সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল: হাইকোর্ট

  • Update Time : ০১:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২২
  • / 243

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধাসংক্রান্ত আইনের ৪১ (১) ধারাটি সংবিধান পরিপন্থি বলে তা বাতিল করেন হাইকোর্ট। এই বিধানটিকে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেন আদালত।

এর আগে বুধবার ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতির বিধান রেখে তিন বছর আগে কার্যকর হওয়া ‘সরকারি চাকরি আইন’ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

উচ্চ আদালত মনে করছে, এমন বিধানের মানে হচ্ছে, বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে দায়মুক্তি দেওয়া। শুধু তাই নয়, এমন বিধান দুর্নীতিতে উৎসাহ জোগাবে। সরকারি কর্মচারী আইনে থাকা ‘কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি’ নেওয়ার বিধানের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের উপর বুধবার শুনানির সময় হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারে পূর্ব অনুমতি নেওয়ার বিধান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মন্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। ২০১৯ সালে এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১ (১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬ (১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয় ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে।

আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, “২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন ৪১(১) ধারায় বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করা হয়।”

তিনি বলেন, “একই ধরনের সুযোগ দিয়ে ২০১৩ সালে দুদক আইনের ৩২(ক) ধারা প্রণয়ন করে জনস্বার্থে রিট করলে আদালত আইনটিকে বৈষম্যমূলক বলে বাতিল ঘোষণা করেন। একই সুযোগ সরকারিকর্মকর্তা/কর্মচারিদের দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালে প্রণীত ওই আইনের ৪১(১) ধারা আদালতের রায়ের পরিপন্থি।”

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল: হাইকোর্ট

Update Time : ০১:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধাসংক্রান্ত আইনের ৪১ (১) ধারাটি সংবিধান পরিপন্থি বলে তা বাতিল করেন হাইকোর্ট। এই বিধানটিকে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেন আদালত।

এর আগে বুধবার ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতির বিধান রেখে তিন বছর আগে কার্যকর হওয়া ‘সরকারি চাকরি আইন’ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

উচ্চ আদালত মনে করছে, এমন বিধানের মানে হচ্ছে, বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে দায়মুক্তি দেওয়া। শুধু তাই নয়, এমন বিধান দুর্নীতিতে উৎসাহ জোগাবে। সরকারি কর্মচারী আইনে থাকা ‘কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি’ নেওয়ার বিধানের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের উপর বুধবার শুনানির সময় হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারে পূর্ব অনুমতি নেওয়ার বিধান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও সঞ্জয় মন্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। ২০১৯ সালে এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১ (১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬ (১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয় ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে।

আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, “২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন ৪১(১) ধারায় বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করা হয়।”

তিনি বলেন, “একই ধরনের সুযোগ দিয়ে ২০১৩ সালে দুদক আইনের ৩২(ক) ধারা প্রণয়ন করে জনস্বার্থে রিট করলে আদালত আইনটিকে বৈষম্যমূলক বলে বাতিল ঘোষণা করেন। একই সুযোগ সরকারিকর্মকর্তা/কর্মচারিদের দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালে প্রণীত ওই আইনের ৪১(১) ধারা আদালতের রায়ের পরিপন্থি।”