অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ড
- Update Time : ০৪:০৮:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩
- / 698
মহসিন হোসেন:
ট্যুরবাজ বিডি (TourBazz BD) গ্রুপের আয়োজনে সীতাকুণ্ড ঘুড়ে আসলাম একঝাঁক ভ্রমণ পিপাসু বন্ধুরা।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১০ নভেম্বর ২০২৩খ্রিঃ সাড়াদিন কেটে আনন্দ উচ্ছাসের মধ্যেই।গাইড সাব্বির আহমেদের দক্ষতা আর বিচক্ষণতায় একটি সফল ট্যুর সম্পন্ন হলো।
সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় অনেকেই হয়তো এরই মধ্যে এক বা একাধিকবার ঘুরে বেড়িয়ে এসছেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের অবস্থান। এর সর্বোচ্চ চূড়ার উচ্চতা ১১৫২ ফুট বা ৩৬৫ মিটার।
চন্দ্রনাথ পাহাড় এবং মন্দির:
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই শিব মন্দিরের দেখা পাওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ২২০০ এরও বেশি সিঁড়ি। কোনো কোনো স্থানের সিঁড়িগুলো এতোটাই পিচ্ছিল ও সংকীর্ণ যে ওঠা বিপজ্জনক হতে পারে। আর বুঝতেই পারছেন, সামান্য এদিক-সেদিক হলে পা পিছলে পড়বেন পাহাড়ের খাদে। ১৫ মিনিট ওঠার পর একটি ছোট ঝর্ণা দেখতে পাবেন। যার দুই পাশে দুটি পথ যা উঠে গেছে একদম পাহাড়ের চূড়োয়। বাম পাশের পথ দিয়ে ওঠা সহজ। ডান পাশের পথ দিয়ে নামা সহজ। তাই বাম পাশের পথ ধরে উপরে উঠতে থাকুন।
তবে এত কঠিন পথ পাড়ি দিতে হলেও আশেপাশের সবুজে ঘেরা অকৃত্রিম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। পাহাড়ে ওঠার ফাঁকে ফাঁকে ছবি তুলে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে ফ্রেমবন্দী করে রাখতে পারেন। মাঝে মাঝে থেমে বিশ্রাম নিতে পারবেন চায়ের আর লেবুর সরবতের দোকানগুলোতে।
প্রায় দেড় ঘণ্টা আরোহণের পর চন্দ্রনাথ মন্দির পৌঁছানোর আগে বিরুপাক্ষ নামের আরেকটি মন্দির পড়বে। চাইলে সেখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারেন৷ এখান থেকে সীতাকুণ্ড শহরের ও সমুদ্রের এক অদ্ভুত দৃশ্য আপনি দেখতে পাবেন।তবে সব কষ্ট মুহূর্তেই ভুলে যাবেন চন্দ্রনাথ মন্দিরের উপরে উঠে আশেপাশের দৃশ্য দেখার পর। চারপাশ শুধু সবুজ আর সবুজ। যেন কোনো শিল্পী তার নিপুণ হাতে রংতুলিতে আঁকা। সীতাকুণ্ডের প্রায় পুরোটাই দেখতে পাবেন এখান থেকে। দূরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে এক ঐশ্বরিক অনুভূতিতে আপনার মন প্রাণ জুড়িয়ে যাবে মুহূর্তেই।
পাহাড়ে আমার বন্ধু সাইফুল ইসলাম সহ তার ছোট ভাইরা, সোহাগ, কায়েস মাহমুদ ইমন, সাগর, নিরব, বিডি সমাচার টুয়েন্টিফোর ডটকমের সহযোদ্ধাসহ বন্ধুরা ক্লান্তিতেও সেই অনুভূতি ছিল।সবাই মিলে দোলনা খেয়েছি, এটা ছিল মন জুড়ানো।
গুলিয়াখালী সি-বিচ:
সমুদ্র পাড়ে সবুজ গালিচা বিছানো এক বিস্ময়কর স্থান গুলিয়াখালী সি বিচ। চারপাশে বিস্তৃত জলরাশি। অন্যদিকে কেওড়া বন। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল বেড়িয়ে আছে।
এই কেওড়া বন সমুদ্রের অনেকটা গভীর পর্যন্ত চলে গেছে। এর পরিবেশ সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, সৈকত জুড়ে সবুজ গালিচা বিছানো। সমুদ্র পাড়ের এই মনোরোম সৌন্দর্য বোধ হয় অন্য কোথায় দেখতে পাবেন না!
রুপসি ঝর্ণা:
রূপসী ঝর্ণা তার রূপ দিয়ে মানুষের মন কেড়ে নিয়েছে। রূপসী ঝর্ণার অনিন্দ সুন্দর রূপের কারণের স্থানীয়রা একে রূপসী ঝর্না নাম দিয়েছে।প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের আরেক নাম বড় কমলদহ রূপসী ঝর্ণা। আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝর্ণার পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নুপুরধ্বনি। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। সাঁ সাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। রূপসী র্ঝণা প্রথম দেখেই তার রূপে পাগল হবে যে কেউ। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে।যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন শোনা যায়।রূপসী ঝর্ণার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। বছরের পর বছর ঝর্ণার পানি গড়িয়ে যাচ্ছে এই ছড়া বয়ে।
আমরা ৫ জন আমি মহসিন হোসেন,বন্ধু কায়েস মাহমুদ ইমন, নিরব, মিরাজ, হোসাইন গিয়েছিলাম রুপসী ঝর্ণার উপরে। অনেক গভীর অরণ্যে প্রায় আধা ঘন্টা হেটে ভিতরে গিয়ে অনেক আড্ডা আর পাহাড়ের নিরবতা আর ঝর্ণার সাঁ সাঁ শব্দে মুগ্ধ হয়ে গসল করেছি।
ধন্যবাদ বিডি সমাচার টুয়েন্টিফোর ডটকমের সহযোদ্ধাসহ গাইড বন্ধু সাব্বির আহমেদ, তাহীম খানসহ সকল ভ্রমণ পিপাসু বন্ধুদের। আবার দেখা হবে।