মগের মুল্লুক: মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
- Update Time : ১২:৫২:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জানুয়ারী ২০২২
- / 330
মগের মুল্লুক’ কথাটি নেতিবাচক শব্দ হিসেবেই গ্রহণ করে মানুষ। মধ্যযুগে মগদের অনাচার-অত্যাচারে জর্জরিত ছিল ‘সুবহে বাঙ্গালা‘মগের মুল্লুক’ কথাটি নেতিবাচক শব্দ হিসেবেই গ্রহণ করে মানুষ। মধ্যযুগে মগদের অনাচার-অত্যাচারে জর্জরিত ছিল ‘সুবহে বাঙ্গালা’। মগদস্যুদের উৎপাতে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল বিশেষত চট্টগ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। প্রায় ৪০০ বছর আগের কথা; মধ্যযুগে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মগদের ভীষণ উপদ্রব ছিল। মগদের অনাচার-অত্যাচারে জর্জরিত ছিল ‘সুবহে বাঙ্গালা’। সে সময়ে মগদস্যুদের উৎপাতে বাংলাদেশের উপকূল বিশেষত চট্টগ্রাম অঞ্চল প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। ১৬৬৬ সালে বিখ্যাত শায়েস্তা খান তাদের শায়েস্তা করে চট্টগ্রাম জয়ের পর; মগদের সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসান ঘটে।
ইতিহাসে যাদের ‘মগ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে তারা ঠিক ‘মগ’ নয়;রাখাইন,রাক্ষাইন,আরাকানি। এই আরাকানের কথা বাঙলা সাহিত্যের মধ্যযুগের ইতিহাসে রয়েছে–রোসাঙ্গের রাজসভায় বাঙালা সাহিত্য। মধ্যযুগের কবি আলাওল তার পদ্মাবতী,দৌলত কাজি সতী ময়না লোর চন্দ্রাণী লিখেছেন আরাকানে বসে। মাগন ঠাকুর,শাহ মুহম্মদ ছগীর ত আরাকানের রাজসভারই বাঙালী কবি। আরাকানিদের সাথে বাঙালিদের যোগাযোগ হাজার বছরের বাণিজ্যসূত্রে,রাজকর্মসূত্রে সর্বোপরি ভাটি বাঙলার অভিন্ন জলহাওয়ার কারণে। তবু কেন পড়শিদের দিকেই তাদের এতো আক্রোশ,এই হার্মাদি আক্রমণ?
আগ্রাসী মুগলরা যখন বাঙলার প্রায় পুরোটা দখল করে ফেলেছে,নৌযুদ্ধে পারদর্শী আরাকানিরা ভাবলো মুগলদের আর বেশিদূর আগাতে দেয়া যাবে না,নিজেদের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশে বাঁধা দেবার জন্যই মুগল বাঙলায় এইসব অনাচার অত্যাচার। তাদের কাছে বাঙলা তখন মুগল ভূখণ্ডের অংশমাত্র। বাঙলার এই যে প্রাচীন রাজধানী ‘ঢাকা’,এই ঢাকা’য় মুগলরা রাজধানী বানালো ১৬০৮-১৬১০ সালে। রাজমহল থেকে মুগলাই বাঙলার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরের মূল কারণটি ছিল আরাকানের শক্তিশালী নৌবহর, তাদের দস্যুপনার হাত থেকে বাঙলার জনপদকে রেহাই দেয়া। পর্তুগীজ জলদস্যুদের আখড়া আরাকানের অংশ চট্টগ্রাম মানে দেয়াঙ বন্দর দখল করতে নৌযুদ্ধে দুর্বল মুগলদের ১৬৬৪ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
