জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান
- Update Time : ১২:৩২:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 86
মোঃ মাহমুদুল হাসান:
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান আমার জীবনে একটি গভীর প্রভাব রেখে গেছে। একজন সংগঠক হিসেবে আন্দোলনের পরিকল্পনা, সমন্বয় এবং নেতৃত্ব দেওয়া ছিল আমার মূল দায়িত্ব। সেদিন আমাদের প্রতিবাদ ছিল মানুষের অধিকার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি এবং স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম। আমরা সবাই এক কণ্ঠে শ্লোগান তুলছিলাম, কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়।
টিয়ার গ্যাস, জলকামান এবং রাবার বুলেট আমাদের সম্মুখে ছিল। আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চললেও, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রা’সী বাহিনীর আক্র’মণ ঠেকানো সম্ভব হয়নি। মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেই হঠাৎ একজন পুলিশের দিক থেকে বন্ধুক তাক করলে আমার এক তেজগাঁও কলেজের সহযোদ্ধা দেখে আমাকে বাঁচাতে ধাক্কা দেয় ততক্ষণে বুলেট এসে তার কপাল ছেদ করে বেরিয়ে যায়, এবং সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ডলে পরে। তাৎক্ষণিক একটি রিক্সায় করে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয় সহযোদ্ধারা। আর আমি পাশে ফুটপাতে পড়ে গিয়ে পায়ে ও কোমড়ে ব্যাথা পাই। আর এই অবস্থা দেখে অচেতন হয়ে যাই। তখন সহযোদ্ধারা আমাকে তুলে নিয়ে যায় এবং আহত অবস্থায়ও আমার মনোবল ভাঙেনি।
আহত হবার পরও, আন্দোলন কখনো থামিয়ে রাখিনি। সেদিনের আঘাত শুধু শারীরিক ছিল না, বরং একটি দেশের মানুষের মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের জন্য যে ত্যাগ দিতে হবে, তা হৃদয়ে গভীরভাবে অনুভব করেছি। এই অভ্যুত্থান ছিল শুধু প্রতিবাদের এক নতুন পথ, যা আমাদের মানুষের অধিকার এবং মুক্তির জন্য আরও শক্তিশালী করে তুলেছিল।
এই আন্দোলনে প্রথম থেকেই আমি রাজপথে সংগঠক হিসেবে ছিলাম। চারদিকে শ্লোগানের গর্জন, প্রতিবাদের প্ল্যাকার্ড, আর মানুষের দৃঢ় সংকল্প আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
আন্দোলনে দেখেছি শিক্ষার্থীদের অদম্য সাহস। তাদের চোখের পানি, টিয়ার গ্যাস এবং বন্ধুকের গুলির সামনেও থেমে থাকেনি। সেই দৃশ্য আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়।
সেদিনের সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের স্মৃতি আজও আমাকে ভাবায়। যারা প্রাণ হারিয়েছে, তারা আমাদের জন্য এক নতুন ভোরের দ্বার উন্মোচন করেছে। এই অভ্যুত্থান শুধু একটি ঘটনা নয়, এটি ছিল মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার প্রতি মানুষের ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ।