কানাডায় বিলাসবহুল বাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক মতিউরের স্ত্রী

  • Update Time : ০৮:৪৬:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
  • / 44

কানাডায় বিলাসবহুল বাড়িসহ পাল্লা দিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী। দেশে-বিদেশে নিজ নামে রিসোর্টসহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ তার। তিনি নরসিংদী রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান।

লায়লা কানিজ লাকী গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায় বাড়ি-ফ্ল্যাটসহ দেশে বিদেশে স্ত্রী ছেলে ও মেয়ের নামে একাধিক বাড়ি-গাড়ি ও শত শত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। গাজীপুরে ১ শ বিঘা জমির উপর আপন ভুবন নামে একটি রিসোর্টও গড়ে তুলেছেন। সংসারে তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপসিতা নামের দুই সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে আলোচিত ওই তরুণ মুশফিকুর রহমান (ইফাত) মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারের প্রথম সন্তান। দ্বিতীয় স্ত্রী ফেনীর সোনাগাজীর এলাকার শাম্মী আখতার।

লায়লা কানিজ লাকী ছিলেন রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। তার বাবা কফিল উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন একজন খাদ্য কর্মকর্তা। তার চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে লায়লা কানিজ সবার বড়। এ ছাড়া লায়লা একজন রাজাকারের নাতনি। দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আব্দুল কাদির চেয়ারম্যান ছিলেন রাজাকারদের সংগঠন শান্তি কমিটির সদস্য।

এ ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ময়দর আলী দারোগা ছিলেন তৎকালীন চিহ্নিত রাজাকার। এটা সবাই জানে।

লায়লা কানিজ লাকী শিক্ষকতার পাশাপাশি রায়পুরা উপজেলার মরজালে নিজ এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট নামের একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। সেখানেই ২০১৮ সালের একদিন তার সঙ্গে পরিচয় হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজীউদ্দিন আহমেদ রাজুর। ২০২৩ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান মারা গেলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এবং সংসদ সদস্যের প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন লায়লা কানিজ। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক।

লায়লা কানিজের নির্বাচনী হলফনামা থেকে জানা গেছে, তার বাৎসরিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, কৃষিখাত থেকে ১৮ লাখ, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩হাজার ৮৭৫, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, তার অকৃষি জমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫কাঠা, গাজীপুরের পূবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ।

এছাড়াও মতিউর রহমানের বাড়ি বরিশালের মূলাদীতে ১৫ শ বিঘা জমি রয়েছে। গাজীপুরে ১ শ বিঘা জমির উপর আপন ভূবন নামে একটি রিসোর্ট রয়েছেন। তার স্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজের নামে নরসিংদীর মরজালে ৪০ বিঘা জমির উপর মরজালে ওয়ান্ডার পার্ক নামে একটি পার্ক রয়েছে। তার মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে মরজাল বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশ এলাকায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়াও ছেলে আহম্মদ তৌফিক অনুদ ও মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে কমপক্ষে ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় রয়েছে জুতার কারখানা। নাটোরের সিংরায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়াও গাড়ীপুরের পূবাইলে একাধিক রিসোর্টসহ বিস্তৃত পরিমাণ জমি রয়েছে। স্ত্রী লাকির নামে নরসিংদীর রায়পুরায় মরজালে রয়েছে আলিশান বাড়ি। শুধুমাত্র রাজধানীর বসুন্ধরাতেই মতিউর, তার স্ত্রী সন্তান, আত্মীয়দের নামে এবং বেনামে ৪০ টি প্লট আছে। গাজীপুরে রয়েছে মতিউরের জুতার ফ্যাক্টরি। গুলশান-২ এ শাহবুদ্দিন পার্কের উল্টোদিকে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের একটি ভবনে চারটি ফ্ল্যাট ও গুলশানের শান্তা প্রপার্টিজের একটি ভবনে আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও আমেরিকাও রয়েছে মতিউরের স্ত্রীর বিপুল পরিমাণ সম্পদ।

মরজাল বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজ দম্পতির আধুনিক স্থাপত্যের ডুপ্লেক্স বাড়ি। ফটকের বাইরে থেকে দেখা যায়, কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক স্থাপত্যের বাড়িটি বেশ বিলাসবহুল। আলিশান বাড়ির আলিশান গেইট। বাড়ি ভেতরে রয়েছে দেশি-বিদেশি গাছে সারি, সবুজ ঘাসের আঙিনা, পাশে রয়েছে কর্মচারীদের থাকার রুম। স্থানীয়রা জানান- এটা তার পৈত্রিক সম্পত্তি। এখানে পূর্বে তেমন ভাল কোনো দালান ছিল না। প্রায় দুই বছর পূর্বে এ বিলাসবহুল বাড়িটি নির্মাণ করা হয়।

শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে ওই বাড়ির সামনে গেলে ভেতরে ঢুকতে দেননি বাড়ির দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার। এ সময় তিনি তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানিয়ে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এখন বাড়িতে নেই। কোনো দরকার থাকলে রায়পুরা অফিসে যোগাযোগ করুন। এখন এখান থেকে চলে যান। আমার নাম জেনে আপনি কি করবেন। টাকা দিবেন, টাকা দেন বক্তব্য দিবো! শুধু শুধু ছবি তুলেন। কোনো ছবিতে কিংবা ভিডিও করবেন না। সমস্যা হবে, চলে যান।

অন্যদিকে, ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্টে গিয়ে দেখা গেছে, দেড় একরের বেশি আয়তনজুড়ে পার্কটির অবস্থান। ভেতরে রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক কটেজ। নির্ধারিত টাকায় এ কটেজে রাত্রিযাপন করা যায় বলেও জানান পার্কের গেইটে থাকা আবু সাঈদ নামে একজন।

তবে পার্কের জায়গা জোর করে দখল করে প্রশাসনিকভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে দাবি করে জমির মূল মালিক বিমান বাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, লায়লা আমার জমিসহ অনেকের জমি দখল করেছে। জমি ক্রয় করার কথা বলে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে জমি দখলে নেয়। বাকি টাকা দেয়ার পর রেজিস্ট্রি করে দেয়া হবে বলে কথা থাকলেও তিনি আর কোনো টাকা দেয়নি। জোর করে জমি দখলে নিয়ে পার্কের জন্য ব্যবহার করছে। আমি জমির কোনো দলিল করে দেইনি, জোরপূর্বক এখন আমার জমি দখল করে রেখেছে।

বিভিন্ন বিষয়ে জানতে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রীর সম্পর্কে জানতে তাকে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


কানাডায় বিলাসবহুল বাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক মতিউরের স্ত্রী

Update Time : ০৮:৪৬:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪

কানাডায় বিলাসবহুল বাড়িসহ পাল্লা দিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী। দেশে-বিদেশে নিজ নামে রিসোর্টসহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ তার। তিনি নরসিংদী রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান।

লায়লা কানিজ লাকী গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায় বাড়ি-ফ্ল্যাটসহ দেশে বিদেশে স্ত্রী ছেলে ও মেয়ের নামে একাধিক বাড়ি-গাড়ি ও শত শত বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। গাজীপুরে ১ শ বিঘা জমির উপর আপন ভুবন নামে একটি রিসোর্টও গড়ে তুলেছেন। সংসারে তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপসিতা নামের দুই সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে আলোচিত ওই তরুণ মুশফিকুর রহমান (ইফাত) মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারের প্রথম সন্তান। দ্বিতীয় স্ত্রী ফেনীর সোনাগাজীর এলাকার শাম্মী আখতার।

লায়লা কানিজ লাকী ছিলেন রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। তার বাবা কফিল উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন একজন খাদ্য কর্মকর্তা। তার চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে লায়লা কানিজ সবার বড়। এ ছাড়া লায়লা একজন রাজাকারের নাতনি। দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আব্দুল কাদির চেয়ারম্যান ছিলেন রাজাকারদের সংগঠন শান্তি কমিটির সদস্য।

এ ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ময়দর আলী দারোগা ছিলেন তৎকালীন চিহ্নিত রাজাকার। এটা সবাই জানে।

লায়লা কানিজ লাকী শিক্ষকতার পাশাপাশি রায়পুরা উপজেলার মরজালে নিজ এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট নামের একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। সেখানেই ২০১৮ সালের একদিন তার সঙ্গে পরিচয় হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজীউদ্দিন আহমেদ রাজুর। ২০২৩ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান মারা গেলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এবং সংসদ সদস্যের প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন লায়লা কানিজ। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক।

লায়লা কানিজের নির্বাচনী হলফনামা থেকে জানা গেছে, তার বাৎসরিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার, কৃষিখাত থেকে ১৮ লাখ, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩হাজার ৮৭৫, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমাণ ১৫৪ শতাংশ, তার অকৃষি জমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫কাঠা, গাজীপুরের পূবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ।

