দক্ষিণ এশিয়ায় এলপিজির দাম সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৩:১৬:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১৭৫ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ এশিয়ায় ভোক্তপর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ১২ কেজি এলপিজির দাম ১৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৮৪ টাকা করা হয়। এর আগের মাসে (আগস্ট) এ দাম ছিল এক হাজার ১৪০ টাকা।

দেশের বাজারে বিইআরসির নির্ধারিত দামে কোথাও এলপিজি বিক্রি হয় না। বরং বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কোম্পানিভেদে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। এ দাম আরও বাড়তে পারে বলে এরই মধ্যে গ্রাহকদের জানিয়ে দিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোয় বিইআরসির ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম মূল্যে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। এ ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর থেকে বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাটসহ) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১০৭ টাকা ১ পয়সা। এই হিসাবে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হয়েছে।

এলপিজির দামের মধ্যে ১২ কেজিতে ডিস্ট্রিবিউটরের চার্জ ৫০ টাকা ও খুচরা বিক্রেতার কমিশন ৪৫ টাকা ধরা আছে। কিন্তু এ কমিশনকে অপর্যাপ্ত মনে করেন খুচরা বিক্রেতারা। তাদের বক্তব্য, সরকারি নির্ধারিত রেটে অনেক সময় কোম্পানি গ্যাস দেয় না। আবার কিছু কোম্পানি সরকার নির্ধারিত দর রাখলেও ডিলাররা বেশি কমিশন নেন। এতে খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দামে কিনতে হয়। এ জন্য এলপিজির দাম বিইআরসির নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি পড়ে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে সাধারণত সরকারের নির্ধারিত দামেই বিক্রি হয় এলপিজি। তবে শহরভেদে অনেক সময় এলপিজির দামের মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় এলপিজির দাম সবচেয়ে কম শ্রীলংকায়। দেশটির রাজধানী কলম্বোয় সাড়ে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম দুই হাজার ৯৮২ শ্রীলংকান রুপি। এতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম পড়ে দুই হাজার ৮৬২ দশমিক ৭২ রুপি বা ৯৮৩ টাকা ৫৮ পয়সা। তবে শ্রীলংকার অন্যান্য শহরে এলপিজির দাম একই রকম নয়। দেশটির আরেক শহর কিলিনোচিচিতে সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম তিন হাজার ২২৯ শ্রীলংকান রুপি, যা সর্বোচ্চ। এতে ১২ কেজির দাম পড়ে ৩ হাজার ৯৯ দশমিক ৮৪ রুপি বা এক হাজার ৬৫ টাকা।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ১৪ দশমিক ২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৯০৩ রুপি। এতে ১২ কেজি এলপিজির দাম পড়ে ৭৬৩ দশমিক ১০ রুপি বা এক হাজার ১৩ টাকা ৯৮ পয়সা। তবে দেশটির বিভিন্ন শহরেও এলপিজির দাম ভিন্ন ভিন্ন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম পাটনায়। সেখানে ১৪ দশমিক ২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম এক হাজার এক রুপি। এতে ১২ কেজি এলপিজির দাম পড়ে ৮৪৫ দশমিক ৯২ রুপি বা এক হাজার ১২৪ টাকা, যা বাংলাদেশের সরকারি রেটের চেয়ে কম।

গত ২ সেপ্টেম্বর এলপিজির দাম বাড়ানো হয়েছে পাকিস্তানে। দেশটিতে বর্তমানে ১১ দশমিক ৮ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম দুই হাজার ৮৩৩ দশমিক ৪৯ রুপি। এতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম পড়ে দুই হাজার ৮৮১ দশমিক ৫১ রুপি বা এক হাজার ৩৪ টাকা ১৪ পয়সা। নেপালে গত ১৬ আগস্ট এলপিজির দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এতে ১৪ দশমিক ২ কেজি এলপিজির দাম দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৬০ নেপালি রুপি। ফলে ১২ কেজি এলপিজির দাম পড়ে এক হাজার ৪০২ দশমিক ৮১ রুপি বা এক হাজার ১৬৫ টাকা ৯৩ পয়সা।

এদিকে সম্প্রতি ভুটানে কমানো হয়েছে এলপিজির দাম। প্রতি ১৪ দশমিক ২ কেজি সিলিন্ডারে এলপিজির দাম ২০০ রুপি কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার রুপি। এতে ১২ কেজি এলপিজির দাম পড়ে ৮৪৫ দশমিক ০৭ রুপি বা এক হাজার ১২৩ টাকা ৭৭ পয়সা।

গ্লোবাল পেট্রল প্রাইস ডটকমের তথ্যমতে, গত ২৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি লিটার এলপিজির দাম দাঁড়ায় ৭০ সেন্ট বা প্রায় ৭৭ টাকা। এতে ১২ লিটার এলপিজির দাম পড়বে ৯২৪ টাকা। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বাংলাদেশে সরকার নির্ধারিত এলপিজির দাম প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

দক্ষিণ এশিয়ায় এলপিজির দাম সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে

Update Time : ০৩:১৬:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ এশিয়ায় ভোক্তপর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ১২ কেজি এলপিজির দাম ১৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৮৪ টাকা করা হয়। এর আগের মাসে (আগস্ট) এ দাম ছিল এক হাজার ১৪০ টাকা।

দেশের বাজারে বিইআরসির নির্ধারিত দামে কোথাও এলপিজি বিক্রি হয় না। বরং বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কোম্পানিভেদে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। এ দাম আরও বাড়তে পারে বলে এরই মধ্যে গ্রাহকদের জানিয়ে দিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোয় বিইআরসির ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম মূল্যে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। এ ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর থেকে বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাটসহ) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১০৭ টাকা ১ পয়সা। এই হিসাবে বিভিন্ন আকারের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হয়েছে।

এলপিজির দামের মধ্যে ১২ কেজিতে ডিস্ট্রিবিউটরের চার্জ ৫০ টাকা ও খুচরা বিক্রেতার কমিশন ৪৫ টাকা ধরা আছে। কিন্তু এ কমিশনকে অপর্যাপ্ত মনে করেন খুচরা বিক্রেতারা। তাদের বক্তব্য, সরকারি নির্ধারিত রেটে অনেক সময় কোম্পানি গ্যাস দেয় না। আবার কিছু কোম্পানি সরকার নির্ধারিত দর রাখলেও ডিলাররা বেশি কমিশন নেন। এতে খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দামে কিনতে হয়। এ জন্য এলপিজির দাম বিইআরসির নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি পড়ে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে সাধারণত সরকারের নির্ধারিত দামেই বিক্রি হয় এলপিজি। তবে শহরভেদে অনেক সময় এলপিজির দামের মধ্যে পার্থক্য হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় এলপিজির দাম সবচেয়ে কম শ্রীলংকায়। দেশটির রাজধানী কলম্বোয় সাড়ে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম দুই হাজার ৯৮২ শ্রীলংকান রুপি। এতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম পড়ে দুই হাজার ৮৬২ দশমিক ৭২ রুপি বা ৯৮৩ টাকা ৫৮ পয়সা। তবে শ্রীলংকার অন্যান্য শহরে এলপিজির দাম একই রকম নয়। দেশটির আরেক শহর কিলিনোচিচিতে সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম তিন হাজার ২২৯ শ্রীলংকান রুপি, যা সর্বোচ্চ। এতে ১২ কেজির দাম পড়ে ৩ হাজার ৯৯ দশমিক ৮৪ রুপি বা এক হাজার ৬৫ টাকা।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ১৪ দশমিক ২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৯০৩ রুপি। এতে ১২ কেজি এলপিজির দাম পড়ে ৭৬৩ দশমিক ১০ রুপি বা এক হাজার ১৩ টাকা ৯৮ পয়সা। তবে দেশটির বিভিন্ন শহরেও এলপিজির দাম ভিন্ন ভিন্ন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম পাটনায়। সেখানে ১৪ দশমিক ২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম এক হাজার এক রুপি। এতে ১২ কেজি এলপিজির দাম পড়ে ৮৪৫ দশমিক ৯২ রুপি বা এক হাজার ১২৪ টাকা, যা বাংলাদেশের সরকারি রেটের চেয়ে কম।

গত ২ সেপ্টেম্বর এলপিজির দাম বাড়ানো হয়েছে পাকিস্তানে। দেশটিতে বর্তমানে ১১ দশমিক ৮ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম দুই হাজার ৮৩৩ দশমিক ৪৯ রুপি। এতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম পড়ে দুই হাজার ৮৮১ দশমিক ৫১ রুপি বা এক হাজার ৩৪ টাকা ১৪ পয়সা। নেপালে গত ১৬ আগস্ট এলপিজির দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এতে ১৪ দশমিক ২ কেজি এলপিজির দাম দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৬০ নেপালি রুপি। ফলে ১২ কেজি এলপিজির দাম পড়ে এক হাজার ৪০২ দশমিক ৮১ রুপি বা এক হাজার ১৬৫ টাকা ৯৩ পয়সা।

এদিকে সম্প্রতি ভুটানে কমানো হয়েছে এলপিজির দাম। প্রতি ১৪ দশমিক ২ কেজি সিলিন্ডারে এলপিজির দাম ২০০ রুপি কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার রুপি। এতে ১২ কেজি এলপিজির দাম পড়ে ৮৪৫ দশমিক ০৭ রুপি বা এক হাজার ১২৩ টাকা ৭৭ পয়সা।

গ্লোবাল পেট্রল প্রাইস ডটকমের তথ্যমতে, গত ২৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি লিটার এলপিজির দাম দাঁড়ায় ৭০ সেন্ট বা প্রায় ৭৭ টাকা। এতে ১২ লিটার এলপিজির দাম পড়বে ৯২৪ টাকা। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বাংলাদেশে সরকার নির্ধারিত এলপিজির দাম প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি।