বাগেরহাটে পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক পরিবার

  • Update Time : ০৩:৫০:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১
  • / 183

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার ৫০ হাজারের বেশি পরিবার। ভেসে গেছে পুকুর, কয়েক হাজার চিংড়ি ও মাছের ঘের। দমকা হাওয়ার সঙ্গে টানা বৃ‌ষ্টিপা‌তে জনজীবন বিপর্যস্ত হ‌য়ে ‌পড়ে‌ছে।

বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাট পৌরসভা ও জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি কাঁচা-পাকা সড়কও ডুবে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না বন্ধ বহু পরিবারের। উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলার অসংখ্য এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। এসব এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। ডুবে যাওয়া ঘেরের মাছ বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা।

রামপাল উপজেলার খোকন বলেন, ‘বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। ঘেরের মাছ বের হয়ে গেছে। সবজিরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।’

একই উপজেলার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে আমাদের এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে অনেকের। ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। খুবই সমস্যায় পড়েছি।’

রামপাল উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আসাদুজ্জামান জানান, অতি বৃষ্টির কারণে রামপালে মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ পানিতে ডুবে তিন হাজার ৫৪২টি পুকুর। এতো মোট ক্ষতি হয়েছে ৭০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এদিকে তিন হাজার ২৩৭টি ঘেরে মোট তিন কোটি ৮৪ হাজার টাকা এবং মোট অবকাঠামাে ক্ষতি আট লাখ ৮০ হাজার টাকা ৷ এ পর্যন্ত প্রাথমিক তথ্যে রামপালে মােট মৎস্য সম্পদের ক্ষতি প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ৷ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

এদিকে শরণখোলা উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত। তিনি বলেন, শরণখোলা উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। লোকালয়ের পানি নামানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল বাকী তালুকদার পানিবন্দিদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেন। বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নির্দেশনায় এই খাবার বিতরণ করা হয়।

আলহাজ্ব আব্দুল বাকী তালুকদার বলেন, পানিবন্দিরা রান্না করতে পারছে না। তারা না খেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে জেনে সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নির্দেশনায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

খুলনা মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, বাগেরহাটের সাদা মাছের পোনা, চিংড়ি মাছের পোনা ও কাঁকড়া খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাঁচ হাজার চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর ও কচুয়ার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৫০ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media


বাগেরহাটে পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক পরিবার

Update Time : ০৩:৫০:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার ৫০ হাজারের বেশি পরিবার। ভেসে গেছে পুকুর, কয়েক হাজার চিংড়ি ও মাছের ঘের। দমকা হাওয়ার সঙ্গে টানা বৃ‌ষ্টিপা‌তে জনজীবন বিপর্যস্ত হ‌য়ে ‌পড়ে‌ছে।

বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাট পৌরসভা ও জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি কাঁচা-পাকা সড়কও ডুবে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না বন্ধ বহু পরিবারের। উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলার অসংখ্য এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত। এসব এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। ডুবে যাওয়া ঘেরের মাছ বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা।

রামপাল উপজেলার খোকন বলেন, ‘বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। ঘেরের মাছ বের হয়ে গেছে। সবজিরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।’

একই উপজেলার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে আমাদের এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে অনেকের। ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। খুবই সমস্যায় পড়েছি।’

রামপাল উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আসাদুজ্জামান জানান, অতি বৃষ্টির কারণে রামপালে মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ পানিতে ডুবে তিন হাজার ৫৪২টি পুকুর। এতো মোট ক্ষতি হয়েছে ৭০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এদিকে তিন হাজার ২৩৭টি ঘেরে মোট তিন কোটি ৮৪ হাজার টাকা এবং মোট অবকাঠামাে ক্ষতি আট লাখ ৮০ হাজার টাকা ৷ এ পর্যন্ত প্রাথমিক তথ্যে রামপালে মােট মৎস্য সম্পদের ক্ষতি প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ৷ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

এদিকে শরণখোলা উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত। তিনি বলেন, শরণখোলা উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। লোকালয়ের পানি নামানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল বাকী তালুকদার পানিবন্দিদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেন। বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নির্দেশনায় এই খাবার বিতরণ করা হয়।

আলহাজ্ব আব্দুল বাকী তালুকদার বলেন, পানিবন্দিরা রান্না করতে পারছে না। তারা না খেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে জেনে সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নির্দেশনায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

খুলনা মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, বাগেরহাটের সাদা মাছের পোনা, চিংড়ি মাছের পোনা ও কাঁকড়া খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাঁচ হাজার চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর ও কচুয়ার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৫০ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।