গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকিরকে মনোনয়ন না দিতে ১৬ নেতার চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:৪০:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৩
  • / ১০২ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নৌকার টিকিটে মনোনয়নপত্র চূড়ান্তের শেষ সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি লিখিত আবেদন করেছেন ওই আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৬ নেতা।

প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত, মাদকাসক্ত, ভূমিদস্যুসহ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ আনেন তারা। তাকে মনোনয়ন না দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সই রয়েছে লিখিত আবেদনে। যারা সই করেছেন তারা সবাই দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

অভিযোগে প্রতিমন্ত্রীর পরিবার এলাকায় মাদকব্যবসা ও চোরাকারবারী নিয়ন্ত্রণ করে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগপত্রটি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর গত বুধবার (২২ নভেম্বর) দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে সই করা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদকের হাতে আসা অভিযোগ পত্রের অনুলিপিতে দেখা গেছে, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে স্বাক্ষরকারীরা দাবি করেন‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগটিতে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার স্বাক্ষর রয়েছে। জাকির হোসেন নিজে একজন মাদকসেবী। তার পরিবার দিয়ে এলাকায় মাদকব্যবসা ও চোরাকারবারী নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলেও এ অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাতে আরও বলা হয়, প্রতিমন্ত্রীর পরিবারের অনেকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় জাকির হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার অনেক চাকরি প্রার্থীর কাছে টাকা নিয়ে চাকরি দেননি। এতে হাজার হাজার পরিবার পথে বসেছে। এসব কারণে ওই আসনের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ জাকির হোসেনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে দলীয় নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে বিব্রত হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পার্লামেন্টারি বোর্ড ও দলীয় সভাপতির প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে নৌকা মার্কায় জাকির হোসেন ব্যতিত আওয়ামী লীগের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আসনটি দলীয় সভাপতিকে উপহার দেবেন।

আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিউল আলম, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপকমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সহ ১৬ নেতাকর্মী।

অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার বলেন, উল্লেখিত অভিযোগুলো সবই সত্য। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষর করে তা দলীয় প্রধান বরাবর পাঠিয়েছি।

স্বাক্ষরকারী রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, জাকির সাহেবের বিরুদ্ধে বঙ্গমাতার নামে জমি দখলসহ উল্লেখ করা সকল অভিযোগ সত্য। সত্য না হলে আমরা স্বাক্ষর করতাম না।

রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, অভিযোগপত্রের প্রত্যেকটি অভিযোগ সত্য। মানুষ তার ও তার পরিবারের ওপর এতটাই অতিষ্ট যে তাকে মনোনয়ন দিলে মানুষ নৌকায় ভোট দিবে না বলে প্রকাশ্যে বলছে। স্বাক্ষর করা একাধিক নেতা প্রতিমন্ত্রীকে মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন।

চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম লিচু বলেন, অভিযোগপত্রের স্বাক্ষরটি আমি দেইনি। তবে অভিযোগপত্রের সকল অভিযোগ সত্য। আমিও একমত।

এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার (২২ নভেম্বর) রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মুঠোফোনে অসংখ্যবার কল করলেও ফোনটি নম্বরটি বন্ধ দেখায়। হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ ও কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এর আগে তফসিলের আগে নৌকায় ভোট চেয়ে তার নামে সাঁটানো পোস্টারের বিষয়ে কথা বলতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বেশ কিছুদিন থেকে তার ব্যবহৃত একটি নম্বর বন্ধ দেখাচ্ছে। ফলে তার মন্তব্য জানা যায়নি হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকিরকে মনোনয়ন না দিতে ১৬ নেতার চিঠি

Update Time : ১০:৪০:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নৌকার টিকিটে মনোনয়নপত্র চূড়ান্তের শেষ সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি লিখিত আবেদন করেছেন ওই আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৬ নেতা।

প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত, মাদকাসক্ত, ভূমিদস্যুসহ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ আনেন তারা। তাকে মনোনয়ন না দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সই রয়েছে লিখিত আবেদনে। যারা সই করেছেন তারা সবাই দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

অভিযোগে প্রতিমন্ত্রীর পরিবার এলাকায় মাদকব্যবসা ও চোরাকারবারী নিয়ন্ত্রণ করে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগপত্রটি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর গত বুধবার (২২ নভেম্বর) দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে সই করা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদকের হাতে আসা অভিযোগ পত্রের অনুলিপিতে দেখা গেছে, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে স্বাক্ষরকারীরা দাবি করেন‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগটিতে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার স্বাক্ষর রয়েছে। জাকির হোসেন নিজে একজন মাদকসেবী। তার পরিবার দিয়ে এলাকায় মাদকব্যবসা ও চোরাকারবারী নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলেও এ অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাতে আরও বলা হয়, প্রতিমন্ত্রীর পরিবারের অনেকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় জাকির হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার অনেক চাকরি প্রার্থীর কাছে টাকা নিয়ে চাকরি দেননি। এতে হাজার হাজার পরিবার পথে বসেছে। এসব কারণে ওই আসনের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ জাকির হোসেনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে দলীয় নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে বিব্রত হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পার্লামেন্টারি বোর্ড ও দলীয় সভাপতির প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে নৌকা মার্কায় জাকির হোসেন ব্যতিত আওয়ামী লীগের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আসনটি দলীয় সভাপতিকে উপহার দেবেন।

আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিউল আলম, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপকমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সহ ১৬ নেতাকর্মী।

অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার বলেন, উল্লেখিত অভিযোগুলো সবই সত্য। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষর করে তা দলীয় প্রধান বরাবর পাঠিয়েছি।

স্বাক্ষরকারী রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, জাকির সাহেবের বিরুদ্ধে বঙ্গমাতার নামে জমি দখলসহ উল্লেখ করা সকল অভিযোগ সত্য। সত্য না হলে আমরা স্বাক্ষর করতাম না।

রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, অভিযোগপত্রের প্রত্যেকটি অভিযোগ সত্য। মানুষ তার ও তার পরিবারের ওপর এতটাই অতিষ্ট যে তাকে মনোনয়ন দিলে মানুষ নৌকায় ভোট দিবে না বলে প্রকাশ্যে বলছে। স্বাক্ষর করা একাধিক নেতা প্রতিমন্ত্রীকে মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন।

চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম লিচু বলেন, অভিযোগপত্রের স্বাক্ষরটি আমি দেইনি। তবে অভিযোগপত্রের সকল অভিযোগ সত্য। আমিও একমত।

এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার (২২ নভেম্বর) রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মুঠোফোনে অসংখ্যবার কল করলেও ফোনটি নম্বরটি বন্ধ দেখায়। হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ ও কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এর আগে তফসিলের আগে নৌকায় ভোট চেয়ে তার নামে সাঁটানো পোস্টারের বিষয়ে কথা বলতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বেশ কিছুদিন থেকে তার ব্যবহৃত একটি নম্বর বন্ধ দেখাচ্ছে। ফলে তার মন্তব্য জানা যায়নি হয়নি।