আজ ভোরের জন্য বহুকাল অপেক্ষায় ছিল পদ্মা পাড়ের মানুষ

  • Update Time : ১০:৫৮:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুন ২০২২
  • / 421

মহসিন হোসেন:

অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু কাক্সিক্ষত সেতু দাঁড়িয়ে আছে। বহু আশা-আকাক্সক্ষার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলো।

‘পদ্মা সেতু গৌরব, মর্যাদা, সততা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। আমাদের যদিও বিশ্বাস ছিল, কিন্তু অনেকে অবিশ্বাস করেছিল পদ্মা সেতু হওয়া নিয়ে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের উত্তরসূরি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রমাণ করলেন আমরা পারি, বাঙালি জাতি পারে। তিনি প্রমাণ করলেন বাঙালি কখনো মাথা নত করে না।

আজ ভোরের জন্য বহুকাল অপেক্ষায় ছিল পদ্মার দুই পারের মানুষ। সর্বসাধারণের পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে শুরু হয় যান চলাচল। রাত থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ছিল গাড়ির দীর্ঘ সারি। পূর্বেই ঘোষণা করা হয়েছিল রোববার ভোর ৬টা থেকে সেতু দিয়ে সর্বসাধারণের জন্য যানবাহন চলাচলে খুলে দেয়া হবে। প্রথম সুযোগেই সেতু পার হওয়ার জন্য রাত থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ছিল গাড়ির দীর্ঘ সারি। স্বপ্নের সেতু দিয়ে নদী পার হওয়ার আনন্দে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা যায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া টোল প্লাজায়।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সাড়া ফেলেছে আন্তর্জাতিক মহলেও। যার প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরটি ফলাও করে প্রচার করেছে ভারত ও চীনসহ বিশ্বের নানা দেশের গণমাধ্যম।

শেখ হাসিনা পিতার মতো জাতিকে মমতা দিয়ে আগলিয়ে রেখেছেন, মহামারি- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বিপর্যয়সহ সকল বিপদ- আপদ থেকে জাতিকে রক্ষা করে চলেছেন, দেশকে রক্ষার জন্য পিতার মতো মৃত্যুঝুঁকি কাঁধে নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এই বাংলাদেশ যতদিন বেঁচে থাকবে, কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর নানা যুগান্তকারী অবদানের জন্য ততদিন তিনি বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

স্বাধীনতার পর এতবড় উৎসব বাঙালির জীবনে খুব কমই এসেছে। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়সংকল্প নেতৃত্বের কারণেই অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়েছে।

পদ্মা সেতু আমাদের পুরো জাতির একটা স্বপ্ন ছিল, যা পূরণ হলো। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ কাছে পদ্মা সেতু স্বপ্নের চেয়ে বেশি কিছু। যার হারায়, শুধু সে–ই জানে এর কষ্ট কতটা কঠিন।

কতশত মানুষ যে এ পদ্মার স্রোতে প্রাণ হারিয়েছে, সে সংখ্যা সবার অজানা। যাহোক, এ আনন্দের দিনে দুঃখের কথা মনে না করাই ভালো। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এ সেতু আমাদের শুধু স্বপ্ন নয়, আমাদের অহংকার। আমাদের গর্ব।’

এখন থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা। আগে যে পথ ফেরির মাধ্যমে পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেত, এখন সেটি পার হওয়া যাবে মাত্র ছয় মিনিটে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় যুগ যুগ ধরে পিছিয়ে থাকা খুলনা ও তার আশপাশের অঞ্চলের জনগণের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। রাজধানীর সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক প্রভাবও বাড়বে ইতিবাচক হারে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। বদলে যাবে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা।

শুধু তাই নয়, পাল্টে যাবে জীবনযাত্রার মান। মৎস্য, কৃষি ও পর্যটন ব্যবসায় আসবে নতুন নতুন সম্ভাবনা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে ছোঁয়া লাগবে আধুনিকতার।

দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত-হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্প। যার অধিকাংশ খুলনা থেকে রফতানির মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ খাতেও প্রভাব বাড়বে। পণ্য পরিবহনের খরচও কমবে।

একইভাবে পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি তো হবেই। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা দেখা দেবে।

সর্বোপরি বাংলাদেশের উন্নয়নে পদ্মা সেতুর মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। দীর্ঘায়ু হন প্রিয় নেত্রী।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু

লেখক: সম্পাদক, বিডি সমাচার ২৪ ডটকম।

Please Share This Post in Your Social Media


আজ ভোরের জন্য বহুকাল অপেক্ষায় ছিল পদ্মা পাড়ের মানুষ

Update Time : ১০:৫৮:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুন ২০২২

মহসিন হোসেন:

অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু কাক্সিক্ষত সেতু দাঁড়িয়ে আছে। বহু আশা-আকাক্সক্ষার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলো।

‘পদ্মা সেতু গৌরব, মর্যাদা, সততা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। আমাদের যদিও বিশ্বাস ছিল, কিন্তু অনেকে অবিশ্বাস করেছিল পদ্মা সেতু হওয়া নিয়ে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের উত্তরসূরি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রমাণ করলেন আমরা পারি, বাঙালি জাতি পারে। তিনি প্রমাণ করলেন বাঙালি কখনো মাথা নত করে না।

আজ ভোরের জন্য বহুকাল অপেক্ষায় ছিল পদ্মার দুই পারের মানুষ। সর্বসাধারণের পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে শুরু হয় যান চলাচল। রাত থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ছিল গাড়ির দীর্ঘ সারি। পূর্বেই ঘোষণা করা হয়েছিল রোববার ভোর ৬টা থেকে সেতু দিয়ে সর্বসাধারণের জন্য যানবাহন চলাচলে খুলে দেয়া হবে। প্রথম সুযোগেই সেতু পার হওয়ার জন্য রাত থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ছিল গাড়ির দীর্ঘ সারি। স্বপ্নের সেতু দিয়ে নদী পার হওয়ার আনন্দে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা যায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া টোল প্লাজায়।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সাড়া ফেলেছে আন্তর্জাতিক মহলেও। যার প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরটি ফলাও করে প্রচার করেছে ভারত ও চীনসহ বিশ্বের নানা দেশের গণমাধ্যম।

শেখ হাসিনা পিতার মতো জাতিকে মমতা দিয়ে আগলিয়ে রেখেছেন, মহামারি- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বিপর্যয়সহ সকল বিপদ- আপদ থেকে জাতিকে রক্ষা করে চলেছেন, দেশকে রক্ষার জন্য পিতার মতো মৃত্যুঝুঁকি কাঁধে নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এই বাংলাদেশ যতদিন বেঁচে থাকবে, কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর নানা যুগান্তকারী অবদানের জন্য ততদিন তিনি বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

স্বাধীনতার পর এতবড় উৎসব বাঙালির জীবনে খুব কমই এসেছে। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়সংকল্প নেতৃত্বের কারণেই অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়েছে।

পদ্মা সেতু আমাদের পুরো জাতির একটা স্বপ্ন ছিল, যা পূরণ হলো। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ কাছে পদ্মা সেতু স্বপ্নের চেয়ে বেশি কিছু। যার হারায়, শুধু সে–ই জানে এর কষ্ট কতটা কঠিন।

কতশত মানুষ যে এ পদ্মার স্রোতে প্রাণ হারিয়েছে, সে সংখ্যা সবার অজানা। যাহোক, এ আনন্দের দিনে দুঃখের কথা মনে না করাই ভালো। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এ সেতু আমাদের শুধু স্বপ্ন নয়, আমাদের অহংকার। আমাদের গর্ব।’

এখন থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা। আগে যে পথ ফেরির মাধ্যমে পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেত, এখন সেটি পার হওয়া যাবে মাত্র ছয় মিনিটে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় যুগ যুগ ধরে পিছিয়ে থাকা খুলনা ও তার আশপাশের অঞ্চলের জনগণের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। রাজধানীর সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক প্রভাবও বাড়বে ইতিবাচক হারে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। বদলে যাবে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা।

শুধু তাই নয়, পাল্টে যাবে জীবনযাত্রার মান। মৎস্য, কৃষি ও পর্যটন ব্যবসায় আসবে নতুন নতুন সম্ভাবনা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে ছোঁয়া লাগবে আধুনিকতার।

দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত-হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্প। যার অধিকাংশ খুলনা থেকে রফতানির মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ খাতেও প্রভাব বাড়বে। পণ্য পরিবহনের খরচও কমবে।

একইভাবে পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি তো হবেই। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা দেখা দেবে।

সর্বোপরি বাংলাদেশের উন্নয়নে পদ্মা সেতুর মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। দীর্ঘায়ু হন প্রিয় নেত্রী।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু

লেখক: সম্পাদক, বিডি সমাচার ২৪ ডটকম।