স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বহাল

  • Update Time : ১২:৫৭:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / 214

 

স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বহাল থাকছে। বিভিন্ন ফোরামে প্রতীক না রাখার আলোচনা চললেও এক্ষেত্রে মতৈক্য আসেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। সরকারেরও কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতীক তুলে দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতীক রাখা না রাখা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সে সিদ্ধান্তের আলোকে আইন পরিবর্তন করে দলীয় প্রতীক রাখা হয়েছে। তবে এটি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেই।’

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি সামনে আসে। সংঘাতের জন্য অনেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ‘দলীয় প্রতীক’ রাখাকে দুষতে থাকেন। তাদের ভাষ্য, এই কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূলে গ্রুপ, সাব-গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সংগঠনে চরম বিভাজন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনেও বেড়ে গেছে বিদ্রোহী প্রার্থী। যেটি শোকজ, বহিষ্কারসহ নানা কঠিন সিদ্ধান্তেও থামানো যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি। যেহেতু আলোচনা হয়নি, আমরা ধরেই নিচ্ছি আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে

এ পরিস্থিতিতে দলের অনেক নেতার অভিমত, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব বিভাজন বেড়েছে। এটি তুলে নিলে হয়তো কমবে বিভাজন।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৩ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার ধুনটে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়

এছাড়া বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেয়ার কথা বলা হতে থাকে। তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রতীকের কারণে সংঘাত গ্রামে-পাড়া-মহল্লায় এমনকি পরিবারেও ঢুকে যাবে। ভেঙে যাবে সামাজিক শৃঙ্খলা, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন।

আইন সংশোধন করার সুযোগ নেই। দরকারও নেই। যে আইন-বিধি আছে তা যথেষ্ট

তবে সংশ্লিষ্ট মহলে আলাপ করে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম ও সরকারে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রতীক তুলে দেয়ারও উদ্যোগে নেই।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘দলীয় প্রতীক তুলে নেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গঠনতন্ত্র যখন সংশোধন হচ্ছিল, তখন সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেটি সেখানেই শেষ হয়ে গেছে। এটি নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা আছে, দলের বিভিন্ন ফোরামেও আলোচনা আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মতৈক্য হয়নি বা সিদ্ধান্ত হয়নি। অতএব, আমরা আমাদের আগের সিদ্ধান্তেই (প্রতীক থাকছে) আছি।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি। যেহেতু আলোচনা হয়নি, আমরা ধরেই নিচ্ছি আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে।’

প্রতীক নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘আইন সংশোধন করার সুযোগ নেই। দরকারও নেই। যে আইন-বিধি আছে তা যথেষ্ট।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রতীক দেয়ার, দেয়া হয়েছে। তবে এটি পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেউ এ বিষয়ে ইঙ্গিতও দেয়নি। আমাদের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।’

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের নভেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন সংক্রান্ত পাঁচটি আইন সংশোধন করা হয়। এতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে মেয়রপদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়।

ওই সংশোধিত বিধি অনুসারে সম্প্রতি যেসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অংশীজনরা। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রতীক নিয়ে কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা করে আপডেট করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি কাজ করছে। এতে প্রস্তাবনা এলে আইনের সংশোধন হতে পারে।

একই মন্ত্রণায়র আরেকটি সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করছে সরকার। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিয়েছেন। এ কমিটি সরকারি আমলা, রাজনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে হবে। সেখানেও নানা প্রস্তাবের সঙ্গে প্রতীকের বিষয়টি এলে সংস্কার হতে পারে। সূত্র: জাগো নিউজ

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বহাল

Update Time : ১২:৫৭:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

 

স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বহাল থাকছে। বিভিন্ন ফোরামে প্রতীক না রাখার আলোচনা চললেও এক্ষেত্রে মতৈক্য আসেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। সরকারেরও কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতীক তুলে দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতীক রাখা না রাখা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সে সিদ্ধান্তের আলোকে আইন পরিবর্তন করে দলীয় প্রতীক রাখা হয়েছে। তবে এটি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেই।’

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি সামনে আসে। সংঘাতের জন্য অনেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ‘দলীয় প্রতীক’ রাখাকে দুষতে থাকেন। তাদের ভাষ্য, এই কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূলে গ্রুপ, সাব-গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সংগঠনে চরম বিভাজন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনেও বেড়ে গেছে বিদ্রোহী প্রার্থী। যেটি শোকজ, বহিষ্কারসহ নানা কঠিন সিদ্ধান্তেও থামানো যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি। যেহেতু আলোচনা হয়নি, আমরা ধরেই নিচ্ছি আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে

এ পরিস্থিতিতে দলের অনেক নেতার অভিমত, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব বিভাজন বেড়েছে। এটি তুলে নিলে হয়তো কমবে বিভাজন।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৩ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার ধুনটে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়

এছাড়া বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেয়ার কথা বলা হতে থাকে। তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রতীকের কারণে সংঘাত গ্রামে-পাড়া-মহল্লায় এমনকি পরিবারেও ঢুকে যাবে। ভেঙে যাবে সামাজিক শৃঙ্খলা, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন।

আইন সংশোধন করার সুযোগ নেই। দরকারও নেই। যে আইন-বিধি আছে তা যথেষ্ট

তবে সংশ্লিষ্ট মহলে আলাপ করে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম ও সরকারে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রতীক তুলে দেয়ারও উদ্যোগে নেই।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘দলীয় প্রতীক তুলে নেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গঠনতন্ত্র যখন সংশোধন হচ্ছিল, তখন সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেটি সেখানেই শেষ হয়ে গেছে। এটি নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা আছে, দলের বিভিন্ন ফোরামেও আলোচনা আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মতৈক্য হয়নি বা সিদ্ধান্ত হয়নি। অতএব, আমরা আমাদের আগের সিদ্ধান্তেই (প্রতীক থাকছে) আছি।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়নি। যেহেতু আলোচনা হয়নি, আমরা ধরেই নিচ্ছি আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে।’

প্রতীক নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘আইন সংশোধন করার সুযোগ নেই। দরকারও নেই। যে আইন-বিধি আছে তা যথেষ্ট।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রতীক দেয়ার, দেয়া হয়েছে। তবে এটি পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেউ এ বিষয়ে ইঙ্গিতও দেয়নি। আমাদের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।’

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের নভেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন সংক্রান্ত পাঁচটি আইন সংশোধন করা হয়। এতে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে মেয়রপদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়।

ওই সংশোধিত বিধি অনুসারে সম্প্রতি যেসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অংশীজনরা। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রতীক নিয়ে কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা করে আপডেট করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি কাজ করছে। এতে প্রস্তাবনা এলে আইনের সংশোধন হতে পারে।

একই মন্ত্রণায়র আরেকটি সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করছে সরকার। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিয়েছেন। এ কমিটি সরকারি আমলা, রাজনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে হবে। সেখানেও নানা প্রস্তাবের সঙ্গে প্রতীকের বিষয়টি এলে সংস্কার হতে পারে। সূত্র: জাগো নিউজ