প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তামিমের সময়টা কেমন ছিলো?

  • Update Time : ০৭:১৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩
  • / 156

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তামিমের সময়টা কেমন ছিলো?
হঠাৎ করেই টাইগার ক্রিকেটে ঝড়ের খবর। ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছে ক্ষুদেবার্তা পাঠান দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার ও ওপেনার তামিম ইকবাল। কথা বলবেন তিনি। সবার বুঝতে অসুবিধা হয় না কী ঘটতে যাচ্ছে। তবে তারপরও আসল ঘটনা আঁচ করতে পারেনি অনেকে।

বেশিরভাগের ধারনা ছিলো অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন তামিম। কিন্তু চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের টাওয়ার ইন হোটেলে কথা বলতে শুরু করার পর যখন চোখের জল মুছতে মুছতে তামিম জানিয়ে দিলেন, শুধু অধিনায়কত্বই নয়, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও ছেড়ে দেয়ার, তখন বাজ পড়ে সবার ওপর।

এরপর পানি বহুদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে লাখো কোটি টাইগার ভক্তরা। সামাজিক মাধ্যমে তামিমকে ফেরার জন্য আসতে লাখো লাখো অনুরোধ। বিসিবি সভাপতিসহ অনেকে চেষ্টা করেন তামিমের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না।

নেপথ্য মাঠে নামেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না তামিমের এভাবে অবসরে চলে যাওয়া। বিষয়টি গড়ালো দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

তামিমকে গণভবনে ডেকে পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী। তামিমকে সঙ্গে নিয়েই গণভবনে প্রবেশে করেন মাশরাফী। প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসিদ্ধ আন্তরিকতা আর আপ্যায়নে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক বড় সংকটকে নিমিষেই সমাধান করে দেন। কেটে যায় সব ধরনের অনিশ্চয়তা।

গণভবনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তামিম সময় কাটিয়েছেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তামিমের স্ত্রী আয়েশা, মাশরাফী আর বিসিবি প্রধান পাপন। গণভবন থেকে বেরিয়ে তামিম নিজেই জানান অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়ার। আর পাপন জানান তার স্বস্তির কথা।

তামিমকে ঘিরে সব সংকটের আপাত সমাধান হলে ক্রিকেটাঙ্গনে নেমে আসে স্বস্তির বাতাস। তবে সবার কাছে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিলো, গণভবনের ভেতরে কি ঘটেছিলো, সেই দিকে। কিছুটা দেরিতে হলেও তামিম ইকবাল নিজেই জানিয়েছেন সেই কথা গণমাধ্যমকে।

এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনেকবার দেখা হলেও এবারের দেখা হবার বিষয়টিতে অন্যরকম উল্লেখ করে তামিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা তাকে মুগ্ধ করেছে। এবার তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আয়েশা। স্ত্রীকে খেলা দেখতে মাঠে নিয়ে যান না বলে তামিমকে বকেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তামিম ইকবাল বলেন, আয়েশাকে মাঠে নিয়ে যাই না, খেলা দেখতে নিয়ে যাই না বলে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বকাও দিলেন বেশ! পরে আয়েশাকে তার (প্রধানমন্ত্রী) ফোন নম্বর দিয়ে বললেন, এরপর যদি তামিমের মাথায় কোনো উল্টাপাল্টা ভাবনা আসে, তুমি সরাসরি আমাকে মেসেজ দেবে আর ওকে নিয়ে আসবে আমার কাছে।

তামিম জানান, কক্ষে পা দেওয়ামাত্র প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, কি তামিম, কী সব পাগলামি নাকি করছো! এসব করলে তো চলবে না। সবকিছু মাথা থেকে সরিয়ে ফেলো। তামিম আরও বলেন, তিনি সব সময় এতো আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলেন, কোনো জবাব থাকে না। আমি শুধু হাসলাম।

তামিম যোগ করেন, তারপর কথা চলল দীর্ঘক্ষণ। শুরুতে মাশরাফী ভাইয়ের সামনে আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে আলাদা করে কথা বলেছেন, সেখানে শুধু আমি আর আয়েশা ছিলাম। পাপন ভাই আসার পরও একসঙ্গে সবার কথা হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা এই ওপেনার আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুই ঘণ্টার বেশি সময় মনে হয় আলাদা করেই কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। আমার জীবনের এটি অনেক বড় স্মরণীয় একটি ঘটনা। ওনার কথা ফেলে দেয়ার কোনো সাহস আমার নেই। প্রধানমন্ত্রীকে না বলা যায় না।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তামিমের সময়টা কেমন ছিলো?

Update Time : ০৭:১৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তামিমের সময়টা কেমন ছিলো?
হঠাৎ করেই টাইগার ক্রিকেটে ঝড়ের খবর। ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছে ক্ষুদেবার্তা পাঠান দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার ও ওপেনার তামিম ইকবাল। কথা বলবেন তিনি। সবার বুঝতে অসুবিধা হয় না কী ঘটতে যাচ্ছে। তবে তারপরও আসল ঘটনা আঁচ করতে পারেনি অনেকে।

বেশিরভাগের ধারনা ছিলো অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন তামিম। কিন্তু চট্টগ্রামের চট্টগ্রামের টাওয়ার ইন হোটেলে কথা বলতে শুরু করার পর যখন চোখের জল মুছতে মুছতে তামিম জানিয়ে দিলেন, শুধু অধিনায়কত্বই নয়, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও ছেড়ে দেয়ার, তখন বাজ পড়ে সবার ওপর।

এরপর পানি বহুদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে লাখো কোটি টাইগার ভক্তরা। সামাজিক মাধ্যমে তামিমকে ফেরার জন্য আসতে লাখো লাখো অনুরোধ। বিসিবি সভাপতিসহ অনেকে চেষ্টা করেন তামিমের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না।

নেপথ্য মাঠে নামেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না তামিমের এভাবে অবসরে চলে যাওয়া। বিষয়টি গড়ালো দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

তামিমকে গণভবনে ডেকে পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী। তামিমকে সঙ্গে নিয়েই গণভবনে প্রবেশে করেন মাশরাফী। প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসিদ্ধ আন্তরিকতা আর আপ্যায়নে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক বড় সংকটকে নিমিষেই সমাধান করে দেন। কেটে যায় সব ধরনের অনিশ্চয়তা।

গণভবনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তামিম সময় কাটিয়েছেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তামিমের স্ত্রী আয়েশা, মাশরাফী আর বিসিবি প্রধান পাপন। গণভবন থেকে বেরিয়ে তামিম নিজেই জানান অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়ার। আর পাপন জানান তার স্বস্তির কথা।

তামিমকে ঘিরে সব সংকটের আপাত সমাধান হলে ক্রিকেটাঙ্গনে নেমে আসে স্বস্তির বাতাস। তবে সবার কাছে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিলো, গণভবনের ভেতরে কি ঘটেছিলো, সেই দিকে। কিছুটা দেরিতে হলেও তামিম ইকবাল নিজেই জানিয়েছেন সেই কথা গণমাধ্যমকে।

এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনেকবার দেখা হলেও এবারের দেখা হবার বিষয়টিতে অন্যরকম উল্লেখ করে তামিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা তাকে মুগ্ধ করেছে। এবার তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আয়েশা। স্ত্রীকে খেলা দেখতে মাঠে নিয়ে যান না বলে তামিমকে বকেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তামিম ইকবাল বলেন, আয়েশাকে মাঠে নিয়ে যাই না, খেলা দেখতে নিয়ে যাই না বলে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বকাও দিলেন বেশ! পরে আয়েশাকে তার (প্রধানমন্ত্রী) ফোন নম্বর দিয়ে বললেন, এরপর যদি তামিমের মাথায় কোনো উল্টাপাল্টা ভাবনা আসে, তুমি সরাসরি আমাকে মেসেজ দেবে আর ওকে নিয়ে আসবে আমার কাছে।

তামিম জানান, কক্ষে পা দেওয়ামাত্র প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, কি তামিম, কী সব পাগলামি নাকি করছো! এসব করলে তো চলবে না। সবকিছু মাথা থেকে সরিয়ে ফেলো। তামিম আরও বলেন, তিনি সব সময় এতো আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলেন, কোনো জবাব থাকে না। আমি শুধু হাসলাম।

তামিম যোগ করেন, তারপর কথা চলল দীর্ঘক্ষণ। শুরুতে মাশরাফী ভাইয়ের সামনে আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে আলাদা করে কথা বলেছেন, সেখানে শুধু আমি আর আয়েশা ছিলাম। পাপন ভাই আসার পরও একসঙ্গে সবার কথা হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা এই ওপেনার আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুই ঘণ্টার বেশি সময় মনে হয় আলাদা করেই কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। আমার জীবনের এটি অনেক বড় স্মরণীয় একটি ঘটনা। ওনার কথা ফেলে দেয়ার কোনো সাহস আমার নেই। প্রধানমন্ত্রীকে না বলা যায় না।