ইসলামে নারীর অধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৬:৪৬:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ মার্চ ২০২১
  • / ১৯২ Time View
মাহমুদুল হক জালীস:

ইসলামের শুরুর যুগে আরবের সামাজিক ও নৈতিক অবস্থা এত নিম্নস্তরে ছিল যে, কন্যা সন্তানের জন্ম ছিল আরব সমাজে অভিশাপ স্বরূপ। এ অভিশাপ দূর করার জন্য পিতা তার কন্যাকে জীবন্ত কবর দিত। ইসলাম এ ঘৃণ্যতম অবস্থা হতে নারী জাতিকে কল্যাণময়ী ও পূণ্যময়ী রূপ দিয়ে গৌরবের সর্বোচ্চ উচ্চ আসনে উন্নত করেছেন।

মোট কথা এ কথা দ্যর্থহীনভাবে বলা যায়, ইসলাম জাহেলি যুগে এসে নারীকে অনন্য মর্যাদায় সমাসীন করেছে। আবার নারী জাতির প্রতি বৈরি আচরণকারীদের দিয়েছে কঠোর হুশিয়ারি। ইসলামের মতো নারীর এ মর্যাদা অন্য কোনো ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠী দিতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেন,  ‘হে ঈমানদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং তাদেরকে আটকে রেখো না। যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ, তার কিয়দংশ নিয়ে নাও, কিন্তু তারা যদি কোন প্রকার অশ্লীলতা করে! নারীদের সঙ্গে সদভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ সুরা নিসা,আয়াত ১৯।

সমাজের নারীদেরকে পুরুষের মতো মূল্যায়ন করার জন্য কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তারা হচ্ছে তোমাদের জন্যে পোশাক এবং তোমরা হচ্ছ তাদের জন্যে পোশাক।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৭।

নারী-পুরুষের মধ্যে আমলের প্রতিদানের দিক থেকেও কোন পার্থক্য নেই। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘পুরুষ বা স্ত্রী যে লোক নেক আমল করবে ঈমানদার হয়ে সে বেহেশতে দাখিল হতে পারবে, এ ব্যাপারে কারো প্রতি এক বিন্দু জুলুম করা হবে না।’ সুরা নিসা,আয়াত ১২৪।

স্বামী স্ত্রীর একজনের ওপরে অন্যজনের অধিকার রয়েছে। স্ত্রীর যেমন হক রয়েছে তেমনি স্বামীরও হক রয়েছে। কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্ত্রীদেরও তেমন অধিকার রয়েছে যেমন স্বামীদের রয়েছে তাদের ওপর এবং তা যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।’ সুরা বাকারা,আয়াত ২২৮।

যখন পৃথিবীতে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া অপরাধ ছিল তখন ইসলাম এসে কন্যা সন্তানের মর্যাদা বর্ণনা করেছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকে বা তিনটা বোন থাকে বা দুটি কন্যা থাকে বা দুটি বোন থাকে; আর সে তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে ও তাদের ব্যাপারে (অন্তরে) আল্লাহর ভয় রেখে কাজ করে; তার বিনিময় সে চিরস্থায়ী জান্নাতে পৌঁছে যাবে।’  তিরমিজি।

নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে ইসলাম উদ্বুদ্ধ করেছে। এমনকি ভালো ব্যবহার করার জন্য নবিজি উম্মতদের থেকে প্রতিজ্ঞাও নিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা নারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করার ব্যাপারে ওসিয়ত গ্রহণ কর।’ বুখারি, হাদিস নং ৩৩৩১।

অন্য হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।’ সুনানে তিরমিজি ৩৮৯৫।

এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামে নারীদের মর্যাদার কথা লক্ষ্য রেখেছে।

লেখক: মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ইসলামে নারীর অধিকার

Update Time : ০৬:৪৬:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ মার্চ ২০২১
মাহমুদুল হক জালীস:

ইসলামের শুরুর যুগে আরবের সামাজিক ও নৈতিক অবস্থা এত নিম্নস্তরে ছিল যে, কন্যা সন্তানের জন্ম ছিল আরব সমাজে অভিশাপ স্বরূপ। এ অভিশাপ দূর করার জন্য পিতা তার কন্যাকে জীবন্ত কবর দিত। ইসলাম এ ঘৃণ্যতম অবস্থা হতে নারী জাতিকে কল্যাণময়ী ও পূণ্যময়ী রূপ দিয়ে গৌরবের সর্বোচ্চ উচ্চ আসনে উন্নত করেছেন।

মোট কথা এ কথা দ্যর্থহীনভাবে বলা যায়, ইসলাম জাহেলি যুগে এসে নারীকে অনন্য মর্যাদায় সমাসীন করেছে। আবার নারী জাতির প্রতি বৈরি আচরণকারীদের দিয়েছে কঠোর হুশিয়ারি। ইসলামের মতো নারীর এ মর্যাদা অন্য কোনো ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠী দিতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ বলেন,  ‘হে ঈমানদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং তাদেরকে আটকে রেখো না। যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ, তার কিয়দংশ নিয়ে নাও, কিন্তু তারা যদি কোন প্রকার অশ্লীলতা করে! নারীদের সঙ্গে সদভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ সুরা নিসা,আয়াত ১৯।

সমাজের নারীদেরকে পুরুষের মতো মূল্যায়ন করার জন্য কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তারা হচ্ছে তোমাদের জন্যে পোশাক এবং তোমরা হচ্ছ তাদের জন্যে পোশাক।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৭।

নারী-পুরুষের মধ্যে আমলের প্রতিদানের দিক থেকেও কোন পার্থক্য নেই। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘পুরুষ বা স্ত্রী যে লোক নেক আমল করবে ঈমানদার হয়ে সে বেহেশতে দাখিল হতে পারবে, এ ব্যাপারে কারো প্রতি এক বিন্দু জুলুম করা হবে না।’ সুরা নিসা,আয়াত ১২৪।

স্বামী স্ত্রীর একজনের ওপরে অন্যজনের অধিকার রয়েছে। স্ত্রীর যেমন হক রয়েছে তেমনি স্বামীরও হক রয়েছে। কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্ত্রীদেরও তেমন অধিকার রয়েছে যেমন স্বামীদের রয়েছে তাদের ওপর এবং তা যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।’ সুরা বাকারা,আয়াত ২২৮।

যখন পৃথিবীতে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া অপরাধ ছিল তখন ইসলাম এসে কন্যা সন্তানের মর্যাদা বর্ণনা করেছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকে বা তিনটা বোন থাকে বা দুটি কন্যা থাকে বা দুটি বোন থাকে; আর সে তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে ও তাদের ব্যাপারে (অন্তরে) আল্লাহর ভয় রেখে কাজ করে; তার বিনিময় সে চিরস্থায়ী জান্নাতে পৌঁছে যাবে।’  তিরমিজি।

নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে ইসলাম উদ্বুদ্ধ করেছে। এমনকি ভালো ব্যবহার করার জন্য নবিজি উম্মতদের থেকে প্রতিজ্ঞাও নিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা নারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করার ব্যাপারে ওসিয়ত গ্রহণ কর।’ বুখারি, হাদিস নং ৩৩৩১।

অন্য হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।’ সুনানে তিরমিজি ৩৮৯৫।

এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামে নারীদের মর্যাদার কথা লক্ষ্য রেখেছে।

লেখক: মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।