বাঙলার বারো ভূঁইয়া নামে যাঁরা ইতিহাসে স্থান পেয়েছেন,সেই ঈশা খাঁ,কেদারা রায়…তাঁরা মূলত এই আরাকানিদের করদ রাজা ছিলেন। ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কথা জানি,ওটা কোনো হিন্দু মন্দির নয়,আরাকানি মন্দির। ধানমণ্ডির ঈদ গাঁ বানিয়েছেন মঙ্গত রায় বা মুকুত রায়,যিনি ঘাতক নরপদিগ্যির তাড়া খেয়ে বাঙলায় এসে মুগলদের শরণ নিয়ে মুসলমান হবেন,তার মুসলমানী নাম আবুল কাশেম আত্তাবাতাই। হাজার পাঁচেক বিজিত আরাকানির এই দলপতি ‘আবুল’ওরফে ‘বলা’কে তৎকালিন মুগল ঢাকার পাঁচ মাইল উত্তরে একটি জঙ্গলে থাকতে দেয় মুগলরা। যা আজকের মগবাজার।
অনেকের মতে মগ মানেই আরাকানী আর মগের মুল্লুক মানে আরকান রাজ্য। ভৌগোলিকভাবে আরাকান বা বর্তমানের মায়ানমার রাজ্যটি হলো মগেদের দেশ, মানে আক্ষরিক অর্থে মায়ানমার হলো মগের মুলুক। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে বঙ্গভূমি ছিল খুব সমৃদ্ধশালী। তখনকার সময়ের আরব ভূগোলবিদদের ব্যাখ্যায় যে বন্দরটির কথা বারবার উঠে এসেছে, তা আসলে চট্টগ্রাম বন্দর।আর এই বন্দরকে কেন্দ্র করেই মূলত বহু বণিক, যোদ্ধা তথা উপনিবেশিক জাতি বসতি গড়ে তোলে। এই বন্দরই ছিল বাংলার প্রধান সমুদ্রবন্দর।
আরাকানীরা একসময় গর্বভরে নিজেদের মগ হিসেবে পরিচয় দিত। গর্বের কারন হলো তারা নিজেদের বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির পীঠস্থান মগধ থেকে আগত রাজবংশের উত্তরসূরী মনে করতো। আসলে হিন্দু ধর্মের পুনঃ জাগরনের কালে ৮ম শতাব্দীতে মগধ থেকে হীনযানী বৌদ্ধগন বিতারিত হয়ে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যান,তাদের একটি অংশ আরাকানে এসে ঠাঁই নেয়। এরা নৃ-তাত্বিকভাবে মঙ্গোলিয়ান ছিলেন না,ছিলেন ইন্দো ইউরোপীয়ান বা আর্য বংশদ্ভূত। তাদেরই প্ররোচনায় আরাকানে হিন্দু চন্দ্র রাজবংশের পতন ঘটে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন মঙ্গোলীয় রেসের নতুন বৌদ্ধ রাজবংশ,ফলতঃ নতুন বৌদ্ধ রাজতন্ত্রে এই মাগধী বৌদ্ধরা উচ্চ আসন লাভ করেন,কিন্তু আরাকানে ইন্দো ইউরোপীয় ভাষার পতন ঘটে,উত্থান ঘটে তিব্বতী-বার্মান ভাষার। কালের পরিক্রমায় স্বল্পসংখ্যক মাগধী বৌদ্ধ বৃহত্তর মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে বিলীন হয়ে যান,কিন্তু সমগ্র আরাকানী বৌদ্ধ সমাজকে তাঁরা মগ কৌলিন্যে অভিষিক্ত করে যান।
আরাকানীদের ইতিহাসে শেষ আরাকানী রাজবংশ তথা কিংডম অব মারুক-উ হলো আরাকানীদের স্বর্নযুগ, সময়কাল ১৪৩০-১৭৮৫ খৃষ্টাব্দ। এর মধ্যে ১৫৮২ খৃঃ থেকে ১৬৬৫ খৃঃ হলো সুপার স্বর্নযুগ। এই সময়কালের মগ রাজারা হার্মাদ(পর্তুজীজ) জলদ্যস্যুদের সহায়তায় নিজেরাও একটি মগ দস্যুবাহিনী গড়ে তুলে মধ্য ও দক্ষিন বাংলায় লুন্ঠন ও দস্যুতার এক অবর্ননীয় নজীর সৃষ্টি করেছিল। বাংলার এ অঞ্চল থেকে সম্পদ ও মানুষ লুন্ঠন করে মগ রাজারা সমৃদ্ধির শিখরে আরোহন করেছিল,আর বাংলার বিস্তীর্ন অঞ্চলকে বিরান ভূমিতে পরিনত করেছিল। বাংলার অসংখ্য নরনারীকে তারা দাস হিসেবে নিয়ে গিয়েছিল,আর তাদের অধিকৃত চট্টগ্রাম,নোয়াখালী,বরিশালে স্থাপন করেছিল চরম নৈরাজ্যকর মগের মুল্লুক।
অবশেষে ১৬৬৬ সালে মোগল সুবেদার শায়েস্তা খাঁ তাদের সম্পূর্নরুপে দমন করে চট্টগ্রাম অধিকার করলে বাংলায় মগের মুল্লুকের অবসান ঘটে। চট্টগ্রাম ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে মগ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ পালিয়ে চলে যায় আরাকানে,নিজেদের কলংক আড়াল করার নিমিত্তে তারা এত সাধের মগ নামটি বিসর্জন দিয়ে রাখাইন এবং মারমা নাম গ্রহন করে।
মগস্পর্শে বাঙালির নারী-পুরুষ:
বাংলার বহু সম্ভ্রান্ত পরিবারও দেখা যায় মগদের দৌরাত্ম থেকে রেহাই পায়নি। সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলার রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ-সমাজে এক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল,তাকে ‘মগদোষ’বলা হয়। মগদস্যুরা পর্তুগীজদিগের সঙ্গে যোগ দিয়া দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি করিয়াছিল তাহা অতি ভয়াবহ। তাহাদের স্পর্শদোষে অনেক ব্রাহ্মণ পরিবার এখনও পতিত হইয়া আছেন। বিক্রমপুরের মগ-ব্রাহ্মণদের সংখ্যা নিতান্ত অল্প নহে। মগ ও পর্ত্তুগীজদের ঔরসজাত অনেক সন্তানে এখনও বঙ্গদেশ পরিপূর্ণ। পর্তুগীজ হার্মাদ,মগ জলদস্যুরা শৎগঙ,বাকলা (বরিশাল, বাকরগঞ্জ),সন্দীপ,নোয়াখালির নারী-শিশু-যুবক-বৃদ্ধ হিন্দু-মুসলিম লোকেদের ধরে বিক্রি করে। এই কেনা-বেচায় দেশীয় বণিকরাও অংশ নেয়। বর্ধমান,হুগলি, মেদিনীপুর-নবদ্বীপের সম্পন্ন পরিবারের লোকেরা অবিবাহিত পুরুষের জন্য চন্দননগরের বিবিরহাট থেকে অপহৃত দাসীদের কিনে আনে।
বস্তুত সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাংলার উপকূলীয় এলাকায় মগ-ফিরিঙ্গীদের অব্যাহত দৌরাত্ম্য সমাজ জীবনে এক অভিশাপরূপে আবির্ভূত হয়। বিশেষ করে হিন্দু সমাজে নারীদের অবস্থা করুণ পর্যায়ে উপনীত হয়। যে সকল স্ত্রীলোক কোন না কোন ভাবে মগ-ফিরিঙ্গীর সংস্পর্শে আসত তারা সমাজে চরম লাঞ্ছনা ভোগ করত। হিন্দু সমাজের এই নিষ্ঠুরতা প্রসঙ্গে সতীশচন্দ্র মিত্র উল্লেখ করেন,যেসব স্ত্রীলোক পালাইবার কালে কোন প্রকারে ধৃত বা স্পর্শিত মাত্র হইত,তাহারা কোন গতিকে উদ্ধার পাইলেও সমাজের শাসনে জাতিচ্যুত বা সমাজবর্জিত হইয়া থাকিত। তাহাদের স্বামী বা পিতা নিঃসন্দেহে তাহাদিগকে পবিত্র জানিয়া স্নেহের কোলে টানিয়া লইলেও,নির্দয় হিন্দু সমাজের রুক্ষ কটাক্ষ তাহাদের প্রতি কিছুমাত্র সহানুভূতি দেখাইত না। পর্ত্তুগীজগণ তাদের নির্বিচার ও অবাধ ব্যাভিচার দ্বারা বাঙ্গলাদেশে কতকগুলি ব্যাধির সৃষ্টি করিয়াছিল। ভাবপ্রকাশে ফিরিঙ্গী ব্যাধি নামক রোগের উল্লেখ আছে। এই দুঃসাধ্য পীড়ার ফলে গলিত কুষ্ঠাদি জন্মে। গন্ধঃরোগ ফিরঙ্গোহয়ং জায়তে দেহিনাং ধ্রুবমঃ
ষোড়শ শতাব্দীর বঙ্গে পর্তুগীজদের না ছিল সরকার,না ছিল বসতি,না ছিল দুর্গ। এ সম্পর্কে জনৈক লেখক মন্তব্য করেছেন,তাদের কোন আইন,পুলিশ ও ধর্মানুরাগ না থাকায় তারা বঙ্গদেশের স্থানীয় অধিবাসীদের মতই জীবনযাপন করত। পর্তুগীজরা হুগলিতে ব্যবসা করত লাভজনক ও জমজমাট। হুগলিকে ওরা বলত গোলিন বা পোর্টে পিকুইনো অর্থাৎ ছোট বন্দর, আর চট্টগ্রামকে বলত পোর্টে গ্রান্ডি বা বড় বন্দর। অনেক দুঃসাহসিক পর্তুগীজ নাবিক সপরিবারে বাস করত ব্যান্ডেল-এ। তাদের ব্যবসা ছিল লবন ও বস্ত্রের। জালিয়া নৌকা বা ফয়েস্ট-এ মাল বোঝাই করে তারা চালান দিত চট্টগ্রামের দিয়াঙ্গাঁ অথবা মালাবার উপকূলের পর্তুগীজ বসতি এলাকায়। অন্যরা দেশীয় রাজাদের ভাড়াটে সৈন্য হিসাবে যুদ্ধ করত মোগল ও আফগানদের বিরুদ্ধে। এই ভাড়াটে সৈন্যরা বিবেচিত হতো বিদ্রোহী হিসাবে। কেননা দেশবাসী পর্তুগীজ সৈন্যদের তারা সহায়তা করতো না অথবা পর্তুগীজ সরকারকে তারা করও দিত না। তাদের আচার আচরণের জন্য তারা ছিল কুখ্যাত। এদের অধিকাংশই ছিল দলত্যাগী সৈন্য নয়ত স্বধর্ম ত্যাগী পাদ্রী আর নয়ত লাঠে ওঠা ব্যবসায়ী, কিংবা সর্বশ্রেণীর পর্তুগীজ যারা নাকি বঙ্গদেশে এসে গর্হিত জীবনযাপন করছে। এদের না ছিল ধর্ম, না ছিল ধর্মানুরাগ। এদের কাণ্ডকারখানায় খ্রীস্টানদের এতই বদনাম হয় যে, যাজক প্রতিষ্ঠান হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। শেষে গোয়ার আর্চ বিশপ ১৫৯৭ খ্রী. শেষদিকে বঙ্গদেশে দু’জন জেসুইট পদ্রির একটি প্রতিনিধি পাঠান।
১৫৯৯ সালে পাদরি ফার্নানদেজ ও পাদরি সোসা চট্টগ্রামে যান ও ওখান থেকে পর্তুগীজদের প্রধান এলাকা দিয়াঙ্গাতে আসেন। এখানে ওঁরা একটা থানা দেখেছেন চট্টগ্রাম রক্ষার জন্য। কিন্তু ওখানে তখন কোনও গির্জা ছিল না। আরাকান রাজা ওদের গির্জা বানানোর অধিকার দেন। দিয়াঙ্গা,কারঞ্জা ও চট্টগ্রামে ওঁরা ধর্মপ্রচার শুরু করেন। ১৬০২ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে এই পাদরীরা বাংলায় ৬২ হাজার ৬০৬ জনকে খ্রিস্টান করেছে। ১৬০২ সালের পর দুইজন ডোমিনিকান পাদরি দিয়াঙ্গা পৌঁছলে ওখানকার অধিবাসীরা একটা গির্জা ও থাকার বাড়ি তৈরি করে দেয়। কিন্তু এর পরই আরাকান ও পর্তুগিজদের মধ্যে গোলমাল হলে আরাকানের রাজা পাদরিদের দিয়াঙ্গা ও চট্টগ্রামের জেলে পাঠান। ওঁদের চট্টগ্রামের বাড়িও নষ্ট করে দেয়া হয়। কিছুদিন পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও,আরাকান রাজা পাদরিদের পায়ে শিকল বেঁধে চট্টগ্রামে আটকে রাখে।
সেই সময়কার মগদস্যুদের হিংস্রতার বয়ান মেলে একটি গীতিকায়:-
‘সোনাবালি ছেনান করে শানো বান্ধা রে ঘাটে
তাহা দেখে মগম রাজারে নাও লাগাই লো তটে রে
আমি ক্যানবা আইলাম ঘাটে।
এক ডুব দুই ডুব তিন ডুবের কালে
চুল ধরিয়া মগম রাজারে তারে উঠায় নৌকার পরে রে।’
মগদস্যুদের চরম নৃশংসতা
‘ফিরিঙ্গির দেশখান বাহে কর্ণধারে
রাত্রিতে বহিয়া যায় হার্মাদের ডরে।’
বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠালগ্নে বারোভূঁইয়ারা দুর্বল হয়ে পড়লে মগ ও ফিরিঙ্গি জলদস্যুদের অত্যাচার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। মুঘল আমলেই মগরা তিন রতিনবার ঢাকা লুণ্ঠন করে। যতীন্দ্রমোহন রায়ের ঢাকার ইতিহাসে লেখা হয়েছে, ‘নবাব খানজাদ খাঁ এরূপ ভীরু স্বভারের লোক ছিলেন যে, তিনি মগের ভয়ে ঢাকা নগরীতে অবস্থান করিতেন না। মোল্লা মুরশিদ ও হাকিম হায়দারকে ঢাকায় প্রতিনিধি নিযুক্ত করিয়া তিনি রাজমহলে অবস্থান করিতেন। মগরা ঢাকা আক্রমণ করলে এই দুই প্রতিনিধি নগরী রক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। যতীন্দ্রমোহন লিখেছেন, ‘মগী সৈন্যের তাণ্ডব নৃত্যে ঢাকা শহর টলটলায়মান হইয়াছিল। উহারা নগর ভস্মসাৎ করিয়া প্রচুর ধনরাশি লুণ্ঠন ও আবালবৃদ্ধ নির্বিশেষে বহুলোক বন্দী করিয়া চট্টগ্রাম প্রদেশে লইয়া যায়।’ইতিহাসে তিনবার ঢাকা লুণ্ঠনের উল্লেখ থাকলেও কেবল ১৬২০ সালে হামলার বিবরণ পাওয়া যায়। অন্যদিকে ঢাকা নগরীর মগবাজার নামের সঙ্গে মিশে আছে এই মগদেরই স্মৃতি। তবে তারা এই জায়গাটি দখল করে বসেছিল, তা নয়।
লেখক: মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর, ঢাকা।