এছাড়াও মতিউর রহমানের বাড়ি বরিশালের মূলাদীতে ১৫ শ বিঘা জমি রয়েছে। গাজীপুরে ১ শ বিঘা জমির উপর আপন ভূবন নামে একটি রিসোর্ট রয়েছেন। তার স্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজের নামে নরসিংদীর মরজালে ৪০ বিঘা জমির উপর মরজালে ওয়ান্ডার পার্ক নামে একটি পার্ক রয়েছে। তার মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে মরজাল বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশ এলাকায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়াও ছেলে আহম্মদ তৌফিক অনুদ ও মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে কমপক্ষে ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় রয়েছে জুতার কারখানা। নাটোরের সিংরায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়াও গাড়ীপুরের পূবাইলে একাধিক রিসোর্টসহ বিস্তৃত পরিমাণ জমি রয়েছে। স্ত্রী লাকির নামে নরসিংদীর রায়পুরায় মরজালে রয়েছে আলিশান বাড়ি। শুধুমাত্র রাজধানীর বসুন্ধরাতেই মতিউর, তার স্ত্রী সন্তান, আত্মীয়দের নামে এবং বেনামে ৪০ টি প্লট আছে। গাজীপুরে রয়েছে মতিউরের জুতার ফ্যাক্টরি। গুলশান-২ এ শাহবুদ্দিন পার্কের উল্টোদিকে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের একটি ভবনে চারটি ফ্ল্যাট ও গুলশানের শান্তা প্রপার্টিজের একটি ভবনে আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও আমেরিকাও রয়েছে মতিউরের স্ত্রীর বিপুল পরিমাণ সম্পদ।

মরজাল বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজ দম্পতির আধুনিক স্থাপত্যের ডুপ্লেক্স বাড়ি। ফটকের বাইরে থেকে দেখা যায়, কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক স্থাপত্যের বাড়িটি বেশ বিলাসবহুল। আলিশান বাড়ির আলিশান গেইট। বাড়ি ভেতরে রয়েছে দেশি-বিদেশি গাছে সারি, সবুজ ঘাসের আঙিনা, পাশে রয়েছে কর্মচারীদের থাকার রুম। স্থানীয়রা জানান- এটা তার পৈত্রিক সম্পত্তি। এখানে পূর্বে তেমন ভাল কোনো দালান ছিল না। প্রায় দুই বছর পূর্বে এ বিলাসবহুল বাড়িটি নির্মাণ করা হয়।

শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে ওই বাড়ির সামনে গেলে ভেতরে ঢুকতে দেননি বাড়ির দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার। এ সময় তিনি তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানিয়ে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এখন বাড়িতে নেই। কোনো দরকার থাকলে রায়পুরা অফিসে যোগাযোগ করুন। এখন এখান থেকে চলে যান। আমার নাম জেনে আপনি কি করবেন। টাকা দিবেন, টাকা দেন বক্তব্য দিবো! শুধু শুধু ছবি তুলেন। কোনো ছবিতে কিংবা ভিডিও করবেন না। সমস্যা হবে, চলে যান।

অন্যদিকে, ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্টে গিয়ে দেখা গেছে, দেড় একরের বেশি আয়তনজুড়ে পার্কটির অবস্থান। ভেতরে রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক কটেজ। নির্ধারিত টাকায় এ কটেজে রাত্রিযাপন করা যায় বলেও জানান পার্কের গেইটে থাকা আবু সাঈদ নামে একজন।

তবে পার্কের জায়গা জোর করে দখল করে প্রশাসনিকভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে দাবি করে জমির মূল মালিক বিমান বাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, লায়লা আমার জমিসহ অনেকের জমি দখল করেছে। জমি ক্রয় করার কথা বলে আমাকে কিছু টাকা দিয়ে জমি দখলে নেয়। বাকি টাকা দেয়ার পর রেজিস্ট্রি করে দেয়া হবে বলে কথা থাকলেও তিনি আর কোনো টাকা দেয়নি। জোর করে জমি দখলে নিয়ে পার্কের জন্য ব্যবহার করছে। আমি জমির কোনো দলিল করে দেইনি, জোরপূর্বক এখন আমার জমি দখল করে রেখেছে।

বিভিন্ন বিষয়ে জানতে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রীর সম্পর্কে জানতে তাকে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।