জেলহত্যা যজ্ঞে সাংবাদিকের ইন্ধন
- Update Time : ০৭:২১:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২
- / 287
জাফর ওয়াজেদ:
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ দেখেছে সপরিবারে জাতির পিতা এবং জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা। দেখেছে ক্ষমতার পালাবদল, সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা, হত্যাযজ্ঞ, রক্তপাত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিনাশী প্রক্রিয়া। কলংকময় নানা ঘটনায় প্লাবিত পঁচাত্তর বাঙালি জাতির জীবনেও এনে দিয়েছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অধিকাংশ বিদেশী সাংবাদিককে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের ৫ দিন পর ২০ আগস্ট কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিক ব্যাংকক থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। ২২ আগস্ট তাদের ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। ৪৮ ঘন্টা ঢাকা অবস্থানকালে তারা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বাইরে যেতে পারেননি।
আতিকুল আলমের ছড়ানো গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে মোশতাক এবং তার সহচর ১৫ আগস্টের হত্যাকারীরা জেলখানায় তাজউদ্দীনসহ ৪ জাতীয় নেতাকে হত্যা করে। আতিকুল আলম বানোয়াট কাহিনী প্রচার করে এই হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন যুগিয়েছেন, এমন অভিযোগ আসে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। জেলহত্যা মামলা শুরু হলে তাতে তার নামও উঠে আসে। আতিকুল আলম লন্ডনে পালিয়ে যান।
সামরিক বাহিনীর কথিত অভ্যুত্থান সম্পর্কিত খবরের অধিকাংশ স্থানীয় সাংবাদিক আতিকুল আলমের মারফতে পান। একই অবস্থা তৈরি হয় তিন নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার পূর্বাপর সময়ে। বিদেশী সাংবাদিকদের নির্ভর করতে হয় এই আতিকুল আলমের উপর। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর উপর গুলি নিক্ষেপের দশ মিনিট আগে আতিকুল আলম রয়টারে সংবাদ পাঠায় যে, ‘বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব নিহত হয়েছেন।’ এই তথ্য আগাম পাবার নিশ্চয়ই ছিল সূত্র। খুনিদের সঙ্গে যে তার সংযোগ ছিল এতে তা অনেকটাই স্পষ্ট।
১৯৭৫ সালের তিন নভেম্বর একদিকে জেলহত্যা অপরদিকে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। অভ্যুত্থানকারীরা তাদের সপক্ষে কোন প্রচার-প্রচারণা চালায়নি। বেতার কেন্দ্রেও ঘোষণা দেয়নি। ফলে গুজব আর গুজবে সয়লাব হয়ে পড়ে দেশ। খন্দকার মোশতাক তখনো ক্ষমতায়। খালেদ মোশাররফ সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। ‘রক্তপাত পরিহার করার উদ্দেশ্যে’ আপোস-আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করছিলেন খন্দকার মোশতাক চক্র। খালেদ মোশাররফ বিরোধী অন্যান্য শক্তিও দেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে দ্রুত যোগাযোগ করে পাল্টা অভ্যুত্থানের জন্য চেষ্টা করতে থাকে।
সে সময় জেনারেল ওসমানী সেনাবাহিনীতে কর্মরত সাবেক মুক্তিবাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের, জনৈক ‘বাচ্চু করিম’ পাকিস্তান প্রত্যাগত পাকিস্তানপন্থী সিপাহীদের, কর্নেল তাহের সেনাবাহিনীতে জাসদপন্থী সিপাহীদের এ জাতীয় অভ্যুত্থানের ব্যাপারে সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা চালাতে থাকেন। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গণচীন ও পাকিস্তানপন্থী শক্তিগুলো সর্বাত্মক অপপ্রচার তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছিলো। জাসদও এই প্রচারাভিযানে শামিল হয়। ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য শহর ও বন্দরে জাসদ একটার পর একটা প্রচারপত্র বিতরণ করতে থাকে যে- ’ভারতের প্ররোচনা ও অর্থায়নে খালেদ মোশাররফ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে’।
এমনও প্রচার করা হয় যে, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ‘বাকশাল’ নেতারা ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই অভ্যুত্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন। ‘১৫ আগস্টেও আতিকুল আলম ছিলেন রয়টার্স ও বিবিসি’র স্থানীয় সংবাদদাতা। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত বিদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করে আগস্টের ঘটনাবলী সম্পর্কে যে বিবরণ দেয়, তা তখন বিদেশীদের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল। বিদেশী সাংবাদিক লরেন্স লিফ শুলৎস বলেছিলেন, ‘ঢাকা অবস্থানকালে সাংবাদিকরা যে সংবাদ সংগ্রহ করেন, তার মূল সূত্র ছিল আতিকুল আলম’।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিদেশী সাংবাদিকদের বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা বার বার বাধাগ্রস্ত হয়। ২০ আগস্ট ব্যাংকক হয়ে আসা সাংবাদিকদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলী সম্পর্কে ব্রিফ করেন। বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের মূল সূত্র আতিকুল আলম। যেসব তথ্য দেন, তাই প্রচারিত হয়। যার মধ্যে সত্যতার লেশ ছিল নামমাত্র। আতিকুল আলম বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে গঠিত বিভিন্ন শাসকচক্রের পক্ষে প্রচারণা চালাবার দায়িত্বও পালন করেন সুনিপুণভাবে।
আতিকুল আলমের তথ্যসূত্রে ঢাকা থেকে পাঠানো খবরের বরাত দিয়ে পঁচাত্তরের নভেম্বরে মার্কিন ও বৃটিশ পত্রপত্রিকা প্রচার করতে থাকে যে, ‘নিহত হওয়ার আগে জেলখানায় আটক নেতারা খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান ঘটানোর পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ডেকে এনে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিলেন।’ লন্ডনের ‘অবজারভার’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ মুজিব হত্যার পেছনে কোনো বিদেশী হস্তক্ষেপ ছিল না। কিন্তু তিন নভেম্বরে খন্দকার মোশতাক বিরোধী অভ্যুত্থানের সমর্থনে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের চার মাইল ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো।’
বিভিন্ন বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত এসব খবরাখবর বিবিসি এবং ভয়েস অব আমেরিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। বাস্তবতায় দেখা যায়, দেশী-বিদেশী সুপরিকল্পিত এই সমস্ত প্রচারাভিযানের মোকাবেলায় রাজনৈতিক লক্ষ্য ও সম্পর্কহীন খালেদ মোশাররফ এবং তার সমর্থকদের কার্যকরী কোনো প্রচার তৎপরতাই ছিল না। ফলে জনগণ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে একতরফা প্রচারণায় স্বভাবতই সৃষ্টি হয় মারাত্মক বিভ্রান্তি।
এই বিভ্রান্তির সুযোগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে মঞ্চে ও নেপথ্যে সর্বাত্মক তৎপরতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে জাসদের গণবাহিনী। বাহিনী প্রধান কর্নেল তাহেরের সহায়তায় তারা সেনাবাহিনীতে ‘শ্রেণী সংগ্রাম ও বিপ্লব- এর মন্ত্র ছড়িয়ে দেয়। প্রচারপত্র বিলি করে। যাতে উল্লেখ ছিল, ‘অফিসাররা ক্ষমতা ও পদের লোভে অভ্যুত্থান ঘটাচ্ছে। আর প্রাণ দিচ্ছে সাধারণ সিপাহীরা। নিগৃহীত, অধিকারবঞ্চিত সিপাহীরা আর কামানের খোরাক হবে না। সিপাহী-জনতার ভাগ্য এক। তাই সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমেই ক্ষমতা দখল করতে হবে। সুতরাং বিপ্লবের জন্য, শ্রেণী সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হউন।’
আতিকুল আলম গণবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রচার চালান। ৭ নভেম্বর জাসদের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আতিকুল আলম পালিয়ে লন্ডন যায়। অভ্যুত্থানকারীদের পরাজয় হওয়ায় এবং কর্ণেল তাহেরের ছোট ভাই বেলালসহ অন্য যারা তাকে অনিষ্টকর সংবাদ প্রচারের জন্য শারীরিক নির্যাতনের ভয় দেখায়, তাদের গ্রেফতারের পর আতিকুল আলম ঢাকায় ফিরে আসেন। তখন হতে সে জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসনকে খোলাখুলিভাবে সমর্থন করতে শুরু করে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে আতিকুল আলমকে ১৯৭২ সালের গোড়ায় গ্রেফতার করা হয়। সে মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী প্রোপাগান্ডা চালাতো। গ্রেফতার হওয়ার পর সে দাবি করে, ’পাকিস্তানীদের পক্ষে কাজ করতে তাকে বাধ্য করা হয়’। বিনা বিচারে কয়েকমাস কারাবাসের পর সাংবাদিক এবিএম মূসা ও ফয়েজ আহমদ মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে তদ্বির করেন। ফলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলম মুক্তি পায়। মুক্ত হবার পর সে মুক্তিযুদ্ধপন্থী সাংবাদিক- শিল্পপতি আবিদুর রহমানের দৈনিক ‘দি পিপল’ পত্রিকায় যোগ দেয়। বিবিসি এবং রয়টার্সের সঙ্গে তার সম্পর্ক তখনো বজায় থাকে। বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৭২ সালের ২৭ জুন থেকে তিন জুলাই পর্যন্ত পাক-ভারত শীর্ষ সম্মেলন বসে সিমলায়। এই সম্মেলনে না যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে সতর্ক করে দেয়। কিন্তু সেসব নির্দেশ উপেক্ষা করে আতিকুল সিমলায় গিয়ে হাজির হয়। ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। সিমলা অবস্থানকালে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সে যোগাযোগ করে বলে অভিযোগ করা হয়। মাসাধিককাল জেলে থাকার পর বাংলাদেশ সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ বহু দেনদরবার ও তদ্বির করে তার মুক্তির ব্যবস্থা করে।
১৯৭৫ সালে জেল হত্যার ইন্ধনদাতা ছিলেন আতিকুল আলম। প্রচার করেন যে, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ দখল করে তাজউদ্দীনকে প্রধানমন্ত্রী করবে’। বিদেশী সাংবাদিকদেরও এই তথ্য দেন। ৪ ও ৫ নভেম্বর আতিকুল বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী ক‚টনৈতিকমহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি তথাকথিত গোপনীয় চিঠি প্রদর্শন করে। চিঠিটি ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাজউদ্দীন আহমদ লিখেছেন’ বলে সে দাবি করে।
ঢাকায় নিয়োজিত ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনের কাছে লেখা চিঠিতে নাকি অভ্যুত্থান পরিচালনের পরিকল্পনা এবং এ সম্পর্কিত আয়োজনের কথা উল্লেখ করা হয়। জার্মান দূতাবাসের কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের চিঠিখানি দেখিয়ে আতিকুল অবিচলিতভাবে দাবি করে, ’তাজউদ্দীনের স্বহস্তে লিখিত এই চিঠি’। যা খালেদ মোশাররফ কর্তৃক সম্পন্ন অভ্যুত্থানের সঙ্গে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জড়িত বলে প্রমাণ করে। বিদেশী কূটনীতিকদের আতিকুল জানায়, ভারত সমর্থক তাজউদ্দীন আহমদকে জেল থেকে বের করে প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত করাই এই অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য।
