সুপারী চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের

  • Update Time : ১২:৩০:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২
  • / 262

রোকন মিয়া, কুড়িগ্রাম:

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।উৎপাদনে কম খরচ এবং লাভের অঙ্ক বেশি। বছর শেষে হাতে আসছে এক সাথে মোটা অঙ্কের টাকা। সুপারিতে লাভ বেশি জানার পর অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বসতবাড়ির পেছনে বা বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে উঁচু জায়গায় অনেকেই সুপারির বাগান লাগিয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। এতদিন এই অঞ্চলে বাড়ির সাথে লাগা জায়গায় সুপারির বাগান করার রেওয়াজ ছিল। এবার সেই রেওয়াজ ভেঙে বাড়ি থেকে দূরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান করছেন।

সারা বছরের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সুপারি বিক্রি করত। সুপারির প্রতি উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুর্বলতা অনেক পুরনো। আত্মীয় এলে প্রথম পান সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করার রীতি এখনও প্রচলিত। বাংলার লোকসাহিত্য ও গানে পান দিয়ে প্রিয়জনকে প্রথম আপ্যয়ন করার উপমা ছড়িয়ে আছে।

সুপারি গাছ ছাড়া ফুলবাড়ী অঞ্চলে কোন বাড়ি কল্পনা করা যায় না। বর্তমানে ভালো লাভ হওয়ায় বাগান লাগিয়ে সুপারির বাণিজ্যিক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। সুপারি গাছ সাধারণত বছরে একবার ফল দেয়। এক বিঘা জমিতে ১৫০ থেকে ২০০ সুপারি গাছের বাগান লাগানো যায়। প্রতি বিঘার বাগান থেকে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার সুপারি বিক্রয় করা হয়। চারা রোপণসহ গাছে ফল ধরা পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে।

সুপারি গাছ ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত গাছ থেকে সুপারি পাড়া হয়। কাঁচা, পাকা, মজা ও শুকনা অবস্থায় সুপারি বাজারজাত করা হয়। বর্তমানে সুপারির চারাও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাগানে সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে চারাও বড় করা হয়। প্রতিটি চারার মূল্য বয়স অনুযায়ী ৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বর্তমানে উপজেলার কৃষকরা সুপারি বাগান করার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।বড়ভিটা গ্রামের বড় কৃষক প্রভাষক কামরুজ্জামান লাভলু বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে সুপারির বাগান করেছেন। আগামী বছর থেকে বাগানে ফল ধরা শুরু হবে।

একই গ্রামের শাহানুর, গোলাম মোস্তফা, মোজাফফ হোসেন প্রত্যেকে এক বিঘা ও বান চন্দ্র ৩ বিঘায় সুপারি বাগান করেছেন।

এলাকার চিকিৎসক এনামুল হক বলেন, তার বাড়ির আশেপাশের পতিত জমিতে ১০০ গাছ লাগিয়েছেন। পরিপূর্ণ ফল ধরা শুরু হলে যতটি গাছ বছরে তত হাজার টাকা। সুপারির বাগানে বছরে একবার ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করা হয়। তবে বাণিজ্যিক বাগান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হয়।ফুলবাড়ীর উৎপাদিত সুপারির মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাহিদা রয়েছে। ভালো লাভে দিন দিন বেড়েই চলছে সুপারি বাগানের সংখ্যা।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. লিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ফুলবাড়ীতে প্রায় ১০৫ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান লাগানো হয়েছে। ভালো ফলন এবং রোগ-বালাইয়ের জন্য বাগান মালিকদের সবসময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সুপারী চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের

Update Time : ১২:৩০:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২

রোকন মিয়া, কুড়িগ্রাম:

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।উৎপাদনে কম খরচ এবং লাভের অঙ্ক বেশি। বছর শেষে হাতে আসছে এক সাথে মোটা অঙ্কের টাকা। সুপারিতে লাভ বেশি জানার পর অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

বসতবাড়ির পেছনে বা বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে উঁচু জায়গায় অনেকেই সুপারির বাগান লাগিয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। এতদিন এই অঞ্চলে বাড়ির সাথে লাগা জায়গায় সুপারির বাগান করার রেওয়াজ ছিল। এবার সেই রেওয়াজ ভেঙে বাড়ি থেকে দূরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান করছেন।

সারা বছরের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সুপারি বিক্রি করত। সুপারির প্রতি উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুর্বলতা অনেক পুরনো। আত্মীয় এলে প্রথম পান সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করার রীতি এখনও প্রচলিত। বাংলার লোকসাহিত্য ও গানে পান দিয়ে প্রিয়জনকে প্রথম আপ্যয়ন করার উপমা ছড়িয়ে আছে।

সুপারি গাছ ছাড়া ফুলবাড়ী অঞ্চলে কোন বাড়ি কল্পনা করা যায় না। বর্তমানে ভালো লাভ হওয়ায় বাগান লাগিয়ে সুপারির বাণিজ্যিক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। সুপারি গাছ সাধারণত বছরে একবার ফল দেয়। এক বিঘা জমিতে ১৫০ থেকে ২০০ সুপারি গাছের বাগান লাগানো যায়। প্রতি বিঘার বাগান থেকে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার সুপারি বিক্রয় করা হয়। চারা রোপণসহ গাছে ফল ধরা পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগে।

সুপারি গাছ ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত গাছ থেকে সুপারি পাড়া হয়। কাঁচা, পাকা, মজা ও শুকনা অবস্থায় সুপারি বাজারজাত করা হয়। বর্তমানে সুপারির চারাও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বাগানে সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে চারাও বড় করা হয়। প্রতিটি চারার মূল্য বয়স অনুযায়ী ৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বর্তমানে উপজেলার কৃষকরা সুপারি বাগান করার দিকে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।বড়ভিটা গ্রামের বড় কৃষক প্রভাষক কামরুজ্জামান লাভলু বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে সুপারির বাগান করেছেন। আগামী বছর থেকে বাগানে ফল ধরা শুরু হবে।

একই গ্রামের শাহানুর, গোলাম মোস্তফা, মোজাফফ হোসেন প্রত্যেকে এক বিঘা ও বান চন্দ্র ৩ বিঘায় সুপারি বাগান করেছেন।

এলাকার চিকিৎসক এনামুল হক বলেন, তার বাড়ির আশেপাশের পতিত জমিতে ১০০ গাছ লাগিয়েছেন। পরিপূর্ণ ফল ধরা শুরু হলে যতটি গাছ বছরে তত হাজার টাকা। সুপারির বাগানে বছরে একবার ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করা হয়। তবে বাণিজ্যিক বাগান সবসময় পরিষ্কার রাখতে হয়।ফুলবাড়ীর উৎপাদিত সুপারির মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাহিদা রয়েছে। ভালো লাভে দিন দিন বেড়েই চলছে সুপারি বাগানের সংখ্যা।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. লিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ফুলবাড়ীতে প্রায় ১০৫ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান লাগানো হয়েছে। ভালো ফলন এবং রোগ-বালাইয়ের জন্য বাগান মালিকদের সবসময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।