শেরপুরে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের

  • Update Time : ০২:২৯:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / 21

শাহীন শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধ

বগুড়ার শেরপুরের ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে ২৮ আগস্ট বুধবার দুপুরে অত্র বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রায় ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে তারা অভিযোগ তোলেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিন ক্ষমতার জোরে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সুঘাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জিন্নাহ। সে সময় প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেনের যোগ শাজসে গত ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক, ল্যাব সহকারী, নিরাপত্তাকর্মী, অফিস সহায়ক ও আয়া পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৬৩ লাখ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার কথা বলে গ্রহন করেন। কিন্তু উক্ত টাকার একটি টাকাও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় না করে সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। বিদ্যালয়ের নামে ১০০ শতক পুকুরের মাটি বিক্রি ও লিজের টাকা বিদ্যালয় তহবিলে জমা না করে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যৌথ ভাবে আত্মসাৎ করেন। করোনা কালীন সময়ে এসএসসি-২০২১ পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ ফি ও কেন্দ্র ফি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী কর্তৃক ফেরত প্রদানের নির্দেশ থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের ফেরত না দিয়ে প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছর পিবিজিএইচআই স্কীম এর মাধ্যমে ফুলজোড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে ৫ লাখ টাকা অনুদান প্রাপ্ত হন। তার আংশিক ব্যয় করে অবশিষ্ট টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড প্রদানের লক্ষ্যে গত ২০২০ সালে ১৫০ টাকা করে ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গ্রহন করে প্রায় ৫২ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করা সহ বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে ক্যম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
প্রশাসন ও এলাকাবাসীর কাছে দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিদ্যালয়ের যত টাকা লুট করা হয়েছে সকল টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দিতে হবে এবং এসব কাজে জরিত যারা তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দলোন চালিয়ে যাবে বলেও হুসিয়ারী দেয়।
এ ব্যাপারে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান জিন্নাহ বলেন, আমার সময় যে নিয়োগগুলো দেয়া হয়ে তা সম্পুর্ন বিধি মোতাবেক দেয়া হয়েছে। এছাড়াও টাকা আত্মসাতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বেলাল হোসেনের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুমন জিহাদী বলেন, ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষেভের বিষয়টি আমি জেনেছি। এভাবে জোর করে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবেনা। ছাত্ররা একটি লিখিত অভিযোগ দিলে একটি তদন্ত কমিটি করে দেয়া হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করে পরবর্তীতে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আপাতত এলাকাবাসীকে পরিবেশ শান্ত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


শেরপুরে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের

Update Time : ০২:২৯:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪

শাহীন শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধ

বগুড়ার শেরপুরের ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে ২৮ আগস্ট বুধবার দুপুরে অত্র বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রায় ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে তারা অভিযোগ তোলেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিন ক্ষমতার জোরে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সুঘাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জিন্নাহ। সে সময় প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেনের যোগ শাজসে গত ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক, ল্যাব সহকারী, নিরাপত্তাকর্মী, অফিস সহায়ক ও আয়া পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৬৩ লাখ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার কথা বলে গ্রহন করেন। কিন্তু উক্ত টাকার একটি টাকাও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় না করে সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। বিদ্যালয়ের নামে ১০০ শতক পুকুরের মাটি বিক্রি ও লিজের টাকা বিদ্যালয় তহবিলে জমা না করে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যৌথ ভাবে আত্মসাৎ করেন। করোনা কালীন সময়ে এসএসসি-২০২১ পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ ফি ও কেন্দ্র ফি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী কর্তৃক ফেরত প্রদানের নির্দেশ থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের ফেরত না দিয়ে প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন। গত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছর পিবিজিএইচআই স্কীম এর মাধ্যমে ফুলজোড় বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে ৫ লাখ টাকা অনুদান প্রাপ্ত হন। তার আংশিক ব্যয় করে অবশিষ্ট টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড প্রদানের লক্ষ্যে গত ২০২০ সালে ১৫০ টাকা করে ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গ্রহন করে প্রায় ৫২ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করা সহ বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে ক্যম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
প্রশাসন ও এলাকাবাসীর কাছে দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিদ্যালয়ের যত টাকা লুট করা হয়েছে সকল টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দিতে হবে এবং এসব কাজে জরিত যারা তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দলোন চালিয়ে যাবে বলেও হুসিয়ারী দেয়।
এ ব্যাপারে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান জিন্নাহ বলেন, আমার সময় যে নিয়োগগুলো দেয়া হয়ে তা সম্পুর্ন বিধি মোতাবেক দেয়া হয়েছে। এছাড়াও টাকা আত্মসাতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বেলাল হোসেনের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুমন জিহাদী বলেন, ফুলজোর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষেভের বিষয়টি আমি জেনেছি। এভাবে জোর করে কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবেনা। ছাত্ররা একটি লিখিত অভিযোগ দিলে একটি তদন্ত কমিটি করে দেয়া হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করে পরবর্তীতে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আপাতত এলাকাবাসীকে পরিবেশ শান্ত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।