আতিকুলের এই চিঠি প্রদর্শনের ফলে অভ্যুত্থানের সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ জড়িত বলে দূতাবাস এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার তিন বছর পর লন্ডনে সাংবাদিক লরেন্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আতিকুল জানায়, ‘তাজউদ্দীনের চিঠি যেখান থেকে সে পেয়েছে, সেখানে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এবং চিঠির সত্যতা প্রমাণ করার জন্য সে কোন কপি রাখেনি। তা সত্ত্বেও চিঠিটি একান্তই খাঁটি’ বলে সে দাবি করে। আতিকুলের কর্মকাণ্ডের সমালোচক সাংবাদিক সহকর্মীরা দাবি করেন, পুরো ব্যাপারটি একটি অত্যন্ত বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে লন্ডনে সাক্ষাৎকালে আতিকুল আলমকে লরেন্স বলেন, ‘১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের অভ্যুত্থান সম্পর্কিত তারই কল্পিত কাহিনী বলে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক মহল অভিযোগ করেছে’। আতিকুলের ভাষ্য ছিল, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া’। ঘটনাবলীর তাৎপর্য তখন যা মনে হয়েছিল তা ২০ ও ২১ আগস্ট হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবরুদ্ধ সাংবাদিক সহকর্মীদের কাছে সে ব্যাখ্যা করেছিল।
আতিকুল আলমের ছড়ানো গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে মোশতাক এবং তার সহচর ১৫ আগস্টের হত্যাকারীরা জেলখানায় তাজউদ্দীনসহ ৪ জাতীয় নেতাকে হত্যা করে। আতিকুল আলম বানোয়াট কাহিনী প্রচার করে এই হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন যুগিয়েছেন, এমন অভিযোগ আসে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। জেলহত্যা মামলা শুরু হলে তাতে তার নামও উঠে আসে। আতিকুল আলম লন্ডনে পালিয়ে যান। ২০০১ সালে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবারও দেশ ত্যাগ করেন। ২০১৪ সালে সে ঢাকায় ফিরে ‘অর্থনীতি প্রতিদিন’ নামে একটি দৈনিকের ডিক্লারেশন নেয় ও প্রথমে সম্পাদক ও পরে প্রধান সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৭৫-এর ঘটনার ইন্ধনদাতা আতিকুলকে জিয়াউর রহমান গুরুত্ব দেন। তাই সে জিয়ার সমস্ত কর্মকাণ্ডের পক্ষাবলম্বন করে। এমন কি সে ১৯৭৭ সালে সামরিক আদালতে পাইকারীভাবে প্রাণদণ্ডদানের যৌক্তিকতা প্রদর্শন করে প্রকাশ্য বক্তব্য পেশ করে। ১৯৭৭ সালের অক্টোবরে জিয়ার সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আতিকুল জিয়ার সামরিক শাসনের প্রকাশ্য সমর্থকের ভূমিকা গ্রহণ করে। সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ পত্রিকার ৩০ অক্টোবর সংখ্যায় স্বনামে লিখিত এক নিবন্ধে আতিকুল ‘এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’-এর বিরুদ্ধে ‘অনুচিত সহানুভূতি’ প্রদর্শনের অভিযোগ উত্থাপন করে।
সামরিক আদালত কর্তৃক প্রাণদণ্ডের যৌক্তিকতা প্রদর্শন করে আতিকুল প্রশ্ন রাখেন, ‘বাংলাদেশের কি করা উচিত ছিল, তারা বেকসুর মুক্তি পাক এবং পুনরায় প্রচণ্ডতর আঘাত হানুক?’ বাংলাদেশে সামরিক শাসন অবসানের দাবি করায় আতিকুল ভারতীয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণকেও আক্রমণ করে। ‘হলিডে’ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয় নিবন্ধের উপসংহারে আতিকুল ‘রাষ্ট্রপতি’ জিয়াউর রহমানকে রাজনৈতিক অঙ্গনে হাজির হয়ে নিজস্ব রাজনৈতিক দল ঠনের জন্য প্রকাশ্যে আবেদন জানায়। এর কিছুকাল পর জিয়া প্রথমে ‘জাগদল’ নামে রাজনৈতিক ফ্রন্ট ও পরে ‘বিএনপি’ গঠন করে। জেলহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত হলে জানা যেতো আতিকুল আলমের ইন্ধনদানের মাজেজা এবং সেই সঙ্গে তার সহকর্মী ও সহমর্মীদের ভূমিকাও।
লেখক : মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক।