নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করছে : মির্জা ফখরুল

  • Update Time : ০৫:১৩:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪
  • / 32

 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনির্বাচিত ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতার ভিত নড়িয়ে দিয়েছে। এখন আন্দোলনের সমন্বয়কারীদেরকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে, চাপ প্রয়োগ করে, নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করছে। কিন্তু আবেগ-অনুভূতি এবং সঙ্গীদের রক্ত মাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সবসময় তাড়া করবে, সুযোগ পেলেই তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।

তিনি বলেন, আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা নিহত কিংবা আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে হয়েছেন।

সোমবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, যেসব ছাত্র-জনতাকে হতাহত করা হয়েছে তাদের পরিবারকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেছে। সরকারের নির্দেশে মৃতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। অনেককে ময়না তদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চলমান আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এর সংখ্যা অনেক বেশী। কিশোর ও আগে নিহতের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

নিম্ন আদালতে ঢালাও রিমান্ড দেওয়া সম্পূর্ণ আইনবিরোধী উল্লেখ করে রিমান্ডে নেওয়া বন্ধ করার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং জামায়াতের গোলাম পরওয়ারকে আবারও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনা আতঙ্কজনক। বারবার রিমান্ডে নেওয়া এবং রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন সংবিধান বিরোধী।

বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান না পাওয়ার ঘটনাকে গভীর উদ্বেগজনক আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তাদেরকে জনসমক্ষে হাজির করার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্র-জনতা এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও পেশাজীবীদেরকে নির্বিচারে গ্রেফতার, গুম করে রাখা, নির্যাতনের পর পুনরায় নির্যাতনের লক্ষ্যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বারবার রিমান্ডে নেয়া, গ্রেফতারকৃতদের ওপর সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর ঘটনাকে বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এসব দমন নিপীড়ন বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভয়-ভীতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়নের সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না, তবে বিভিন্নভাবে যে সকল তথ্য আসছে সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে এবং একইসঙ্গে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকদেরকেও বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে ও কারফিউ চলাকালে আইন শৃঙ্খলা-বাহিনী দ্বারা ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রেফতারকৃত অনেককে ৪/৫ দিন বা এরও বেশী সময় পর আদালতে নেয়া হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আটক করার পর আদালতে নেয়ার আগে এবং রিমান্ডে থাকা অবস্থায়, এমনকি কারাগারে থাকা অবস্থায় আটককৃতদের ওপর অমানুষিক ও অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থী বা নেতাকর্মীদের আটক করতে বাসা বাড়িতে অভিযানের নামে পরিবারের সদস্যদের সাথেও অশালীন আচরণ ও বাসার আসবাবপত্র ভাংচুর করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media


নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করছে : মির্জা ফখরুল

Update Time : ০৫:১৩:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪

 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনির্বাচিত ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতার ভিত নড়িয়ে দিয়েছে। এখন আন্দোলনের সমন্বয়কারীদেরকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে, চাপ প্রয়োগ করে, নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করছে। কিন্তু আবেগ-অনুভূতি এবং সঙ্গীদের রক্ত মাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সবসময় তাড়া করবে, সুযোগ পেলেই তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।

তিনি বলেন, আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা নিহত কিংবা আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে হয়েছেন।

সোমবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, যেসব ছাত্র-জনতাকে হতাহত করা হয়েছে তাদের পরিবারকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেছে। সরকারের নির্দেশে মৃতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। অনেককে ময়না তদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চলমান আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এর সংখ্যা অনেক বেশী। কিশোর ও আগে নিহতের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

নিম্ন আদালতে ঢালাও রিমান্ড দেওয়া সম্পূর্ণ আইনবিরোধী উল্লেখ করে রিমান্ডে নেওয়া বন্ধ করার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং জামায়াতের গোলাম পরওয়ারকে আবারও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনা আতঙ্কজনক। বারবার রিমান্ডে নেওয়া এবং রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন সংবিধান বিরোধী।

বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান না পাওয়ার ঘটনাকে গভীর উদ্বেগজনক আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তাদেরকে জনসমক্ষে হাজির করার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্র-জনতা এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও পেশাজীবীদেরকে নির্বিচারে গ্রেফতার, গুম করে রাখা, নির্যাতনের পর পুনরায় নির্যাতনের লক্ষ্যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বারবার রিমান্ডে নেয়া, গ্রেফতারকৃতদের ওপর সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর ঘটনাকে বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এসব দমন নিপীড়ন বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভয়-ভীতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়নের সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না, তবে বিভিন্নভাবে যে সকল তথ্য আসছে সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে এবং একইসঙ্গে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকদেরকেও বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে ও কারফিউ চলাকালে আইন শৃঙ্খলা-বাহিনী দ্বারা ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রেফতারকৃত অনেককে ৪/৫ দিন বা এরও বেশী সময় পর আদালতে নেয়া হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আটক করার পর আদালতে নেয়ার আগে এবং রিমান্ডে থাকা অবস্থায়, এমনকি কারাগারে থাকা অবস্থায় আটককৃতদের ওপর অমানুষিক ও অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থী বা নেতাকর্মীদের আটক করতে বাসা বাড়িতে অভিযানের নামে পরিবারের সদস্যদের সাথেও অশালীন আচরণ ও বাসার আসবাবপত্র ভাংচুর করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে।