খাদ্য আমদানিতে জটিলতা নিরসনের নির্দেশ
- Update Time : ০৫:৩৬:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
- / 177
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের পার্শ্ব কর বাতিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেটুকু না দিলেই নয়, সেটুকু রেখে বাকি সব ধরনের কর বাতিল করে খাদ্য আমদানিকারকদের স্বস্তি দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী বছর সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলায় খাদ্য আমদানিকে উৎসাহিত করতেই সরকার এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিষয়টি তদারকি করছেন। মন্ত্রিসভা বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভার একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আগামী এক বছরের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে ১৫ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। চাল আমদানির ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ শুল্ক দুই ধাপে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পরও আমদানিকারকরা চাল আমদানিতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে খাদ্য আমদানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছে সরকার। এ কারণেই খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে সব জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আমদানিকারকদের ভাষ্যমতে, চালসহ খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান করের আড়ালে কিছু অদৃশ্য কর রয়ে গেছে। উৎসে কর, আবার অ্যাডভান্স করের ঝামেলাও রয়েছে। এসব ঝামেলা উপেক্ষা করে চাল আমদানি করলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। এসব কারণেই এখন পর্যন্ত তিন লাখ টন চালের বেশি আমদানি করা সম্ভব হয়নি। বেশি শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করলে লোকসানের সম্মুখীন হতে পারেন-এমন আশঙ্কায় আমদানিকারকরা অনুমতি পাওয়ার পরও চাল আমদানি করছেন না। সে ক্ষেত্রে সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে আমদানিকারকদের সব ধরনের কর-সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসব তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বৈঠকে ব্রিটেনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনের আলোক জানানো হয়েছে, তিনটি কারণে বিশ্বে ২০২৩ একটা সংকটের বছর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ যেহেতু রেট অব ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি করেছে, এটা একটা। দ্বিতীয়ত, কোভিড-পরবর্তী অর্থনীতি গুছিয়ে ওঠার আগেই রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ, যা উন্নতিটাকে আবার নেগেটিভের দিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আর তিন নম্বর কারণ হিসেবে তারা বলছে, চীন উল্লেখযোগ্য হারে তাদের উৎপাদন কম করছে; যেটা বিশ্ববাজারকে প্রভাবিত করছে। এই তিন কারণে ২০২৩ একটি সংকটের বছর হওয়ার আশঙ্কা আছে। সবাইকে সে অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে হবে। আর এ জন্যই খাদ্য মজুতের দিকে সরকারের নজর সবচেয়ে বেশি।
জানা গেছে, সরকার যেকোনও কিছুর বিনিময়ে সব সময় খাদ্য মজুত পরিস্থিতিকে একটি স্বস্তির জায়গায় রাখতে চায়। যদিও বর্তমানে খাদ্য মজুত পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক। প্রাইভেট সেক্টরেও অনেক খাদ্য আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। যারা সাপ্লিমেন্টারি চাল, তেল বা মসলা রপ্তানি করে, তাদের সঙ্গে সরাসরি দেশীয় আমদানিকারকদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে সরাসরি আমদানি করা যায় কি না, সেটাও বিবেচনা করা হচ্ছে। সরাসরি গেলে সহনীয় দামে পাওয়া যাবে।
মন্ত্রিপরিষদের সভায় খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে ট্যাক্স কমফোর্টের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। উৎসে কর-সংক্রান্ত কিছু বিষয় আছে, এটা দিতে হয়। এনবিআরকে বলা হয়েছে, আলাপ-আলোচনা করে দ্রুত যেন তারা একটি সন্তোষজনক প্রোভিশনের মধ্যে যায়। যাতে দেশীয় খাদ্য আমদানিকারকরা স্বস্তিবোধ করেন।
জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে খাদ্য মজুতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৪১ মেট্রিক টন। সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরের ৩০ জুন দেশে খাদ্য মজুতের পরিমাণ ১৬ লাখ মেট্রিক টন, যা খুবই স্বস্তিদায়ক বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এদিকে সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে খাদ্য মজুত বাড়াতে আমদানির বিষয়টি ছাড়াও আরও কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২০২৩ সালের সম্ভাব্য সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ স্থানে রাখতে আরও কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে— খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। খাদ্য আমদানির পরেও হয়তো সংকট থাকবে। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে বেশ কিছু নতুন জাত এসেছে। এগুলো ইতোমধ্যে পরীক্ষিত। এগুলো ধীরে ধীরে রিপ্লেস করলে আগামী এক থেকে তিন বছরের মধ্যে ইনশা আল্লাহ উৎপাদন দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে যাবে।
দ্বিতীয়ত, বিদেশে যেন অদক্ষ শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো হয়। তাহলে তাদের অনেক বেশি বেতনে কাজ করা সম্ভব হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে এখন আর কাউকে ফি দিতে হবে না। রেমিট্যান্স পাঠানোর কলাম ফুল করতে হয়, সেখানে তাদের কমফোর্ট (শর্ত শিথিল) করার কথা বলেছেন। নাম ও এনআইডি দিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা বা এক-দুই-তিন-চারটা আইটেম দিয়ে পাঠানো যায় কি না। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগের শর্ত আরও শিথিল করা যায় কি না, এ বিষয়ে কাজ চলছে। এ ছাড়া খাদ্য মজুতকে সব সময় সন্তোষজনক অবস্থায় রাখতে হবে। খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে ট্যাক্স কমফোর্টের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।