরাপত্তা দেয়নি। এর আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওতে তার নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারটি তুলে ধরেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তায় প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। কিন্তু স্বাক্ষাৎকার শেষে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা তাদেরকে গাড়িতে নিতে চাইলে নিরাপত্তা নিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থী। এসময় প্রশাসনের নিরাপত্তা ছাড়ায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন অন্তরা ব্যাতিত বাকি চার শিক্ষার্থী। এদিকে ক্যাম্পাসে সানজিদা চৌধুরী অন্তরা নিরাপত্তা ছাড়াই ক্যাম্পাসে চলাফেরাসহ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, আমরা শৃঙ্খলা কমিটির গত মিটিংয়ে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিরাপত্তার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু যাওয়ার সময় তাদেরকে গাড়িতে উঠতে বলা হলে তারা গাড়িতে ওঠেনি। তারা বলেছে আমরা হেটেই যেতে পারবো।

উল্লেখ্য, আগামী ১৯ শে জুলাইয়ের মধ্যে এই ঘটনার চূড়ান্ত ফয়সালা করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তারই তাগিদে ঈদের ছুটি শেষে এ ঘটনার পূর্ণ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় ফুল পরী নামের এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ও মোয়াবিয়া, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ এবং হাইকোর্ট কতৃক পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সেই সাথে এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট হয়। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। পরে তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা উঠে এলে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।