পঞ্চগড়ের রাজসিক সৌন্দর্যের টিউলিপ চাষে ব্যাপক সাড়া
- Update Time : ১১:৫৪:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২
- / 201
পঞ্চগড় সংবাদদাতা।।
মাঠের যত দূর চোখ যায় সবুজ ক্ষেত। এর মধ্যে কয়েকটি বেড লাল রঙে ছেয়ে গেছে। বেডে বেডে ফুটেছে রাজসিক সৌন্দর্যের ফুল টিউলিপ। সাধারণত সিনেমায়, ক্যালেন্ডারে এমন টিউলিপ ফুলের ছবির দেখা মেলে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের আবহাওয়াতেও দেখা মিলছে টিউলিপের। গাজীপুরের দেলোয়ার হোসেনের পর এবার টিউলিপ ফুল চাষ করে সাড়া ফেলেছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আট নারী।
দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শারিয়ালজোত ও দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ ফুল উৎপাদিত হচ্ছে। শীতপ্রধান এলাকা হওয়ায় এই অঞ্চলে টিউলিপ ফুলের বিপ্লব ঘটানোর স্বপ্ন দেখছেন এখানকার চাষিরা।
পঞ্চগড় জেলায় শীত মৌসুমে তাপমাত্রা কম থাকায় এখানে টিউলিপ ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে প্রমাণ করেছেন তেঁতুলিয়ার মুক্তা বেগম, আনোয়ারা বেগম, সুমি আক্তার, আয়শা বেগম, হোসনে আরা বেগম, মনোয়ারা বেগম, মোর্শেদা বেগম ও সাজেদা বেগম। এরা সবাই ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) সদস্য। এই আট জন নারী চাষির ৪০ শতাংশ জমিতে এবারই প্রথম রাজসিক সৌন্দর্যের ফুল টিউলিপ উত্পাদন করছেন।
ইএসডিও ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে শ্রম ও মেধা খাটিয়ে ফুল চাষে সফল হয়েছেন তারা। প্রথম বারেই পেয়েছেন সফলতা। মাত্র ১৬ দিনের পরিচর্যায় ফুলের কলি এসেছে। ২০-২১ দিনের মধ্যেই ফুল ফুটতে শুরু করে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পুরো বাগান নানা রঙের ফুলে ফুলে ভরে উঠবে।
ফুলচাষিরা জানান, তারা বিভিন্ন প্রজাতির ১২টি রঙের টিউলিপ চাষ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্ট্রাকটিকা (হোয়াইট), ডাচ সানরাইজ (ইয়েলো), পারপেল প্রিন্স (পারপেল), টাইমলেস (রেড হোয়াইট শেডি), মিল্কসেক (লাইট পিংক), বারসেলোনা (ডার্ক পিংক), অ্যাড রেম (অরেঞ্জ), লালিবেলা (রেড), দি ফ্রান্স (রেড), রিপ্লে (অরেঞ্জ), ডেনমার্ক (অরেঞ্জ) ও স্ট্রং গোল্ড (ইয়েলো)।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সারি সারি টিউলিপ ফুল ফুটে রয়েছে। একের পর এক প্রজাতির টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। কোনোগুলোর কলি বের হয়েছে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক সবুজ ছাউনির ভেতরে টিউলিপের চাষ করা হয়েছে। টিউলিপের হাসিতে উত্ফুল্ল চাষিরাও। তারা এখন স্বপ্ন দেখছেন বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষ করার। সেইসঙ্গে আগামী বছর প্রায় পাঁচ একর জমিতে টিউলিপের চাষ করার কথা জানিয়েছেন তারা। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দলবেঁধে মানুষ ভিড় করছে টিউলিপ ফুল দেখতে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় ইএসডিও দেশের উত্তরাঞ্চলে টিউলিপ ফুল চাষ সম্প্রসারণের উপযোগিতা নির্ণয় শীর্ষক ভ্যালুচেইন পাইলটিং প্রকল্পের আওতায় এই আট নারী টিউলিপ ফুল চাষ করছেন। ইএসডিওর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, এই উদ্যোগটি ইতিমধ্যেই সাফল্য পেয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ে টিউলিপ চাষ সম্ভব হয়েছে।
ইএসডিওর সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ও টিউলিপ ফুল চাষ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. আইনুল হক জানান, মাত্র দুই মাসে প্রতি শতকে খরচ বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকা লাভ হবে কৃষকের। পাইলট প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ভবিষ্যতে ১ হাজার চাষিকে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে। বিদেশ থেকে টিউলিপ ফুলের শুল্কমুক্ত বীজ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা গেলে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
পিকেএসএফের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (কার্যক্রম) ড. আকন্দ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিকেএসএফ দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে আসছে। এর পাশাপাশি পিকেএসএফ বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ মূল্যের ফুল ও ফসল চাষাবাদে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তেঁতুলিয়ার আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।