গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ জনসেবার প্রতিশ্রুতি ডিএমপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৩৪:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • / ২৭ Time View

দেশজুড়ে অস্বাভাবিক গরম পড়ায় চলতি বছর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগেভাগেই সাপের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় সাপেকাটা ও এতে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সাপের দংশনে মৃত্যুর সংখ্যা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও পুর্নবাসনে কাজ করা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা এমন পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে সাপের কামড় থেকে আত্মরক্ষার নানা কলাকৌশল সম্পর্কে ধারণা দেন।

মঙ্গলবার বিকালে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ (এসআরটিবিডি) এর সহযোগিতায় ডিএমপির দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রচারণায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহআলী ও দারুস সালাম থানা এবং এর অন্তর্গত পুলিশ ফাঁড়ির বিভিন্ন পদমর্যাদার কমকর্তাসহ মিরপুরের স্থানীয় শতাধিক মানুষ উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

সাপ উদ্ধার ও উপযুক্ত পরিবেশে অবমুক্ত করার কাজের সাথে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, বেশকিছু প্রজাতির সাপের প্রজনন মৌসুম নিকটবর্তী হওয়ায় এবং গরমে আরামদায়ক পরিবেশের সন্ধানে সাপ জলাজঙ্গল ছেড়ে ফাঁকা ঘরবাড়ি ও বাসগৃহসংলগ্ন ছায়াযুক্ত পরিবেশে চলে আসছে। এতে মানুষের সঙ্গে সাপের সংঘাত ও সাপেকাটার ঘটনা বেড়ে গেছে বলে তাদের অভিমত।

সচেতনামূলক প্রচারাভিযানে এসআরটিবিডি’র বক্তারা বলেন, মানুষের বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ থেকেও সাপ উদ্ধারের আহবান পাওয়া যায়। পুলিশ সদস্যগন সাপের দংশনে করনীয় বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান অর্জন করলে গ্রাম ও শহরে বসবাসকারী মানুষকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে জীবন রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। ব্যাপকভাবে কমে আসবে সাপের দংশনে মৃত্যুর সংখ্যা।

প্রতিবছর সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন উল্লেখ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ণরত এসব তরুন স্বেচ্ছাসেবীরা সাপে কাটা রোগীকে ওঝার কাছে না পাঠিয়ে অনতিবিলম্বে সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

এসআরটিবিডি’র স্বেচ্ছাসেবী মোঃ জোবায়দুর রহমান, মেহেদি বলেন, সাপে কাটার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে রোগীর শরীরে এন্টিভেনম প্রয়োগ করার মাধ্যমে মৃত্যুহার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

সাপ সম্পর্কিত প্রাচীন মতবাদ ও ভুল ধারনা থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে মৃত্যুর হার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে অভিমত খাদিজাতুল কোবরা বেলী নামের নারী স্বেচ্ছাসেবীর।

সাপের প্রজাতির ধারণা দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী আল আমিন হোসেন জানান, দাঁড়াস সাপ, ঘরমনি, জলধোড়া, দুধরাজ, লাউডগা, কালনাগিনী, হেলে প্রভৃতি উপকারী ও বিষহীন সাপের পাশাপাশি পদ্ম গোখরা, খৈয়ে গোখরা, রাসেল ভাইপারস (চন্দ্রবোড়া), কালাচ, শঙ্খিনী প্রভৃতি বিষাক্ত প্রজাতির সাপের দেখা মিলে।

সম্প্রতি বিষযুক্ত রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করে এসআরটিবি’র স্বেচ্ছাসেবী সাদ আহমেদ অপু বলেন, এই সাপকে অনেকে অজগরের বাচ্চা ভেবে হেলাফেলা করেন। অসচেতনতার কারনে রাসেল ভাইপারস সাপের কামড়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষাসহ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি, চোরা শিকারী ও বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করার আহবান জানান।

মিরপুর ডিভিশনের অধীন দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এতে দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল উদ্দিন, শাহআলী থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) মোঃ হাবিবুর রহমান, বিভিন্ন ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশ সদস্য সহ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি সাব্বির আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ জনসেবার প্রতিশ্রুতি ডিএমপির

Update Time : ০৯:৩৪:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

দেশজুড়ে অস্বাভাবিক গরম পড়ায় চলতি বছর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগেভাগেই সাপের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় সাপেকাটা ও এতে মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সাপের দংশনে মৃত্যুর সংখ্যা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও পুর্নবাসনে কাজ করা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবীরা এমন পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে সাপের কামড় থেকে আত্মরক্ষার নানা কলাকৌশল সম্পর্কে ধারণা দেন।

মঙ্গলবার বিকালে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ (এসআরটিবিডি) এর সহযোগিতায় ডিএমপির দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রচারণায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহআলী ও দারুস সালাম থানা এবং এর অন্তর্গত পুলিশ ফাঁড়ির বিভিন্ন পদমর্যাদার কমকর্তাসহ মিরপুরের স্থানীয় শতাধিক মানুষ উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

সাপ উদ্ধার ও উপযুক্ত পরিবেশে অবমুক্ত করার কাজের সাথে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, বেশকিছু প্রজাতির সাপের প্রজনন মৌসুম নিকটবর্তী হওয়ায় এবং গরমে আরামদায়ক পরিবেশের সন্ধানে সাপ জলাজঙ্গল ছেড়ে ফাঁকা ঘরবাড়ি ও বাসগৃহসংলগ্ন ছায়াযুক্ত পরিবেশে চলে আসছে। এতে মানুষের সঙ্গে সাপের সংঘাত ও সাপেকাটার ঘটনা বেড়ে গেছে বলে তাদের অভিমত।

সচেতনামূলক প্রচারাভিযানে এসআরটিবিডি’র বক্তারা বলেন, মানুষের বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ থেকেও সাপ উদ্ধারের আহবান পাওয়া যায়। পুলিশ সদস্যগন সাপের দংশনে করনীয় বিষয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান অর্জন করলে গ্রাম ও শহরে বসবাসকারী মানুষকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে জীবন রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। ব্যাপকভাবে কমে আসবে সাপের দংশনে মৃত্যুর সংখ্যা।

প্রতিবছর সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন উল্লেখ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ণরত এসব তরুন স্বেচ্ছাসেবীরা সাপে কাটা রোগীকে ওঝার কাছে না পাঠিয়ে অনতিবিলম্বে সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

এসআরটিবিডি’র স্বেচ্ছাসেবী মোঃ জোবায়দুর রহমান, মেহেদি বলেন, সাপে কাটার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে রোগীর শরীরে এন্টিভেনম প্রয়োগ করার মাধ্যমে মৃত্যুহার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

সাপ সম্পর্কিত প্রাচীন মতবাদ ও ভুল ধারনা থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে মৃত্যুর হার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে অভিমত খাদিজাতুল কোবরা বেলী নামের নারী স্বেচ্ছাসেবীর।

সাপের প্রজাতির ধারণা দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী আল আমিন হোসেন জানান, দাঁড়াস সাপ, ঘরমনি, জলধোড়া, দুধরাজ, লাউডগা, কালনাগিনী, হেলে প্রভৃতি উপকারী ও বিষহীন সাপের পাশাপাশি পদ্ম গোখরা, খৈয়ে গোখরা, রাসেল ভাইপারস (চন্দ্রবোড়া), কালাচ, শঙ্খিনী প্রভৃতি বিষাক্ত প্রজাতির সাপের দেখা মিলে।

সম্প্রতি বিষযুক্ত রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করে এসআরটিবি’র স্বেচ্ছাসেবী সাদ আহমেদ অপু বলেন, এই সাপকে অনেকে অজগরের বাচ্চা ভেবে হেলাফেলা করেন। অসচেতনতার কারনে রাসেল ভাইপারস সাপের কামড়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য রক্ষাসহ বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি, চোরা শিকারী ও বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করার আহবান জানান।

মিরপুর ডিভিশনের অধীন দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এতে দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল উদ্দিন, শাহআলী থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) মোঃ হাবিবুর রহমান, বিভিন্ন ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশ সদস্য সহ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি সাব্বির আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।