রংপুরের কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে বিএমডিএ’র ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প
- Update Time : ১২:০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মে ২০২১
- / 196
রংপুর প্রতিনিধি:
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। এই প্রকল্পে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন পরিত্যক্ত খাল-বিল, পুকুর ও নদ-নদী পুনঃখননের মাধ্যমে এসবের ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ধারনা করেন।
২৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকারও বেশি ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন ও বিদ্যুৎতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সেইসাথে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক লাখ বৃক্ষরোপণে গড়ে উঠবে বনায়ন এলাকা।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছেন এ প্রকল্পের আওতায় রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার ৩৫টি উপজেলা সেচ সম্প্রসারণ সুবিধার আওতায় আসবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, পাঁচ বছরে ২৩০ কিলোমিটার খাল, ১১টি বিল, ১১৮টি পুকুর পুনঃখনন করে সঞ্চিত ও ধারণকৃত পানির সাহায্যে প্রায় ১০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও ১৩০টি এলএলপিতে ১৩০ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ করে সেচের পানির অপচয় রোধের মাধ্যমে কৃষকের সেচ ব্যয় হ্রাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।
তিনি আরও জানান, পুনঃখনন করা হলে বিদ্যমান জলাবদ্ধতা দূর হবে। এতে ৩৫০ হেক্টর অনাবাদি পরিত্যক্ত জমি চাষের উপযোগী করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ২ লাখ ৩০ হাজার বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ এবং ওষুধি গাছের চারা রোপন করে পরিবেশবান্ধব ভূ-কাঠামো গড়ে উঠবে। শুধু তাই নয় প্রকল্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত বনজ সম্পদ সৃষ্টি ও পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন এবং পুষ্টিরমান বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
কর্মপরিকল্পনার আওতায় প্রকল্প এলাকায় ২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরশক্তি চালিত এলএলপি ৩০টি, বিদ্যুৎচালিত এলএলপি ১০০টি, সৌরশক্তিচালিত ৫০টি পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প পানিগ্রাহী ফসল উৎপাদনের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে।
এ প্রকল্পে সৌরশক্তিচালিত পাতকুয়া খনন হলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১০টি নিজস্ব বিভাগীয়, রিজিওনাল এবং জোনাল অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
এদিকে চলতি অর্থবছরে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রকল্পের চলমান কার্যক্রমে ইতোমধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শালমারা খাল, বদরগঞ্জ উপজেলার মরাতিস্তা ও ঘৃনাই নদী, পীরগঞ্জ উপজেলার চতরাখাল, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বোয়ালের দাড়াখালসহ ১৮ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে।
এছাড়া মিঠাপুকুরের ষষ্ঠীছড়ার বিল, বদরগঞ্জের ভাড়ারদহ বিলসহ ১২টি পুকুর খনন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ইতোমধ্যে ১০টি বিদ্যুৎচালিত ও ১০টি সৌরচালিত এলএলপি স্থাপন, ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ২০টি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ, ১০টি পাতকুয়া নির্মাণ, ৪০ হাজার বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ এবং ওষুধি গাছের চারা রোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বিএমডিএ সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের চলমান কার্যক্রমে প্রায় ৫০০ হেক্টর অনাবাদি জমি এরই মধ্যে সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। অবশিষ্ট কাজ জুন মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এছাড়াও দুই জেলায় তিনটি অফিস ভবন নির্মাণ কাজও প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সৌরশক্তিচালিত ৮০টি সেচযন্ত্র স্থাপনে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৭০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে সেচ সুবিধা তরান্বিত হবে। কৃষির জন্য পরিবেশবান্ধব আবহ সৃষ্টি ও বিদ্যুতের ওপর চাপ হ্রাস পাবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান খান বলেন, দেশে অসংখ্য খাল, বিল, পুকুর, নদ ও নদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটা সময় এসব জলাভূমি স্থানীয়ভাবে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যাপক ব্যবহার ছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন খাল, বিল, পুকুর, নদ-নদী ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ ও ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। এখন প্রতিবছর অনাকাঙিক্ষত অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে। বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে জমা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষি ও কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটছে।
সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উত্তরণ ও সেচ সম্প্রসারণে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিএমডিএর মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বায়স্তবায়ন হলে পানির অপচয় রোধ, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি ও ফসল উৎপাদনে ব্যয় হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ৩০ শতাংশ উন্নীত করা সহজ হবে এবং ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’র অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ।