রাষ্ট্র কাঠামোই ধ্বংস করেছে হাসিনা

  • Update Time : ১১:৫৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / 25

ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, তখন দেশের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ক্ষমতায় থাকার জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগের ভঙ্গুর অবস্থা। গণতান্ত্রিক অধিকারকে ১৫ বছর ধরে দমনের মাধ্যমে খর্ব করা হয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। নতুন প্রজন্ম ভোট ছাড়াই বেড়ে উঠছিল। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের কোষাগার শেষ করা হয়েছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কূটনীতিকদের ব্রিফ করার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারসহ জাতিসংংঘ এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ৫০ জন মিশন প্রধান যোগ দেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লাখো জনতার অভ্যুত্থানে চরম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু যাওয়ার আগে নিরাপত্তা বাহিনী এবং শেখ হাসিনার ছাত্র সংগঠন স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য বেসামরিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের সময়ে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেটির পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্কের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চাই আমরা। এর জন্য জাতিসংঘের তদন্তকারী দলকে আমরা সব ধরনের সহায়তা দেবো।

ছাত্রদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন জানিয়ে ড. ইউনূস বিদেশিদের বলেন, আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, তখন দেশের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এখন ক্লোজ টু নরমালসি এসেছে। পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোই অন্তর্বর্তী সরকারের এখনকার প্রায়োরিটি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের কারণে দেশে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। সর্বত্রই অনিয়ম আর দুর্নীতি। সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। এটা ঠিক করতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি বলেন, আশা করি নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে সকলেই পাশে থাকবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সরকারের অগ্রাধিকার হলো- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা। দুর্নীতির কারণে দেশের সব শেষ হয়ে গেছে। বিচার বিভাগ ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে, পাতানো নির্বাচন করা হয়েছে। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে তরুণ সমাজ বেড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যাংক ডাকাতি করা হয়েছে।

সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি নতুন সূচনার বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে। একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। আমাদের বীর ছাত্র-জনতা চায় রাষ্ট্রকাঠামোর দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন। শিক্ষার্থীরা চায় অর্থবহ ও আমূল সংস্কার, যার মাধ্যমে দেশে প্রকৃত ও সমৃদ্ধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখছে যেখানে জনগণ তাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে এবং মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে সক্ষম হবে এবং সরকার গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে। এতে আমাকে সফল হতেই হবে। আর কোনো বিকল্প নেই। ড. ইউনূস বলেন, এটি একটি কঠিন যাত্রা, কাজটি বিশাল। কিন্তু দেশের সব নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় এটা সম্ভব। তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে হবে আমাদের। যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই ভালো। দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

ছাত্র আন্দোলনে হতাহতদের কথা স্মরণ করে আবেগঘন হয়ে পড়েন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে ছাত্রদের এত ত্যাগ করতে হয়নি। পৃথিবীর কোথাও নাগরিকরা এতটা মানবাধিকার বঞ্চিত হয়নি, যা বাংলাদেশে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার দলবলের হামলায় ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ মারা গেছে। অনেক ছাত্রের চোখে গুলি লেগেছে। তাদের দেখতে গিয়েছিলাম। জানি না তাদের কী হবে।

প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই নির্বাচন আয়োজন করা হবে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের জনগণ এবং দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর অটল সহযোগিতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। পুলিশ বাহিনীও তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে যতদিন লাগবে ততদিন সশস্ত্র বাহিনী বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে যে দূতাবাসগুলো আছে তার রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের যেসব সংস্থার প্রধান এখানে আছেন তাদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি সবার পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন। শফিকুল আলম বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পলায়নের পর ৮ তারিখ দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর থেকে তিনি সারাবিশ্ব থেকে প্রচুর মেসেজ (বার্তা) পাচ্ছেন, সবাই ওনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তিনি সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পুনর্নির্মাণের জন্য তিনি তাদের পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন।

প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- এটা দ্বিতীয় রেভ্যুলেশন ছিল। এখানে এত মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল যে তিনি বলেছেন ১৯৭১ সালে যদি প্রথম রেভ্যুলেশন হয় এটা দ্বিতীয় রেভ্যুলেশন। তার বার্তা ছিল দ্রুত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা। উনি নির্বাচনটি তখনই করবেন যখন প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায়। বিচার বিভাগ, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সিকিউরিটি ফোর্স, মিডিয়া- সব কিছুতে সংস্কার চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন করে যত দ্রুত নির্বাচন দেওয়া যায় সেটি তার লক্ষ্য। তিনি বলেছেন এখন প্রধান কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। সেটি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।

ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, তিনি খুব দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেটটা হচ্ছে- নির্বাচনটা তখনই করবেন যখন রিফর্মগুলো ক্যারি আউট করা যায়। যেটা জুডিশিয়ারি থেকে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সিকিউরিটি ফোর্স কিংবা মিডিয়াতে। সমস্ত কিছু রিফর্ম অ্যাড্রেস করার পর যত দ্রুত নির্বাচন করতে পারে, এটা হচ্ছে ওনাদের মূল কাজ।
কূটনীতিকরা কোনো প্রশ্ন করেছেন কি না- জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে প্রেস সচিব বলেন, প্রশ্ন-উত্তর ছিল না। উনি সমর্থন চেয়েছেন। বাংলাদেশকে পুনর্নিমাণে পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন।

প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশ যত আন্তর্জাতিক অ্যাগ্রিমেন্ট করেছে, তার যত লিগ্যাল অবলিগেশন আছে সেগুলো ফুলফিল করা হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ, গ্লোবাল এজেন্সিসহ পার্টনাদের রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে সহায়তা অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করেছেন তিনি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ওনারা এখন জোর দিচ্ছেন ম্যাক্রো ইকোনমিক স্টাবিলিটি নিশ্চিত করার ওপর।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


রাষ্ট্র কাঠামোই ধ্বংস করেছে হাসিনা

Update Time : ১১:৫৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪

ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, তখন দেশের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ক্ষমতায় থাকার জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগের ভঙ্গুর অবস্থা। গণতান্ত্রিক অধিকারকে ১৫ বছর ধরে দমনের মাধ্যমে খর্ব করা হয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। নতুন প্রজন্ম ভোট ছাড়াই বেড়ে উঠছিল। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের কোষাগার শেষ করা হয়েছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কূটনীতিকদের ব্রিফ করার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারসহ জাতিসংংঘ এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ৫০ জন মিশন প্রধান যোগ দেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লাখো জনতার অভ্যুত্থানে চরম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু যাওয়ার আগে নিরাপত্তা বাহিনী এবং শেখ হাসিনার ছাত্র সংগঠন স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য বেসামরিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের সময়ে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেটির পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্কের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চাই আমরা। এর জন্য জাতিসংঘের তদন্তকারী দলকে আমরা সব ধরনের সহায়তা দেবো।

ছাত্রদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন জানিয়ে ড. ইউনূস বিদেশিদের বলেন, আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, তখন দেশের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এখন ক্লোজ টু নরমালসি এসেছে। পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোই অন্তর্বর্তী সরকারের এখনকার প্রায়োরিটি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের কারণে দেশে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। সর্বত্রই অনিয়ম আর দুর্নীতি। সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। এটা ঠিক করতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি বলেন, আশা করি নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে সকলেই পাশে থাকবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সরকারের অগ্রাধিকার হলো- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা। দুর্নীতির কারণে দেশের সব শেষ হয়ে গেছে। বিচার বিভাগ ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে, পাতানো নির্বাচন করা হয়েছে। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে তরুণ সমাজ বেড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যাংক ডাকাতি করা হয়েছে।

সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি নতুন সূচনার বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে। একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। আমাদের বীর ছাত্র-জনতা চায় রাষ্ট্রকাঠামোর দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন। শিক্ষার্থীরা চায় অর্থবহ ও আমূল সংস্কার, যার মাধ্যমে দেশে প্রকৃত ও সমৃদ্ধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখছে যেখানে জনগণ তাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে এবং মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে সক্ষম হবে এবং সরকার গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে। এতে আমাকে সফল হতেই হবে। আর কোনো বিকল্প নেই। ড. ইউনূস বলেন, এটি একটি কঠিন যাত্রা, কাজটি বিশাল। কিন্তু দেশের সব নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় এটা সম্ভব। তাদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে হবে আমাদের। যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই ভালো। দারিদ্র্যমুক্ত ও সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

ছাত্র আন্দোলনে হতাহতদের কথা স্মরণ করে আবেগঘন হয়ে পড়েন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে ছাত্রদের এত ত্যাগ করতে হয়নি। পৃথিবীর কোথাও নাগরিকরা এতটা মানবাধিকার বঞ্চিত হয়নি, যা বাংলাদেশে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার দলবলের হামলায় ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ মারা গেছে। অনেক ছাত্রের চোখে গুলি লেগেছে। তাদের দেখতে গিয়েছিলাম। জানি না তাদের কী হবে।

প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই নির্বাচন আয়োজন করা হবে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের জনগণ এবং দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর অটল সহযোগিতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। পুলিশ বাহিনীও তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে যতদিন লাগবে ততদিন সশস্ত্র বাহিনী বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে যে দূতাবাসগুলো আছে তার রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের যেসব সংস্থার প্রধান এখানে আছেন তাদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি সবার পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন। শফিকুল আলম বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পলায়নের পর ৮ তারিখ দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর থেকে তিনি সারাবিশ্ব থেকে প্রচুর মেসেজ (বার্তা) পাচ্ছেন, সবাই ওনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তিনি সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পুনর্নির্মাণের জন্য তিনি তাদের পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন।

প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- এটা দ্বিতীয় রেভ্যুলেশন ছিল। এখানে এত মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল যে তিনি বলেছেন ১৯৭১ সালে যদি প্রথম রেভ্যুলেশন হয় এটা দ্বিতীয় রেভ্যুলেশন। তার বার্তা ছিল দ্রুত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা। উনি নির্বাচনটি তখনই করবেন যখন প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায়। বিচার বিভাগ, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সিকিউরিটি ফোর্স, মিডিয়া- সব কিছুতে সংস্কার চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন করে যত দ্রুত নির্বাচন দেওয়া যায় সেটি তার লক্ষ্য। তিনি বলেছেন এখন প্রধান কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। সেটি অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।

ড. ইউনূসকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব বলেন, তিনি খুব দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেটটা হচ্ছে- নির্বাচনটা তখনই করবেন যখন রিফর্মগুলো ক্যারি আউট করা যায়। যেটা জুডিশিয়ারি থেকে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সিকিউরিটি ফোর্স কিংবা মিডিয়াতে। সমস্ত কিছু রিফর্ম অ্যাড্রেস করার পর যত দ্রুত নির্বাচন করতে পারে, এটা হচ্ছে ওনাদের মূল কাজ।
কূটনীতিকরা কোনো প্রশ্ন করেছেন কি না- জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে প্রেস সচিব বলেন, প্রশ্ন-উত্তর ছিল না। উনি সমর্থন চেয়েছেন। বাংলাদেশকে পুনর্নিমাণে পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন।

প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশ যত আন্তর্জাতিক অ্যাগ্রিমেন্ট করেছে, তার যত লিগ্যাল অবলিগেশন আছে সেগুলো ফুলফিল করা হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ, গ্লোবাল এজেন্সিসহ পার্টনাদের রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে সহায়তা অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করেছেন তিনি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ওনারা এখন জোর দিচ্ছেন ম্যাক্রো ইকোনমিক স্টাবিলিটি নিশ্চিত করার ওপর।