শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর, সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিককে হেনস্তা

  • Update Time : ০৯:১৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
  • / 853

সাঈদ হাসান, কুবি প্রতিনিধি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ইংরেজি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রুদ্র ইকবাল।

সোমবার দুপুরে ইংরেজি বিভাগের ১৫তম ব্যাচের দুই শিক্ষার্থী হীরক হাসান হীরা ও আরমান উদ্দিনের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরবর্তীতে হীরকের সমর্থনে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন আনসার ক্যাম্পের সামনে আরমানকে মারধর করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহি সমর্থিত মার্কেটিং ১৫ তম ব্যাচের শাহাদাত তানভীর রাফি, লোকপ্রশাসন ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নওশীন আল ইসলাম ও শাহারিয়ার সজীব নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফ আদনান ও তন্ময় আইন বিভাগের ফয়সাল, বাংলা বিভাগের আরিয়ান অঞ্জনসহ ১০ থেকে ১২জন ছাত্রলীগ কর্মী।

রেজা-ই-এলাহি ২০১৭ সালে কুবি শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি কুবি শাখার নতুন কমিটিতে সভাপতি পদপ্রার্থী বলে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদেরকে দিয়ে ফাঁকাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো এবং মারধরেরও অভিযোগ রয়েছে।
সোমবারের ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সাংবাদিক রুদ্র ইকবালকে হেনস্তা করেন রেজা সমর্থিত আসিফ এন্তাজ রাব্বি, অমিত সরকার ও সাদ্দামসহ অন্যান্যরা।
একই ঘটনার জের ধরে বিকেল ৪টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতেই ফের সাংবাদিকদের সাথে উচ্চবাচ্য করেন রেজা-ই-এলাহি, নৃবিজ্ঞান ৭ম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী স্বজন বরণ বিশ্বাস, লোকপ্রশাসন ৯ম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মাহি হাসনাইন নৃবিজ্ঞান ১০ম ব্যাচের আমিনুর বিশ্বাস, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১১তম ওয়াসিফুল ইসলাম, আসিফ এন্তাজ রাব্বি, লোকপ্রশাসন ১১ তম ব্যাচের নূরউদ্দিন হোসাইন, বাংলা বিভাগের রাকিব হোসাইন, নৃবিজ্ঞান ১৪ তম ব্যাচের রাকেশ দাস, লোকপ্রশাসন ১৩ তম ব্যাচের সাদ্দাম, লোকপ্রশাসন ১৪ তম ব্যাচের মাহাবুব ও ১২তম ব্যাচের রিফাত, অর্থনীতি বিভাগের মাসুম, নওশীন, রাফিসহ অন্যান্যরা।

এ সময় সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশ্য করে রেজা-ই-এলাহি বলেন, ‘সাংবাদিকরা এখনও আমাকে চিনে না, আমি কে। এই ক্যাম্পাস কারো বাপের না। সাংবাদিকরা আমাদের কী করবে, দেখে নেব। গুন্ডামির কী দেখছে।’

এ ঘটনার পর রেজা সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে মিছিল দেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক রুদ্র ইকবাল বলেন, ‘আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতেই আমার ওপর হামলে পড়ে।’

এসব বিষয়ে রেজা-ই-এলাহী বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের হেনস্তা করিনি। তারা আমাদের সাথে উচ্চবাচ্য করেছে। বিশৃঙ্খলাকারী কেউ আমার কর্মী নয়।’
নিয়মিত ছাত্র না হয়েও আপনি ক্যাম্পাসে মিছিল করতে পারেন কি না-এমন প্রশ্নে রেজা-ই-এলাহি বলেন, ‘এটা প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করেন। আমাকে কেন? আমি সবকিছুই করতে পারি। প্রশাসন এই বিষয়ে অবগত আছে।’

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘রেজা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভেনিং এমবিএ করছে। তবে ক্যাম্পাসে কেউ কিছু করতে চাইলে অবশ্যই প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে দু’জন শিক্ষার্থী বিশৃঙ্খলা করেছে, তাদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। তারা বলছে তারা মিউচুয়াল হয়ে গেছে। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি এখানে মধ্যস্থতা করেছি।’

তবে সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রক্টর।

পদ প্রত্যাশীর কথা বলে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদেরকে পদে আনার কোনো প্রশ্নই আসে না দাবি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, ‘এই মুহুর্তে কুবি ছাত্রলীগের কোনো সাংগঠনিক কমিটি নেই। কেউ ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কোন অপকর্ম করলে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তার দায়ভার নেবে না।
ইনান আরও বলেন, সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, তারা যেন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর, সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিককে হেনস্তা

