বঙ্গবন্ধুর অফিশিয়াল জীবনীর কাজ বিভিন্নভাবে এগিয়ে চলছে: শিক্ষামন্ত্রী
- Update Time : ০১:৫৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুন ২০২১
- / 169
মাহিন উদ্দিন মহিন:
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্রমাগত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বার বার আঘাত করা হয়েছে। যে কারণে আওয়ামী লীগের স্বাভাবিক অনেক সাংগঠনিক কাজ এখনও করা সম্ভব হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীতে এই কাজগুলো করা সম্ভব হবে।
শনিবার (২৬ জুন) শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ আয়োজিত ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নারী সমাজের অবদান’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ওয়েবিনারে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান’ শীর্ষক ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা’ প্রদান করেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। এই অনুষ্ঠানে ও আলোচনায় ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনকে ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক’ প্রদান করা হয়।
ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের এক বিশাল পটভূমি আছে। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এবং আছে। এমনকি নির্বাচনের প্রচার থেকে শুরু করে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল সামাজিক-স্বাধীকার আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ও ত্যাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’
মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপকভাবে নারীর ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে বেশ কজন নারীনেত্রী ছিলেন। গেরিলা যুদ্ধ থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা এবং বিভিন্ন উপায়ে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করা, ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা ও ত্যাগ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তাই মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারী, মুক্তিযোদ্ধাদের মা-বোনের বিভিন্ন ত্যাগ, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ এসব ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা খুবই জরুরি।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজে মানসিকভাবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার দেয়ালের ভেতর নারীদেরকে রাখা হয়। বর্তমানে এই দেয়াল ভাঙার হার বাড়ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। বঙ্গবন্ধুর মতো তার কন্যাও নারী পুরুষের সম-অধিকারে বিশ্বাস করেন। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকারের সময় তৈরি করা নারীনীতি পরবর্তী সাম্প্রদায়িক সরকার কেটে ছেটে ফেলে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের কার্যক্ষেত্রে না থাকলেও তা প্রবর্তনের চেষ্টা করে। সে জায়গা থেকে আমরা এখনও ফেরত যেতে পারি নাই।’
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নির্যাতিত নারীদের অবস্থা সম্বন্ধে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরবর্তী সময়েও নির্যাতিত নারীদের প্রতি আমাদের মনোভাব পরিবর্তিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী বিদ্বেষী মনোভাব সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবশে করেছে। ফলে ‘৭১-এর নির্যাতিত নারীদের চরম হতাশার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এতকাল। বর্তমানে জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মানসিকতার ফলে বীরাঙ্গনাদের নাম ‘মুক্তিযোদ্ধা’দের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।’
নারীর সম্ভ্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নারীর সম্ভ্রমের সাথে নারীর কোনও বিশেষ অঙ্গের ওপর নির্যাতনের সম্পর্ক নেই। পুরুষের যেসব কারণে সম্ভ্রমহানি হয়, নারীরও সেসব কারণেই সম্ভ্রমহানি হয়। আশা করি নিকট ভবিষ্যতে নির্যাতিত নারীদের ক্ষেত্রে আমরা আর সম্ভ্রমহানি বলব না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কোথাও আমাদের ইচ্ছাকৃতভাবে ঘাটতি থাকা যাবে না। সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধে নারী অবদানের ইতিহাস যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়তে হলে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে।