সমঝোতা হয়নি জেলা প্রশাসক এবং বাস মালিক সমিতি’র মধ্যে, দুরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা
- Update Time : ০৭:৩২:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
- / 22
মো. সাহিদুল ইসলাম শাহীনঃ-
গত তিনদিন যাবৎ বেনাপোল থেকে সব ধরনের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন পাসপোর্টযাত্রী সহ সাধারণ যাত্রীরা।
রবিবার(২৪ নভেম্বর) এ নিয়ে যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে, জেলা প্রশাসক-মো.আজাহারুল ইসলাম এবং বাস মালিক সমিতি’র মধ্যে এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কোন সমঝোতা ছাড়াই বৈঠকের সমাপ্তি ঘটে। দাবি পূরণ না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে বাস মালিক পক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বেনাপোল থেকে সকল ধরনের দুরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অপরদিকে,জেলা প্রশাসক মালিক পক্ষের দাবি’র প্রেক্ষাপটে প্রশাসন অনড় অবস্থানে থাকায় কোন ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত হয় নাই।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,”যানজট নিরসনে নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা-ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন,স্যারের নির্দেশে যশোর জেলা প্রশাসন এবং শার্শা উপজেলা প্রশাসন বেনাপোল আমড়াখালী নামক স্থানে নির্মিত নতুন পৌর বাস টার্মিনাল থেকেই যাত্রী ওঠাতে হবে এবং নামানোর সিদ্ধান্ত দেয়। উপদেষ্টার নির্দেশ ব্যতিত জেলা প্রশাসনের পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। অপরদিকে, পরিবহন বাস মালিক সমিতি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগের নিয়মে বাস চলাচল করতে হবে। তা না হলে তারা বাস চলাচল বন্ধ রাখবেন।
পরিবহন মালিক সমিতি’র নেতৃবৃন্দরা বলেন,গত এক সপ্তাহ আগে শার্শা প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর থেকে সকল পরিবহনের বাসগুলো পৌর সভার নির্দেশনা মত চলছিল। ঢাকা থেকে রাতে ছেড়ে আসা বাস গুলোর পাসপোর্টযাত্রীদের বেনাপোল চেকপোস্টে নামিয়ে দিয়ে খালি বাস পৌর বাস টার্মিনালে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে গত শুক্রবার(২২ নভাম্বর) রাত তিনটার দিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বাসগুলো পৌর বাস টার্মিনালে আসার পর বাসের যাত্রীদের জোরপূর্বক টার্মিনালে নামিয়ে দেয়া হয়। এ সময় যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং হয়রানির শিকার হয়। পরে সেই যাত্রীগুলো লোকাল বাসে করে চেকপোষ্টে পাঠান টার্মিনালে থাকা পৌর সভার লোকজন। কোন কিছু না জানিয়ে শার্শা প্রশাসন এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে বাস মালিক সমিতি সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে চরম ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে পাসপোর্টযাত্রীদের। বিকল্প ব্যবস্থায় অনেকে বাড়ি ফিরছেন অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে।
অনেক পাসপোর্টযাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, পার্শ্ববর্তী ভারতের পেট্রাপোলে যাত্রীদের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশনের সাথেই নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রী টার্মিনাল কিন্তু বাংলাদেশে বর্ডারে চালু টার্মিনাল বন্ধ করে দিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টার্মিনালে পাঠানো হচ্ছে যাত্রীদের। এতে চরম ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে পাসপোর্টযাত্রীদের।
পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, কয়েকদিন আগে শার্শা ইউএনও ও সুধী সমাজের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। সেখানে যানজট নিরসনে পরিবহনগুলো নতুন পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী আমরা এই টার্মিনাল ব্যবহার করছি। তবে, যাত্রী হয়রানি ও নিরাপত্তার জন্য শেষরাতের দূরপাল্লার পরিবহনগুলো যেন সীমান্ত ঘেঁষা পুরনো টার্মিনালটি ব্যবহার করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
জানতে চাইলে, শার্শা উপজেলার নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) কাজী নাজীব হাসান বলেন, কী কারণে তারা (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) ধর্মঘট ডেকেছে, আমরা সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল নই। তাদের কোনোকিছু বলার থাকলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে পারে।
তিনি বলেন, নতুন পৌর বাস টার্মিনালের নিরাপত্তার জন্যে আনসার সদস্য মোতায়েন, নারী-পুরুষের জন্যে পৃথক নামাজের স্থান, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্যে কর্নার সবকিছুই রয়েছে। আমরা বলেছি, পাসপোর্টযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা সীমান্তে যাত্রী নামিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু কোনো বাস আমরা সেখানে থাকতে দেবো না।
এ ব্যাপারে বেনাপোল পরিবহন সমিতির সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু জানান, প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর কোন সমঝোতা হয়নি। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ হয়রানির হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি। আমাদের পরিবহন বাসগুলো তো কোন যানজটের সৃষ্টি করে না বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অহেতুক যানজট সৃষ্টি করে না। তাহলে কেন আমাদের সাথে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করছে প্রশাসন?