Update Time : ০৯:১৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

সাঈদ হাসান, কুবি প্রতিনিধি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ইংরেজি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রুদ্র ইকবাল।

সোমবার দুপুরে ইংরেজি বিভাগের ১৫তম ব্যাচের দুই শিক্ষার্থী হীরক হাসান হীরা ও আরমান উদ্দিনের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরবর্তীতে হীরকের সমর্থনে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন আনসার ক্যাম্পের সামনে আরমানকে মারধর করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহি সমর্থিত মার্কেটিং ১৫ তম ব্যাচের শাহাদাত তানভীর রাফি, লোকপ্রশাসন ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নওশীন আল ইসলাম ও শাহারিয়ার সজীব নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফ আদনান ও তন্ময় আইন বিভাগের ফয়সাল, বাংলা বিভাগের আরিয়ান অঞ্জনসহ ১০ থেকে ১২জন ছাত্রলীগ কর্মী।

রেজা-ই-এলাহি ২০১৭ সালে কুবি শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি কুবি শাখার নতুন কমিটিতে সভাপতি পদপ্রার্থী বলে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদেরকে দিয়ে ফাঁকাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো এবং মারধরেরও অভিযোগ রয়েছে।
সোমবারের ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সাংবাদিক রুদ্র ইকবালকে হেনস্তা করেন রেজা সমর্থিত আসিফ এন্তাজ রাব্বি, অমিত সরকার ও সাদ্দামসহ অন্যান্যরা।
একই ঘটনার জের ধরে বিকেল ৪টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতেই ফের সাংবাদিকদের সাথে উচ্চবাচ্য করেন রেজা-ই-এলাহি, নৃবিজ্ঞান ৭ম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী স্বজন বরণ বিশ্বাস, লোকপ্রশাসন ৯ম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মাহি হাসনাইন নৃবিজ্ঞান ১০ম ব্যাচের আমিনুর বিশ্বাস, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১১তম ওয়াসিফুল ইসলাম, আসিফ এন্তাজ রাব্বি, লোকপ্রশাসন ১১ তম ব্যাচের নূরউদ্দিন হোসাইন, বাংলা বিভাগের রাকিব হোসাইন, নৃবিজ্ঞান ১৪ তম ব্যাচের রাকেশ দাস, লোকপ্রশাসন ১৩ তম ব্যাচের সাদ্দাম, লোকপ্রশাসন ১৪ তম ব্যাচের মাহাবুব ও ১২তম ব্যাচের রিফাত, অর্থনীতি বিভাগের মাসুম, নওশীন, রাফিসহ অন্যান্যরা।

এ সময় সাংবাদিকদেরকে উদ্দেশ্য করে রেজা-ই-এলাহি বলেন, ‘সাংবাদিকরা এখনও আমাকে চিনে না, আমি কে। এই ক্যাম্পাস কারো বাপের না। সাংবাদিকরা আমাদের কী করবে, দেখে নেব। গুন্ডামির কী দেখছে।’

এ ঘটনার পর রেজা সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে মিছিল দেন।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক রুদ্র ইকবাল বলেন, ‘আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতেই আমার ওপর হামলে পড়ে।’

এসব বিষয়ে রেজা-ই-এলাহী বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের হেনস্তা করিনি। তারা আমাদের সাথে উচ্চবাচ্য করেছে। বিশৃঙ্খলাকারী কেউ আমার কর্মী নয়।’
নিয়মিত ছাত্র না হয়েও আপনি ক্যাম্পাসে মিছিল করতে পারেন কি না-এমন প্রশ্নে রেজা-ই-এলাহি বলেন, ‘এটা প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করেন। আমাকে কেন? আমি সবকিছুই করতে পারি। প্রশাসন এই বিষয়ে অবগত আছে।’

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘রেজা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভেনিং এমবিএ করছে। তবে ক্যাম্পাসে কেউ কিছু করতে চাইলে অবশ্যই প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে দু’জন শিক্ষার্থী বিশৃঙ্খলা করেছে, তাদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। তারা বলছে তারা মিউচুয়াল হয়ে গেছে। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি এখানে মধ্যস্থতা করেছি।’

তবে সাংবাদিক হেনস্তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রক্টর।

পদ প্রত্যাশীর কথা বলে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদেরকে পদে আনার কোনো প্রশ্নই আসে না দাবি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, ‘এই মুহুর্তে কুবি ছাত্রলীগের কোনো সাংগঠনিক কমিটি নেই। কেউ ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কোন অপকর্ম করলে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তার দায়ভার নেবে না।
ইনান আরও বলেন, সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, তারা যেন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে।