তীব্র দাবদাহের মাস এপ্রিল, শেষদিকে স্বস্তি

  • Update Time : ১০:২৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
  • / 122

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

দাবদাহের প্রচণ্ড গরমে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কোনো কোনো পরিবারে শিশুরা ঠান্ডা ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রবীণেরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সচ্ছলদের কেনা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বাইরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে গিয়ে সরকারের জ্বালানি ব্যয়ও বাড়ছে। ১৩ এপ্রিল রেকর্ড ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে কেনাবেচার ক্ষতি করছে গরম। দিনমজুর ও শ্রমিকেরা বেশি গরমের কারণে বাড়তি কাজ করতে পারছেন না। সবচেয়ে উদ্বেগের দিক হলো, দাবদাহ ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।

এখন মাঠে রয়েছে বোরো মৌসুমের ধান। এটিই দেশের চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মৌসুম। দাবদাহের কারণে ধানের চিটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গড় তাপমাত্রা কতটা বেশি
দেশে সাধারণত মার্চ মাসে গরম শুরু হয়। আর বছরের সবচেয়ে উষ্ণ মাস এপ্রিল। এ বছর মার্চে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গরম ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এপ্রিলের দ্বিতীয় দিনে যশোর-চুয়াডাঙ্গা দিয়ে একটি দাবদাহ শুরু হয়। সেটি এখন দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় বিস্তৃত।

২ এপ্রিল থেকে দেশে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের টানা দাবদাহ সাধারণত দেখা যায় না।
এবারের এপ্রিলের দাবদাহের আরেকটি দিক হলো এর বিস্তৃতি বেশি। সাধারণত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলায় এপ্রিল মাসে দুই থেকে তিনটি দাবদাহ বয়ে যায়।

সেটাও তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। এবার এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে রংপুর বিভাগ ছাড়া সারা দেশেই মৃদু থেকে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে।

এপ্রিল মাসে সাধারণত দুই থেকে পাঁচটি কালবৈশাখী আঘাত হানে। সেই সঙ্গে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হয়। মাসের শুরুতে আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তাতে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা/মাঝারি এবং এক থেকে দুই দিন তীব্র কালবৈশাখীর আশঙ্কার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কালবৈশাখীর দেখা নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও বলেছিল, এ মাসে দুই থেকে তিনটি মৃদু/মাঝারি দাবদাহ বয়ে যেতে পারে এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। দেখা যাচ্ছে, আবহাওয়ার আচরণ ভিন্ন। এমনকি যে গরম পড়ছে, তার ধরনও স্বাভাবিক নয়।

কারণ, বাংলাদেশে গরমকালে বাতাসে আর্দ্রতা সাধারণত বেশি থাকে। এ বছর আর্দ্রতা খুবই কম দেখা যাচ্ছে। ফলে ঘাম হচ্ছে না, কিন্তু ঠোঁট ফাটছে, শরীর জ্বালাপোড়া করছে। বিগত দুই সপ্তাহ দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণত মরুভূমিতে দেখা যায়।

ঢাকায় গরম আরও বেড়েছে
রাজধানীর তাপমাত্রা গত শনিবার ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল, যা ছিল ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ১৯৬৫ সালে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। গতকাল রোববার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা আক্কু ওয়েদারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ঢাকায় গতকাল গরম অনুভূত হয়েছে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলাভূমি ও বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বেশি থাকলে সেখানে দাবদাহ বেশি দিন স্থায়ী হয় না। কারণ, দাবদাহে জলাভূমির পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। তা মেঘ তৈরি করে, বৃষ্টি নামায়। ফলে তাপমাত্রা কমে আসে। ঢাকার চারপাশের নদী, জলাভূমি, খাল ও সবুজ এলাকা কমছে। বিরূপ পরিস্থিতির এটাও কারণ।

আর্দ্রতা বাড়ছে, ঘাম বাড়বে
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে দাবদাহকে মৃদু, ৩৮ থেকে ৪০ হলে মাঝারি ও ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে তাকে তীব্র দাবদাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশে গতকাল তীব্র দাবদাহ বয়ে গেছে ঢাকা, খুলনা বিভাগের পুরো এলাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও পাবনার ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে গতকাল থেকে কিছু মেঘ ও জলীয় বাষ্প নিয়ে বাতাস বইতে শুরু করেছে। রাজধানী পর্যন্ত হালকা মেঘ এসেছে, আর্দ্রতা বেড়েছে। ফলে এখন গরমের সঙ্গে ঘামও হতে পারে। এই গরম ও ঘাম মানুষকে বেশি অসুস্থ করতে পারে।

স্বস্তির আশা ২৩ এপ্রিল থেকে
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলেছে, আজ সোমবার দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে রাতে গরম কিছুটা বাড়তে পারে। পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়, শেষের দিকে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে ২৩ এপ্রিল থেকে। তখন তাপমাত্রা কমে স্বস্তি নামবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


তীব্র দাবদাহের মাস এপ্রিল, শেষদিকে স্বস্তি

Update Time : ১০:২৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

দাবদাহের প্রচণ্ড গরমে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কোনো কোনো পরিবারে শিশুরা ঠান্ডা ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রবীণেরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সচ্ছলদের কেনা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বাইরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে গিয়ে সরকারের জ্বালানি ব্যয়ও বাড়ছে। ১৩ এপ্রিল রেকর্ড ১৫ হাজার ৩০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে কেনাবেচার ক্ষতি করছে গরম। দিনমজুর ও শ্রমিকেরা বেশি গরমের কারণে বাড়তি কাজ করতে পারছেন না। সবচেয়ে উদ্বেগের দিক হলো, দাবদাহ ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।

এখন মাঠে রয়েছে বোরো মৌসুমের ধান। এটিই দেশের চাল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মৌসুম। দাবদাহের কারণে ধানের চিটা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গড় তাপমাত্রা কতটা বেশি
দেশে সাধারণত মার্চ মাসে গরম শুরু হয়। আর বছরের সবচেয়ে উষ্ণ মাস এপ্রিল। এ বছর মার্চে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গরম ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এপ্রিলের দ্বিতীয় দিনে যশোর-চুয়াডাঙ্গা দিয়ে একটি দাবদাহ শুরু হয়। সেটি এখন দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় বিস্তৃত।

২ এপ্রিল থেকে দেশে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের টানা দাবদাহ সাধারণত দেখা যায় না।
এবারের এপ্রিলের দাবদাহের আরেকটি দিক হলো এর বিস্তৃতি বেশি। সাধারণত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলায় এপ্রিল মাসে দুই থেকে তিনটি দাবদাহ বয়ে যায়।

সেটাও তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। এবার এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে রংপুর বিভাগ ছাড়া সারা দেশেই মৃদু থেকে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে।

এপ্রিল মাসে সাধারণত দুই থেকে পাঁচটি কালবৈশাখী আঘাত হানে। সেই সঙ্গে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হয়। মাসের শুরুতে আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তাতে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা/মাঝারি এবং এক থেকে দুই দিন তীব্র কালবৈশাখীর আশঙ্কার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কালবৈশাখীর দেখা নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও বলেছিল, এ মাসে দুই থেকে তিনটি মৃদু/মাঝারি দাবদাহ বয়ে যেতে পারে এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। দেখা যাচ্ছে, আবহাওয়ার আচরণ ভিন্ন। এমনকি যে গরম পড়ছে, তার ধরনও স্বাভাবিক নয়।

কারণ, বাংলাদেশে গরমকালে বাতাসে আর্দ্রতা সাধারণত বেশি থাকে। এ বছর আর্দ্রতা খুবই কম দেখা যাচ্ছে। ফলে ঘাম হচ্ছে না, কিন্তু ঠোঁট ফাটছে, শরীর জ্বালাপোড়া করছে। বিগত দুই সপ্তাহ দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণত মরুভূমিতে দেখা যায়।

ঢাকায় গরম আরও বেড়েছে
রাজধানীর তাপমাত্রা গত শনিবার ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল, যা ছিল ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ১৯৬৫ সালে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। গতকাল রোববার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা আক্কু ওয়েদারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ঢাকায় গতকাল গরম অনুভূত হয়েছে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলাভূমি ও বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বেশি থাকলে সেখানে দাবদাহ বেশি দিন স্থায়ী হয় না। কারণ, দাবদাহে জলাভূমির পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। তা মেঘ তৈরি করে, বৃষ্টি নামায়। ফলে তাপমাত্রা কমে আসে। ঢাকার চারপাশের নদী, জলাভূমি, খাল ও সবুজ এলাকা কমছে। বিরূপ পরিস্থিতির এটাও কারণ।

আর্দ্রতা বাড়ছে, ঘাম বাড়বে
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে দাবদাহকে মৃদু, ৩৮ থেকে ৪০ হলে মাঝারি ও ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে তাকে তীব্র দাবদাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশে গতকাল তীব্র দাবদাহ বয়ে গেছে ঢাকা, খুলনা বিভাগের পুরো এলাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও পাবনার ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে গতকাল থেকে কিছু মেঘ ও জলীয় বাষ্প নিয়ে বাতাস বইতে শুরু করেছে। রাজধানী পর্যন্ত হালকা মেঘ এসেছে, আর্দ্রতা বেড়েছে। ফলে এখন গরমের সঙ্গে ঘামও হতে পারে। এই গরম ও ঘাম মানুষকে বেশি অসুস্থ করতে পারে।

স্বস্তির আশা ২৩ এপ্রিল থেকে
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলেছে, আজ সোমবার দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। তবে রাতে গরম কিছুটা বাড়তে পারে। পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়, শেষের দিকে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে ২৩ এপ্রিল থেকে। তখন তাপমাত্রা কমে স্বস্তি নামবে।