ইফতারের কয়েকটি জরুরি মাসায়েল
- Update Time : ০৪:০৪:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২
- / 360
মুফতি সুহাইল আবদুল কাইয়ূম:
আর ক’দিন পরই রহমত, বরকত, মাগফিরাতের মাস রমজান সমাগত। এই মহান মাসের যথাযোগ্য মর্যাদা দান ও এর থেকে পূর্ণাঙ্গ ফায়দা অর্জনের জন্য চাই যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি। আসুন, রোজার ইফতার সংক্রান্ত কয়েকটি মাসায়ালা জেনে রাখি।
ইফতার করার বিধান: সূর্যাস্তের পর রোজা ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে কিছু খাওয়াকে ইফতার বলে। ইফতার করা সুন্নাত। খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার শুরু করা উত্তম।
অন্যকে ইফতার করানোর ফজিলত: হাদিস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে তিনটি পুরস্কারে ভূষিত হবে। এক. তার সকল সগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। দুই. জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ মিলবে। তিন. ঐ রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে, এতে রোজাদারের সওয়াবে কোনো কমতি হবে না।
সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের প্রত্যেকের তো এই সামর্থ্য নেই যে, রোজাদারদের ইফতার করাবো। তখন আল্লাহর রাসুল বললেন, যে ব্যক্তি একটি খেজুর দিয়ে বা এক ঢোক পানি দিয়ে কাউকে ইফতার করাবে সেও এ সওয়াব লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পেট ভরে খাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা তাকে হাউজে কাউসার থেকে এমন পানি পান করাবেন, যা পান করার ফলে জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে তার কোনো পিপাসাই লাগবে না। -বায়হাকী
ইফতার করার মুস্তাহাব সময়: সূর্যাস্তের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর দেরী না করে দ্রুত ইফতার করে নেয়া মুস্তাহাব। -সহীহ বুখারী : হাদীস ১৯৫৭, রদ্দুল মুহতার : ৩/৪০০।
মসজিদে ইফতারির আয়োজন করা: রমজান মাসে মসজিদে ইফতারির আয়োজন করা ও এলাকার লোকজন সম্মিলিতভাবে মসজিদে ইফতার করা জায়েজ আছে। তবে এ কারণে মসজিদে শোরগোল করা, মসজিদ ময়লাযুক্ত করা ও মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হয় এমন সকল কাজ করা মসজিদের আদবের পরিপন্থী। ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩২১, রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৪০।
রমজান মাসে মাগরিবের জামাত কতক্ষণ পর করবে: রমজান মাসে ইফতার করে এসে জামাতে শরীক হতে কিছুটা বিলম্ব হয় বিধায় মাগরিবের জামাত আজানের কিছুক্ষণ পরে শুরু করা যাবে। স্থান-কাল ভেদে এর পরিমাণ ১০/১৫ মিনিট বা এর চেয়ে সামান্য বেশ-কমও হতে পারে। -ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/১৫৯।
বিমানে আরোহী ব্যক্তির ইফতারের সময়: ইফতারের আগে বিমানে অনেক উপরে উঠার কারণে যদি সূর্য দেখা যায় তাহলে স্থলের সময় অনুযায়ী ইফতারের সময় হয়ে গেলেও বিমানে আরোহনকারীর জন্য সূর্য দেখা অবস্থায় ইফতার করার অবকাশ নেই। এমতাবস্থায় সূর্যাস্ত নিশ্চিত হওয়ার পরেই সে ইফতার করবে। রদ্দুল মুহতার : ৩/৪০০, আপকে মাসায়িল- : ৩/২৭০।
বিমান চলার কারণে যদি দিন ছোট বা বড় হয়: রোজা রেখে বিমানে পশ্চিম দিকে সফরের কারনে যদি দিন দীর্ঘায়িত হয় তাহলে তার রোজাও দীর্ঘায়িত হবে। হ্যাঁ যদি ২৪ ঘণ্টা পর্যন্তও সূর্য না ডুবে, তাহলে ২৪ ঘণ্টার এতটুকু সময় পূর্বে ইফতার করে নিবে যতটুকু সময়ের মধ্যে প্রয়োজন পরিমাণ খানা-পিনা করা যায়। পক্ষান্তরে যদি রোজা রেখে বিমানে পূর্ব দিকে সফরের কারণে দিন ছোট হয়ে যায় তাহলে যখন সুর্য ডুবে যাবে তখনই সে ইফতার করে নিবে। -আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৭০-৭১, জাদীদ ফিকহী মাসায়িল : ১/১৭৮।
ইফতারের দুয়া: হাদিসে বর্ণিত আছে, ইফতারের পূর্বমুহূর্তে দুয়া কবুল হয়, তাই ইফতারের পূর্বমুহূর্তে বেশি বেশি দুয়া করার প্রতি মনোনিবেশ করা চাই। নিচের দয়াটিও বিশেষভাবে পড়া যায়-
اَلْحَمْدُ للهِ اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْئَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْئٍ أنْ تَغْفِرَلِيْ.
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্ববেষ্টিত রহমতের উসীলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
-সুনানে ইবনে মাজাহ্ : হাদীস নং- ১৭৫৩।
ইফতারের সময় এই দুয়া পড়বে-
أللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلى رِزْقِكَ أفْطَرْتُ.
‘হে আল্লাহ! তোমার জন্যই রোজা রেখেছি ও তোমার রিজিক দ্বারাই ইফতার করেছি।’ -সুনানু আবী দাউদ : হাদীস নং- ২৩৫৮।
ইফতারের পর এই দুয়া পড়বে-
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأجْرُ إنْ شَاءَ اللهُ.
‘পিপাসা মিটে গিয়েছে, শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ চাহে তো রোজার সওয়াবও লেখা হয়ে গিয়েছে।’ -সুনানু আবী দাউদ : হাদীস নং- ২৩৫৭।
অন্যের ঘরে মেহমান হয়ে ইফতার করলে এই দুয়াটি পড়বে-
أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ.
‘নেক বান্দাগণ তোমাদের খাবার খেয়েছেন, ফিরিশতাগণ তোমাদের জন্য দুয়া করেছেন এবং রোজাদাররা তোমাদের ঘরে ইফতার করেছেন। -সুনানে আবু দাউদ : হাদীস- ৩৮৫৪।
লেখক: নায়েবে মুফতি, ইসলামিক ফিক্হ একাডেমী, মজুমদার কমপ্লেক্স, কাজলা ব্রীজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।