পবিপ্রবিতে ২ কর্মকর্তা কতৃক শিক্ষক লাঞ্ছিত , ভিডিও ফাঁস

  • Update Time : ০৮:৪৭:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৩
  • / 191

আশিকুর রহমান, পবিপ্রবি প্রতিনিধি:-

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) এক শিক্ষককে হেনস্তা ও গালমন্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সম্বলিত একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির হাতে এসে পৌছেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররোল কর্মচারী মোঃ শামসুল হক ওরফে রাসেল মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন মন্ডলকে কৃষি অনুষদের সামনে হেনস্তা করেন। এ সময় তাকে বিভিন্ন ভাবে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন ঐ দুই কর্মকর্তা। একই সাথে তাকে মারধরের চেষ্টা করেন মোঃ শামসুল হক ওরফে রাসেল এবং মোঃ আতাউর রহমান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোঃ শাহীন হেসেন ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওয়াজকুরুনি তাদের বাঁধা দেন।

ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এক মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ ওয়াজকুরুনি এ শিক্ষককে মুঠোফোনে হুমকি দেন। পরবর্তীতে মোঃ আনোয়ার হোসেন মন্ডল মোঃ ওয়াজকুরুনি ও মোঃ শামসুল হক ওরফে রাসেলের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করে পটুয়াখালীর দুমকি থানায় একটি সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন। উক্ত জিডি প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন ভাবে মোঃ আনেয়ার মন্ডলকে চাপ দিতে থাকেন অভিযুক্ত কর্মকর্তারা। এর প্রেক্ষিতেই একাডেমিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার হোসেন মন্ডল জানান, আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলায় তারা আমাকে মারতে উদ্দত হন। পরবর্তীতে আমি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করলে আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে জিডি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে।

শিক্ষককে হেনস্তা করার অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে মোঃ শামসুল হক (রাসেল) জানান, “একাডেমিক ভবনের সামনে এ শিক্ষকের সাথে কোন ধরণের গালমন্দ বা হেনস্তার ঘটনা ঘটেনি। আর এ ধরণের কিছু প্রমাণ হলে প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।”

এদিকে গালমন্দ ও মারতে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মোঃ আতাউর রহমান বলেন, “মোঃ আনোয়ার মন্ডল অফিসারদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিলেন, পরবর্তীতে ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি একটি জিডিও করেন। সেগুলো মিমাংসিত। তাকে গালমন্দ বা মারতে যাওয়ার কোন প্রমান আছে? এগুলো অতিরঞ্জিত”

সম্প্রতি এ ঘটনাকে আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একটি স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিভিন্ন শিক্ষককে হেনস্তার একাধিক অভিযোগ রয়েছে মোঃ শামসুল হক (রাসেল)ও মোঃ আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে। তাছাড়া সম্প্রতি নিয়মমাফিক দপ্তরে অনুপস্থিত থেকেও একমাসে ৪৫ দিনের বেতন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় মাস্টাররোলে কর্মরত মোঃ শামসুল হকের বিরুদ্ধে। যা দেশের প্রথম শ্রেণীর গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। একই সাথে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের পিও হিসেবে এবার নিয়োগ দেওয়ার চেস্টা করছে প্রশাসন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য পদ নেই সেখানে কিভাবে নিয়োগ হয় তা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের মহলে রয়েছে একাধিক আলোচনা সমালোচনা।

এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় হলো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গা, এটি পেশিশক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। এ ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাথে আলোচনা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


পবিপ্রবিতে ২ কর্মকর্তা কতৃক শিক্ষক লাঞ্ছিত , ভিডিও ফাঁস

Update Time : ০৮:৪৭:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৩

আশিকুর রহমান, পবিপ্রবি প্রতিনিধি:-

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) এক শিক্ষককে হেনস্তা ও গালমন্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সম্বলিত একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির হাতে এসে পৌছেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররোল কর্মচারী মোঃ শামসুল হক ওরফে রাসেল মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন মন্ডলকে কৃষি অনুষদের সামনে হেনস্তা করেন। এ সময় তাকে বিভিন্ন ভাবে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন ঐ দুই কর্মকর্তা। একই সাথে তাকে মারধরের চেষ্টা করেন মোঃ শামসুল হক ওরফে রাসেল এবং মোঃ আতাউর রহমান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোঃ শাহীন হেসেন ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওয়াজকুরুনি তাদের বাঁধা দেন।

ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এক মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ ওয়াজকুরুনি এ শিক্ষককে মুঠোফোনে হুমকি দেন। পরবর্তীতে মোঃ আনোয়ার হোসেন মন্ডল মোঃ ওয়াজকুরুনি ও মোঃ শামসুল হক ওরফে রাসেলের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করে পটুয়াখালীর দুমকি থানায় একটি সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন। উক্ত জিডি প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন ভাবে মোঃ আনেয়ার মন্ডলকে চাপ দিতে থাকেন অভিযুক্ত কর্মকর্তারা। এর প্রেক্ষিতেই একাডেমিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার হোসেন মন্ডল জানান, আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলায় তারা আমাকে মারতে উদ্দত হন। পরবর্তীতে আমি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করলে আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে জিডি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে।

শিক্ষককে হেনস্তা করার অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে মোঃ শামসুল হক (রাসেল) জানান, “একাডেমিক ভবনের সামনে এ শিক্ষকের সাথে কোন ধরণের গালমন্দ বা হেনস্তার ঘটনা ঘটেনি। আর এ ধরণের কিছু প্রমাণ হলে প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।”

এদিকে গালমন্দ ও মারতে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মোঃ আতাউর রহমান বলেন, “মোঃ আনোয়ার মন্ডল অফিসারদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিলেন, পরবর্তীতে ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি একটি জিডিও করেন। সেগুলো মিমাংসিত। তাকে গালমন্দ বা মারতে যাওয়ার কোন প্রমান আছে? এগুলো অতিরঞ্জিত”

সম্প্রতি এ ঘটনাকে আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একটি স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বিভিন্ন শিক্ষককে হেনস্তার একাধিক অভিযোগ রয়েছে মোঃ শামসুল হক (রাসেল)ও মোঃ আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে। তাছাড়া সম্প্রতি নিয়মমাফিক দপ্তরে অনুপস্থিত থেকেও একমাসে ৪৫ দিনের বেতন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় মাস্টাররোলে কর্মরত মোঃ শামসুল হকের বিরুদ্ধে। যা দেশের প্রথম শ্রেণীর গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। একই সাথে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের পিও হিসেবে এবার নিয়োগ দেওয়ার চেস্টা করছে প্রশাসন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য পদ নেই সেখানে কিভাবে নিয়োগ হয় তা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের মহলে রয়েছে একাধিক আলোচনা সমালোচনা।

এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় হলো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গা, এটি পেশিশক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। এ ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাথে আলোচনা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”