পবিত্র রমজানে ওমরাহ যাত্রী বাড়ছে তিনগুণ

  • Update Time : ০৯:৫২:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ মার্চ ২০২২
  • / 246

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা মহামারির কারণে বিগত দুই বছর পবিত্র মাহে রমজানে বিদেশিদের ওমরাহ গমন বন্ধ রেখেছিল সৌদি সরকার। এ বছর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। ওমরাহ পালনের দ্বার অবারিত করা হয়েছে। মুক্ত হয়েছে বিধিনিষেধ। অনেকে হজের ফজিলত পাওয়ার আশায় রমজানে ওমরাহ করতে চান। ফলে এবার বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রী বাড়ছে দুই-তিন গুণ। ওমরাহ ভিসা নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। অতি সহজে ভিসা পেলেও মুসল্লিরা পর্যাপ্ত ফ্লাইটের অভাব এবং টিকিটের ভয়াবহ সংকটের কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন। টিকিটেরও অগ্নিমূল্য। করোনা শুরুর আগে সৌদি আরবে যাতায়াতের যে টিকিট ছিল ৫০ হাজার টাকার মধ্যে তা এখন লাখের ওপর।

সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইটের বাইরে থার্ড ক্যারিয়ার না থাকায় টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। টিকিট যেন এখন ‘সোনার হরিণ’। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে প্রতিদিন সৌদি আরবে গমনের টিকিটের চাহিদা ৫ হাজারের বেশি। কিন্তু দেড় হাজারের বেশি টিকিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। টিকিটের একটি বড় অংশ উচ্চমূল্যে কিনে নিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। দ্রুত এই সংকট সমাধানে ফ্লাইটসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে গতকাল চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (হজ-২) এসএম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ওমরা যাত্রীসহ আগামী হজ মওসুমে হজযাত্রীদের নির্বিঘ্নে সৌদি আরবে গমন-প্রত্যাগমন নিশ্চিত করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটসংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। করোনা পূর্ববর্তী সময়ের মতো মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে চলাচলকারী বিমানের ট্রানজিট যাত্রী হয়ে ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরবে গমনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে সৌদি আরবের অন্যান্য এয়ারলাইনসকে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নেতারা বলছেন, ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির বাইরে বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনসের একচেটিয়া ব্যবসা করার মনোবৃত্তিও এ সংকটের জন্য দায়ী। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দুই দেশের পতাকাবাহী রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্হা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদিয়ার বাইরে অন্য কোনো এয়ারলাইনস ওমরাহ যাত্রী বহন করতে পারবে না বলে সৌদি সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের কারণে সংকট আরো বেড়েছে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ রোজায় ওমরাহ পালনে যেতে চান। তার ওপর গত দুই বছর তারা যেতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই তারা হজ এজেন্সিগুলোতে ভিড় করছেন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে এয়ারলাইনস হিসেবে শুধু বিমান এবং সৌদিয়া থাকার কারণে যাত্রীরা অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। সরাসরি ফ্লাইটের বাইরে সৌদি আরব ওমরাহ যাত্রীদের দেশটিতে ঢুকতে দেবে না। অথচ বাংলাদেশ বাদে অন্য দেশের সাধারণ যাত্রীরা বিভিন্ন দেশের ট্রানজিট নিয়ে সৌদিতে ঠিকই ঢুকছেন। কঠিন নিয়মের কারণে বাংলাদেশ ভুগছে।

তসলিম বলেন, এই সমস্যা সমাধানে ফ্লাইট বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এজন্য দুই দেশের আরো যে এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো আছে সেগুলোকেও দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেওয়া জরুরি। এতে সেবার মান বাড়বে এবং সংকটও হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে টিকিটের দাম কমে আসবে এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধ হবে।

Please Share This Post in Your Social Media


পবিত্র রমজানে ওমরাহ যাত্রী বাড়ছে তিনগুণ

Update Time : ০৯:৫২:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনা মহামারির কারণে বিগত দুই বছর পবিত্র মাহে রমজানে বিদেশিদের ওমরাহ গমন বন্ধ রেখেছিল সৌদি সরকার। এ বছর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। ওমরাহ পালনের দ্বার অবারিত করা হয়েছে। মুক্ত হয়েছে বিধিনিষেধ। অনেকে হজের ফজিলত পাওয়ার আশায় রমজানে ওমরাহ করতে চান। ফলে এবার বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রী বাড়ছে দুই-তিন গুণ। ওমরাহ ভিসা নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। অতি সহজে ভিসা পেলেও মুসল্লিরা পর্যাপ্ত ফ্লাইটের অভাব এবং টিকিটের ভয়াবহ সংকটের কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন। টিকিটেরও অগ্নিমূল্য। করোনা শুরুর আগে সৌদি আরবে যাতায়াতের যে টিকিট ছিল ৫০ হাজার টাকার মধ্যে তা এখন লাখের ওপর।

সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইটের বাইরে থার্ড ক্যারিয়ার না থাকায় টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। টিকিট যেন এখন ‘সোনার হরিণ’। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে প্রতিদিন সৌদি আরবে গমনের টিকিটের চাহিদা ৫ হাজারের বেশি। কিন্তু দেড় হাজারের বেশি টিকিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। টিকিটের একটি বড় অংশ উচ্চমূল্যে কিনে নিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। দ্রুত এই সংকট সমাধানে ফ্লাইটসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে গতকাল চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (হজ-২) এসএম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ওমরা যাত্রীসহ আগামী হজ মওসুমে হজযাত্রীদের নির্বিঘ্নে সৌদি আরবে গমন-প্রত্যাগমন নিশ্চিত করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটসংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। করোনা পূর্ববর্তী সময়ের মতো মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে চলাচলকারী বিমানের ট্রানজিট যাত্রী হয়ে ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরবে গমনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে সৌদি আরবের অন্যান্য এয়ারলাইনসকে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নেতারা বলছেন, ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির বাইরে বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনসের একচেটিয়া ব্যবসা করার মনোবৃত্তিও এ সংকটের জন্য দায়ী। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দুই দেশের পতাকাবাহী রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্হা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদিয়ার বাইরে অন্য কোনো এয়ারলাইনস ওমরাহ যাত্রী বহন করতে পারবে না বলে সৌদি সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের কারণে সংকট আরো বেড়েছে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ রোজায় ওমরাহ পালনে যেতে চান। তার ওপর গত দুই বছর তারা যেতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই তারা হজ এজেন্সিগুলোতে ভিড় করছেন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে এয়ারলাইনস হিসেবে শুধু বিমান এবং সৌদিয়া থাকার কারণে যাত্রীরা অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। সরাসরি ফ্লাইটের বাইরে সৌদি আরব ওমরাহ যাত্রীদের দেশটিতে ঢুকতে দেবে না। অথচ বাংলাদেশ বাদে অন্য দেশের সাধারণ যাত্রীরা বিভিন্ন দেশের ট্রানজিট নিয়ে সৌদিতে ঠিকই ঢুকছেন। কঠিন নিয়মের কারণে বাংলাদেশ ভুগছে।

তসলিম বলেন, এই সমস্যা সমাধানে ফ্লাইট বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এজন্য দুই দেশের আরো যে এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো আছে সেগুলোকেও দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেওয়া জরুরি। এতে সেবার মান বাড়বে এবং সংকটও হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে টিকিটের দাম কমে আসবে এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধ হবে।