যথাযোগ্য মর্যাদায় কুমিল্লায় মুক্ত দিবস পালিত

  • Update Time : ১২:৪৮:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / 100

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ-

যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো কুমিল্লা মুক্ত দিবস।কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হয়। ৮ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় কুমিল্লা। এদিন বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরী দলীয় পতাকা ও কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমদ আলী স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হয়।

সকাল ৯ টায় কুমিল্লা টাউনহল মাঠে পতাকা উত্তোলন শেষে জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়। র‍্যালি শেষে নগর উদ্যানে বঙ্গবন্ধু মুর্যালে পুষ্পস্তক অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা ৩ দিক থেকে কুমিল্লা বিমানবন্দরে পাক বাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের প্রধান ঘাঁটিতে আক্রমণ শুরু করেন। মিত্রবাহিনীর ১১ গুর্খা রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আর কে মজুমদারের নেতৃত্বে কুমিল্লা বিমানবন্দরের ৩ দিক থেকে আক্রমণ পরিচালানা করেন।

আক্রান্ত হওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য অদূরবর্তী ময়নামতি সেনানিবাস থেকে অতিরিক্ত সেনা এবং গোলাবারুদের মজুত বৃদ্ধি করে প্রাথমিক আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু মিত্র বাহিনীর আক্রমণের তীব্রতায় আর মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের মরণপণ আক্রমণে পাকিস্তানি দখলদার সেনারা তাদের পরিণতি বুঝতে পারে। শেষ রাতে পাকিস্তানি আর্মি তাদের প্রতিরোধ পরিখাগুলো দ্রুত পরিত্যাগ করে ১১ কিলোমিটার দূরে ময়নামতি সেনানিবাসে আত্মগোপন করে।

জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়।
জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে আরেকটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়।

ফলে ভোরে সূর্যের আলো না ফোটার আগেই থেমে যায় বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণের শব্দ। পরে এয়ারপোর্ট সংলগ্ন গ্রাম নেউরা, রাজাপাড়া, ঢুলিপাড়া লক্ষ্মীপুর, চৌয়ারা এলাকার বাসিন্দারা পাকসেনাদের মরদেহ পড়েছিল।

১৯৭১ সালে কুমিল্লা শহরে বসবাসকারী ঝাউতলা এলাকার সৈয়দা হাসিনা খানম জানান, সারা রাত প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ আর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি আর্মির বহু সাজোয়া গাড়ি যেতে দেখেছেন কুমিল্লা এয়ারপোর্টের দিকে। ভোরে অনেকের সঙ্গে শিশু-কিশোর ও নারীরাও রাস্তায় নেমে আসেন কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার আনন্দে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী বিবির বাজার দিয়ে লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল এবং অপর দুটি দল গোমতী নদী অতিক্রম করে কুমিল্লা শহরের ভাটপাড়া দিয়ে এবং চৌদ্দগ্রামের বাঘেরচর দিয়ে এসে বিমানবন্দরের পাকসেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। রাতভর পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরাজিত পাকিস্তানি সেনারা বিমানবন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে কুমিল্লার বরুড়ার দিকে ও ময়নামতি সেনা ছাউনিতে আত্মগোপন করে এবং কয়েকজন আত্মসমর্পণ করে। ভোরে পাকসেনাদের বিমানবন্দরের প্রধান ঘাঁটি দখল করেন মুক্তিসেনারা। কুমিল্লা মুক্ত হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হচ্ছে, এই বিজয় উল্লাসে তখন গ্রামগুলো থেকে এবং শহরের মানুষেরা রাস্তায় নেমে আসেন।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আলম বাবুল বলেন, ‘একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর ভোরে কুমিল্লা হানাদার মুক্ত হয়। আগরতলা সোনামুড়া থেকে সেদিন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে কুমিল্লায় প্রবেশ করি।’

সফিউল আলম আরও বলেন, অগ্রবর্তী দল হিসেবে ছিল নবম বেঙ্গলের মুক্তিসেনারা। আক্রমণের নেতৃত্বে ছিল ১১ গুর্খা রেজিমেন্ট। কুমিল্লার আপামর জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মুক্তির উল্লাসে বরণ করে নেয়।

১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় কুমিল্লা। এদিন বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরী দলীয় পতাকা ও কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমদ আলী স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


যথাযোগ্য মর্যাদায় কুমিল্লায় মুক্ত দিবস পালিত

Update Time : ১২:৪৮:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ-

যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো কুমিল্লা মুক্ত দিবস।কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হয়। ৮ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় কুমিল্লা। এদিন বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরী দলীয় পতাকা ও কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমদ আলী স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

দিবসটি উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হয়।

সকাল ৯ টায় কুমিল্লা টাউনহল মাঠে পতাকা উত্তোলন শেষে জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়। র‍্যালি শেষে নগর উদ্যানে বঙ্গবন্ধু মুর্যালে পুষ্পস্তক অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা ৩ দিক থেকে কুমিল্লা বিমানবন্দরে পাক বাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের প্রধান ঘাঁটিতে আক্রমণ শুরু করেন। মিত্রবাহিনীর ১১ গুর্খা রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আর কে মজুমদারের নেতৃত্বে কুমিল্লা বিমানবন্দরের ৩ দিক থেকে আক্রমণ পরিচালানা করেন।

আক্রান্ত হওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য অদূরবর্তী ময়নামতি সেনানিবাস থেকে অতিরিক্ত সেনা এবং গোলাবারুদের মজুত বৃদ্ধি করে প্রাথমিক আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু মিত্র বাহিনীর আক্রমণের তীব্রতায় আর মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের মরণপণ আক্রমণে পাকিস্তানি দখলদার সেনারা তাদের পরিণতি বুঝতে পারে। শেষ রাতে পাকিস্তানি আর্মি তাদের প্রতিরোধ পরিখাগুলো দ্রুত পরিত্যাগ করে ১১ কিলোমিটার দূরে ময়নামতি সেনানিবাসে আত্মগোপন করে।

জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়।
জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে আরেকটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের হয়।

ফলে ভোরে সূর্যের আলো না ফোটার আগেই থেমে যায় বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণের শব্দ। পরে এয়ারপোর্ট সংলগ্ন গ্রাম নেউরা, রাজাপাড়া, ঢুলিপাড়া লক্ষ্মীপুর, চৌয়ারা এলাকার বাসিন্দারা পাকসেনাদের মরদেহ পড়েছিল।

১৯৭১ সালে কুমিল্লা শহরে বসবাসকারী ঝাউতলা এলাকার সৈয়দা হাসিনা খানম জানান, সারা রাত প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ আর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি আর্মির বহু সাজোয়া গাড়ি যেতে দেখেছেন কুমিল্লা এয়ারপোর্টের দিকে। ভোরে অনেকের সঙ্গে শিশু-কিশোর ও নারীরাও রাস্তায় নেমে আসেন কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার আনন্দে।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী বিবির বাজার দিয়ে লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল এবং অপর দুটি দল গোমতী নদী অতিক্রম করে কুমিল্লা শহরের ভাটপাড়া দিয়ে এবং চৌদ্দগ্রামের বাঘেরচর দিয়ে এসে বিমানবন্দরের পাকসেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। রাতভর পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরাজিত পাকিস্তানি সেনারা বিমানবন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে কুমিল্লার বরুড়ার দিকে ও ময়নামতি সেনা ছাউনিতে আত্মগোপন করে এবং কয়েকজন আত্মসমর্পণ করে। ভোরে পাকসেনাদের বিমানবন্দরের প্রধান ঘাঁটি দখল করেন মুক্তিসেনারা। কুমিল্লা মুক্ত হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হচ্ছে, এই বিজয় উল্লাসে তখন গ্রামগুলো থেকে এবং শহরের মানুষেরা রাস্তায় নেমে আসেন।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আলম বাবুল বলেন, ‘একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর ভোরে কুমিল্লা হানাদার মুক্ত হয়। আগরতলা সোনামুড়া থেকে সেদিন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে কুমিল্লায় প্রবেশ করি।’

সফিউল আলম আরও বলেন, অগ্রবর্তী দল হিসেবে ছিল নবম বেঙ্গলের মুক্তিসেনারা। আক্রমণের নেতৃত্বে ছিল ১১ গুর্খা রেজিমেন্ট। কুমিল্লার আপামর জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মুক্তির উল্লাসে বরণ করে নেয়।

১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় কুমিল্লা। এদিন বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে তৎকালীন পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরী দলীয় পতাকা ও কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমদ আলী স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।