অধিবেশন স্থগিত, উত্তাল মিছিলের ঠিকানা হোটেল পূর্বাণী
- Update Time : ১১:৫৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
- / 120
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ। পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করলেন। ক্ষোভে-বিক্ষোভে লাখো জনতাকে সঙ্গী করে বঙ্গবন্ধু ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলনের। এরপর থেকে ঘটতে থাকা সব ঘটনাই স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর আখ্যান।
অগ্নিঝরা পয়লা মার্চ। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক চলছিল হোটেল পূর্বানীতে। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা ৫ মিনিট। রেডিওতে ঘোষণা দেন আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান। ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন তিনি। মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
ইয়াহিয়া ঘোষণায় বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ আরও ক’টি দল ৩ মার্চের অধিবেশনে যোগ দিতে চায়নি। তাই অধিবেশন স্থগিত করা হলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপার্চায আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “এই ঘোষণায় বোঝা গেল বড় ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কারণ এর আগে থেকেই আমরা শুনছিলাম জুলফিকার আলী ভুট্টো হুমকি দিয়েছিলেন যেসব সংসদ সদস্য পূর্ব পাকিস্তানে যাবে তাদেরকে হত্যা করা হবে।”
জনসমুদ্রে পরিণত হয় ঢাকার রাজপথ। জগন্নাথ কলেজ ও কায়েদে আযম কলেজ অর্থাৎ আজকের সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা লাঠি নিয়ে মিছিল শুরু করে। আদমজী পাটকলের শ্রমিকেরা মিল বন্ধ করে রাস্তায় নামে। বন্ধ হয়ে যায় অফিস আদালত-দোকানপাট। তেজগাঁও বিমানবন্দরে বন্ধ হয়ে যায় বিমান ওঠানামা। উত্তাল ঢাকার খণ্ড-খণ্ড মিছিলের ঠিকানা তখন মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণী।
পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক শেষে শেখ মুজিব সাংবাদিক সম্মেলন করেন। উপস্থিত জনতাকে তিনি ধৈর্য ধারণ করতে বলেন। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশও দেন মুজিব।
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “সেদিন বঙ্গবন্ধু খুব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন। তিনি বললেন, আমরা শুনেছি এই ধরনের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। এর প্রতিবাদে আগামীকাল ঢাকা শহরে হরতাল আহ্বান করছি। এর পরেরদিন সারাদেশে হরতাল এবং আগামী ৭ মার্চে জনগণের উদ্দেশে আমার বক্তব্য রাখবো।”
সংবাদ প্রচারে বিধিনিষেধ দিয়ে গভীর রাতে অধ্যাদেশ জারি করেন তৎকালীন সামরিক আইন প্রশাসক।
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “সাংবাদিকরা বুঝতে পেরেছিলেন এই দেশে কিছু একটা হতে যাচ্ছে।”
দাবানলের মতো আগুন ছড়ায় দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়। গড়ে ওঠে দুর্বার আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন মুক্তিকামী মানুষের নেতা।