মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার: প্রস্তুত দুই সহস্রাধিক বাংলাদেশি কর্মী
- Update Time : ১১:০৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০২২
- / 368
মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য দুই হাজারের বেশি কর্মী প্রস্তুত। বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত ২৫টি শ্রম সংস্থার মধ্যে ১৫টি যাচাইকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগের জন্য প্রস্তুত, এমনটি জানিয়েছে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়।
বৃহম্পতিবার (১৪ জুলাই) এক বিবৃতিতে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, পূর্ববর্তী প্রযুক্তিগত সমস্যা, যেগুলো দেশে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে বিলম্ব করেছিল তা সমাধান করা হয়েছে।
আগ্রহী নিয়োগকর্তা, যারা শুল্ক পরিশোধ করেছেন এবং বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ করতে চাইছেন, তারা কর্মসংস্থান এবং কাজের ভিসার ডকুমেন্টেশন নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ হাইকমিশনে তাদের আবেদন পাঠাতে পারেন।
তবে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে মান সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ দ্বারা নির্ধারিত ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সম্মতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মানব সম্পদমন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হাইকমিশন দেশের অবশিষ্ট ১০টি শ্রম সংস্থার যাচাইকরণ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া যাওয়ার পথ আবার খুলেছে। জনবল নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র জমা দেওয়া মালয়েশিয়ার ১৮টি কোম্পানি পরিদর্শন করে জনবল নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন। বিষয়টি হাইকমিশন থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই বাংলাদেশের কর্মী নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে উড়বে ফ্লাইট।
১৩ জুলাই কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো দুটি চিঠিতে দেখা যায়, নিয়োগদাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রেডউড ফার্নিচার ১৫০ জন ও আশুকা ইন্ডাস্ট্রিজ এন্টারপ্রাইজ ১০০ জন বাংলাদেশি কর্মী নিচ্ছে। দুটি কোম্পানিরই চাহিদাপত্র সত্যায়ন হয়েছে। রেডউড ফার্নিচার কোম্পানিতে জনবল সরবরাহ করবে নিউএজ ইন্টারন্যাশনাল (০৭০৩) নামে রিক্রুটিং এজেন্সি।
বুধবার প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. শওকত হোসেন শিকদার বলেন, অবশেষে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবারও বাংলাদেশি কর্মী ঢুকছে, এটা অনেক খুশির সংবাদ। প্রথমে শুনেছিলাম ছয়টি কোম্পানির ডিমান্ড লেটার সত্যায়ন হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম ১৮টি কম্পানির ডিমান্ড লেটার সত্যায়ন প্রক্রিয়াধীন। সেটা হলে এ ধাপেই দেড়-দুই হাজার কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। আমরা ১৫০ জন কর্মী পাঠাচ্ছি। ১৩ জুলাই বুধবার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে অনুমতির জন্য সবধরনের কাগজপত্র জমা দিয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, অনুমতি পেলেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করবো। সব কিছু ঠিক থাকলে এ মাসেই কর্মী নিয়ে ফ্লাইট যাবে। ডিমান্ড লেটার সত্যায়নের পর আর কোনো ঝামেলা হবে না বলে মনে করছি।
২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার ৪০ মাস পর গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। গত মাসে ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে শ্রমবাজার খোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে জুনের মধ্যে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে ঘোষণা দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতা কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের।
এজেন্সির সংখ্যা নিয়ে দীর্ঘ সময় পার করে দেয় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ার হাইকমিশন। মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তাদের ডিমান্ড লেটার সত্যায়নের পরিবর্তে কখনো মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন, কখনো ডাটা ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগে বাধ্যবাধকতা, কখনো র্যান্ডম স্যাম্পলিং, কখনো-বা মালয়েশিয়ার কাছে মন্ত্রণালয়ের নতুন সিস্টেম সমন্বয় করার প্রস্তাব করা হয়।
ফলে দীর্ঘসূত্রিকা বাড়তে থাকে। এতে নেপাল থেকে কর্মী নেওয়ার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা। অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মালয়েশিয়ায় জনবল পাঠানোর দরজা এবার খুলেছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। তাদের যে চাহিদা তাতে এবার মালয়েশিয়ায় আরও প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি কর্মী যেতে পারবেন।