রাণীনগরে দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বয়লাগাড়ি গ্রামীণ মেলা

  • Update Time : ০৯:১৬:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২
  • / 166

মোঃ আব্দুল মালেক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগরে পৌষ সক্রান্তী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বয়লাগাড়ি গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মেলা এটি। পারইল ইউনিয়নের বড়গাছা গ্রামের পূর্ব মাঠে শুক্রবার থেকে শুরু হয় এ মেলা। মেলায় প্রথমদিন মূল আকর্ষন “মাছ”। মেলায় বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ ওঠে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মাছ বেচা-কেনা। জামাই সহ প্রতিটি বাড়িতে সাধ্যমত কেনা হয় মাছ। আর হাজার হাজার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গন যেন মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠে। মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার ‘বউ মেলা’ হয়ে এ মেলা শেষ হয়।

জানা যায়, শত বছর পূর্বে স্থানীয়দের উদ্দ্যোগে বড়গাছা গ্রামের পূর্ব মাঠে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলা শুরু হয়। মেলাটি “বয়লাগাড়ি” মেলা নামে পরিচিত পায়। এরপর থেকে প্রতি বছর স্থানীয়রা পৌষ মাসে এ মেলার আয়োজন করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও শুক্রবার সকাল থেকে বয়লাগাড়ি মেলা শুরু হয়েছে। শনিবার ‘বউ মেলার’ মধ্যে দিয়ে মেলা শেষ হয়। মেলায় রাণীনগর উপজেলাসহ আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার হাজার হাজার মানুষ আসেন। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সকল প্রকার পন্য সামগ্রীসহ সকল দোকানপাট বসেছে। সবকিছু মিলছে এ মেলায়। বিভিন্ন প্রজাতীর বড় বড় মাছ, হরেক রকমের মিষ্টি, মিঠাইসহ অন্যান্য খাবারের জিনিস, মেয়েদের জন্য চুড়ি-ফিতাসহ গৃহসামগ্রী, শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলনা সামগ্রী ও নাগরদোলা সহ বিভিন্ন দোকানপাট বসানো হয়েছে। মেলাতে ঘুরছে হাজার হাজার মানুষ। কেউ কেনা-কাটা করছে আবার কেউ মেলা ঘুরে আনন্দ উপভোগ করছে।

মাছ বাজারে এলাকার প্রতিটি বাড়ির জামাইসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ মেলায় যেন মাছ কেনার প্রতিযোগীতায় নেমেছে। যে যার সাধ্যমত মাছ কিনছে। মেলায় মাছ কেনার সময় কথা হয় যুবক হোসেন আলীর সাথে। তিনি জানান, মেলা উপলক্ষে শ^শুর বাড়ি বড়গাছা গ্রামে এসেছি। মেলার প্রথমদিন মূল আকর্ষন বড় বড় মাছ। তাই মেলা থেকে ১৪ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ প্রায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। এছাড়া মেলায় আত্মীয়-স্বজন নিয়ে এসে ঘুরে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি।

মেলায় ঘুরতে আসা আশিক হোসেন, জয় সরদার, আসলামসহ অনেকেই বলেন, এ গ্রামীণ মেলা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা। প্রতি বছর আমরা এই মেলায় এসে অনেক কেনাকাটা করে থাকি। একই সাথে মেলায় ঘুরে আনন্দ উপভোগ করি। এ মেলায় উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ এবং জামাই-মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনেরা এসে থাকেন।

বয়লাগাড়ি মেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান বাচ্চু বলেন, পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


রাণীনগরে দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বয়লাগাড়ি গ্রামীণ মেলা

Update Time : ০৯:১৬:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

মোঃ আব্দুল মালেক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগরে পৌষ সক্রান্তী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বয়লাগাড়ি গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মেলা এটি। পারইল ইউনিয়নের বড়গাছা গ্রামের পূর্ব মাঠে শুক্রবার থেকে শুরু হয় এ মেলা। মেলায় প্রথমদিন মূল আকর্ষন “মাছ”। মেলায় বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ ওঠে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মাছ বেচা-কেনা। জামাই সহ প্রতিটি বাড়িতে সাধ্যমত কেনা হয় মাছ। আর হাজার হাজার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গন যেন মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠে। মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার ‘বউ মেলা’ হয়ে এ মেলা শেষ হয়।

জানা যায়, শত বছর পূর্বে স্থানীয়দের উদ্দ্যোগে বড়গাছা গ্রামের পূর্ব মাঠে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলা শুরু হয়। মেলাটি “বয়লাগাড়ি” মেলা নামে পরিচিত পায়। এরপর থেকে প্রতি বছর স্থানীয়রা পৌষ মাসে এ মেলার আয়োজন করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও শুক্রবার সকাল থেকে বয়লাগাড়ি মেলা শুরু হয়েছে। শনিবার ‘বউ মেলার’ মধ্যে দিয়ে মেলা শেষ হয়। মেলায় রাণীনগর উপজেলাসহ আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার হাজার হাজার মানুষ আসেন। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, সকল প্রকার পন্য সামগ্রীসহ সকল দোকানপাট বসেছে। সবকিছু মিলছে এ মেলায়। বিভিন্ন প্রজাতীর বড় বড় মাছ, হরেক রকমের মিষ্টি, মিঠাইসহ অন্যান্য খাবারের জিনিস, মেয়েদের জন্য চুড়ি-ফিতাসহ গৃহসামগ্রী, শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলনা সামগ্রী ও নাগরদোলা সহ বিভিন্ন দোকানপাট বসানো হয়েছে। মেলাতে ঘুরছে হাজার হাজার মানুষ। কেউ কেনা-কাটা করছে আবার কেউ মেলা ঘুরে আনন্দ উপভোগ করছে।

মাছ বাজারে এলাকার প্রতিটি বাড়ির জামাইসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ মেলায় যেন মাছ কেনার প্রতিযোগীতায় নেমেছে। যে যার সাধ্যমত মাছ কিনছে। মেলায় মাছ কেনার সময় কথা হয় যুবক হোসেন আলীর সাথে। তিনি জানান, মেলা উপলক্ষে শ^শুর বাড়ি বড়গাছা গ্রামে এসেছি। মেলার প্রথমদিন মূল আকর্ষন বড় বড় মাছ। তাই মেলা থেকে ১৪ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ প্রায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। এছাড়া মেলায় আত্মীয়-স্বজন নিয়ে এসে ঘুরে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছি।

মেলায় ঘুরতে আসা আশিক হোসেন, জয় সরদার, আসলামসহ অনেকেই বলেন, এ গ্রামীণ মেলা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা। প্রতি বছর আমরা এই মেলায় এসে অনেক কেনাকাটা করে থাকি। একই সাথে মেলায় ঘুরে আনন্দ উপভোগ করি। এ মেলায় উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ এবং জামাই-মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনেরা এসে থাকেন।

বয়লাগাড়ি মেলা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান বাচ্চু বলেন, পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে।