পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা

  • Update Time : ১১:০২:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / 159

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:

শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মসজিদের নয়টি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ২৩ বস্তা টাকা। এরপর বস্তাভর্তি টাকাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। পুরো টাকা গণনা শেষ করতে দুই শতাধিক ব্যক্তির সময় লেগেছে ১৫ ঘণ্টা।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিলেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এটা দানবাক্স থেকে একসঙ্গে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা।

শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মসজিদের নয়টি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ২৩ বস্তা টাকা। এরপর বস্তাভর্তি টাকাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। পুরো টাকা গণনা শেষ করতে দুই শতাধিক ব্যক্তির সময় লেগেছে ১৫ ঘণ্টা।

এর আগে চলতি বছরের ১৯ আগস্টও পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ২৩ বস্তা টাকা।

দিনভর গণনা শেষে দেখা গেছে, দানবাক্সগুলোতে এবার জমা পড়ে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। এ ছাড়াও পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা। তখন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে তিন মাসে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়েছিল মসজিদের দানবাক্সগুলোতে।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী রাত সোয়া ১০টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে সকাল পৌনে ৮টার দিকে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। নয়টি দানবাক্স খুলে ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। পরে দিনভর গণনা শেষে ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গেছে।

এছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

তিনি বলেন, ‘টাকা গণনা কাজে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শেখ জাবের আহমেদ, সহকারী কমিশনার রওশন কবীর, মাহমুদুল হাসান, সামিউল ইসলাম, আজিজা বেগম, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নেন।’

দানবাক্সগুলো খোলার পর গণনা কাজ দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে।

মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূইয়া জানান, করোনা সংক্রমণের শুরুতে মসজিদে মুসল্লির চলাচল এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকলেও দান অব্যাহত ছিল।

পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরও এই দানের টাকা থেকে সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়াও দানের টাকায় অচিরেই ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি আধুনিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান বলেন, ’প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে তাদের আশা পূরণ হয়েছে। তাই এখানে দান করেন তারা।’

জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে পাগলা মসজিদ গড়ে ওঠে। বর্তমানে সেটি সম্প্রসারিত হয়ে ৩ একর ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media


পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা

Update Time : ১১:০২:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:

শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মসজিদের নয়টি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ২৩ বস্তা টাকা। এরপর বস্তাভর্তি টাকাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। পুরো টাকা গণনা শেষ করতে দুই শতাধিক ব্যক্তির সময় লেগেছে ১৫ ঘণ্টা।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিলেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এটা দানবাক্স থেকে একসঙ্গে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা।

শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মসজিদের নয়টি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ২৩ বস্তা টাকা। এরপর বস্তাভর্তি টাকাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। পুরো টাকা গণনা শেষ করতে দুই শতাধিক ব্যক্তির সময় লেগেছে ১৫ ঘণ্টা।

এর আগে চলতি বছরের ১৯ আগস্টও পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ২৩ বস্তা টাকা।

দিনভর গণনা শেষে দেখা গেছে, দানবাক্সগুলোতে এবার জমা পড়ে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। এ ছাড়াও পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা। তখন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে তিন মাসে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়েছিল মসজিদের দানবাক্সগুলোতে।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী রাত সোয়া ১০টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে সকাল পৌনে ৮টার দিকে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। নয়টি দানবাক্স খুলে ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। পরে দিনভর গণনা শেষে ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গেছে।

এছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।

তিনি বলেন, ‘টাকা গণনা কাজে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর শেখ জাবের আহমেদ, সহকারী কমিশনার রওশন কবীর, মাহমুদুল হাসান, সামিউল ইসলাম, আজিজা বেগম, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নেন।’

দানবাক্সগুলো খোলার পর গণনা কাজ দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে।

মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূইয়া জানান, করোনা সংক্রমণের শুরুতে মসজিদে মুসল্লির চলাচল এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকলেও দান অব্যাহত ছিল।

পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরও এই দানের টাকা থেকে সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়াও দানের টাকায় অচিরেই ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি আধুনিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান বলেন, ’প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে তাদের আশা পূরণ হয়েছে। তাই এখানে দান করেন তারা।’

জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে পাগলা মসজিদ গড়ে ওঠে। বর্তমানে সেটি সম্প্রসারিত হয়ে ৩ একর ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।