আলোচনায় গুরুত্ব পাবে সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকার

  • Update Time : ১০:৫৯:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩
  • / 130

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বৈঠক হতে যাচ্ছে। যেই বৈঠকে নির্বাচন এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।

আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে যাচ্ছে। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় দুপুরে এই বৈঠক হবে। এর আগে গত বছরের ৪ এপ্রিল দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ওয়াশিংটনে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছিল।

ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের ঢাকা সফরের সময়ও গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ যাতে অঙ্গীকার পূরণ করে, সে কথা বলে গেছেন।

ফলে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনায় এ প্রসঙ্গগুলো আবারও অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবেন-এমন আভাস মিলেছে। গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং মানবাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশ আগামী দিনগুলোতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে সম্পর্কে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিয়ে গেছেন আব্দুল মোমেন।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে আলোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি এবং অবস্থান তিনি তুলে ধরবেন।

ওয়াশিংটনে এবারের আলোচনায় আগামী নির্বাচনের বিষয়টি যে গুরুত্ব পাবে, সেটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন নিজেও স্বীকার করেছেন।

নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক বেশি সম্পৃক্ততা চায় বাংলাদেশ। ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা মসৃণ রাখতে হলে বাংলাদেশে অব্যাহত বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বাজার-সুবিধা নিয়েও আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়ের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক যুক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা জানানো হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে নির্বাচন, মানবাধিকার এবং সুশাসনের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম বন্ধ করার প্রসঙ্গ আলোচনায় আসতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারে এবং মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ আলোচনায় আসতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

বিশেষ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা এবং প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়গুলোও আসতে পারে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, জিএসপি পুনর্বহাল, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা ও প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার মতো বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় তুলে ধরা হবে।

এ ছাড়া আগামী মে মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফর নিয়েও আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ওই সফরে যাবেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আলোচনায় গুরুত্ব পাবে সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকার

Update Time : ১০:৫৯:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বৈঠক হতে যাচ্ছে। যেই বৈঠকে নির্বাচন এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।

আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে যাচ্ছে। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় দুপুরে এই বৈঠক হবে। এর আগে গত বছরের ৪ এপ্রিল দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ওয়াশিংটনে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছিল।

ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের ঢাকা সফরের সময়ও গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ যাতে অঙ্গীকার পূরণ করে, সে কথা বলে গেছেন।

ফলে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনায় এ প্রসঙ্গগুলো আবারও অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবেন-এমন আভাস মিলেছে। গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং মানবাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশ আগামী দিনগুলোতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে সম্পর্কে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিয়ে গেছেন আব্দুল মোমেন।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে আলোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি এবং অবস্থান তিনি তুলে ধরবেন।

ওয়াশিংটনে এবারের আলোচনায় আগামী নির্বাচনের বিষয়টি যে গুরুত্ব পাবে, সেটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন নিজেও স্বীকার করেছেন।

নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক বেশি সম্পৃক্ততা চায় বাংলাদেশ। ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা মসৃণ রাখতে হলে বাংলাদেশে অব্যাহত বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বাজার-সুবিধা নিয়েও আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়ের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক যুক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা জানানো হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে নির্বাচন, মানবাধিকার এবং সুশাসনের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম বন্ধ করার প্রসঙ্গ আলোচনায় আসতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো যাতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারে এবং মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ আলোচনায় আসতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

বিশেষ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা এবং প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়গুলোও আসতে পারে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, জিএসপি পুনর্বহাল, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা ও প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার মতো বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় তুলে ধরা হবে।

এ ছাড়া আগামী মে মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফর নিয়েও আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী ওই সফরে যাবেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।